শিশুর দাঁত উঠার কয়েকটি লক্ষন

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮

শিশুর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে শিশুর প্রথম দাঁত উঠা। যদিও এটা কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয় তবুও এসময় দাঁত উঠার সাথে শিশুদের কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয় যা বাবা-মায়েরা আগে থেকে জেনে রাখা ভালো। শিশুর প্রথম দাঁত উঠা প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য অনেক আনন্দদায়ক। শিশুর ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসি দেখার জন্য অভিভাবকেরা দিন গুনতে থাকেন। বেশিরভাগ শিশুর নতুন দাঁত তার ৪ থেকে ৭ মাস বয়সের মধ্যে উঠে যায়। তবে শিশুর দাঁত উঠার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকলেও তা একদম ধরা-বাঁধা কোন সময় নয়। এই সময়ের কিছুটা এদিক ওদিক হতে পারে,তবে তা নিয়ে দুঃচিন্তা না করাই ভালো।

শিশুর প্রথম যে দাঁত উঠে তাকে বলা হয় দুধ দাঁত (primary teeth)। দুধ দাঁত একেক সময় একেক স্থানে উঠে, তেমনি একেক স্থানের দাঁত এক সময় পড়ে যায়। শিশুর যখন প্রথম দাঁত জোড়ায় জোড়ায় উঠে , অর্থাৎ এক সাথে নিচের পাটির মাঝের দুটি দাঁত প্রথমে গজায়। তার কয়েক সপ্তাহ পর উপরের পাটির মাঝের দুটি দাঁত উঠে। তবে এই নিয়মেরও ব্যতিক্রমও হতে পারে। শিশুর দাঁত উঠার সময় ব্যথা অনুভব হয়, কারন দাঁত মাড়িকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসে। তাই দাঁত ওঠার সময় অনেক শিশুর ব্যথা না হলেও তারা কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করে। অস্বস্তিগুলো জেনে নিন : 

মুখ দিয়ে লালা পড়া : দাঁত ওঠার সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়। অতিরিক্ত লালা পড়া থেকে অনেক সময় মুখে লাল দাগ পড়ে যেতে পারে। লালা পড়ার ফলে শিশুর জামা ভিজে যায়,  তাই খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে শিশুর জামা বারবার বদলাতে হবে, অথবা শিশুর গলায় বিব পরিয়ে দিতে হবে যেন শিশুর বুকে ঠাণ্ডা না লাগে। অতিরিক্ত লালা থেকে ডায়রিয়াও হতে পারে, কারন যখন অতিরিক্ত লালা শিশুর অন্ত্রে গিয়ে জমা হয় তখন তা পায়খানাকে নরম করে ফেলে।

শিশুরা যেকোন কিছু কামড়াতে চেষ্টা করে : নতুন দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মাড়ি নিচে দাঁত চাপ দিতে থাকে বা বেড়ে উঠতে থাকে। এসময় বাচ্চাদের মাড়ি খুব শিরশির করে।আর এই শিরশিরানির চাপ প্রশমিত করার জন্য শিশুরা হাতের কাছে যা পায় সেগুলো কামড়ানোর চেষ্টা করে অথবা তা  মুখে দিয়ে চুষতে থাকে। যারফলে তাদের পেটে ইনফেকশন হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে  ডায়ারিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া : নতুন দাঁত উঠার আগে শিশুর মাড়ি শক্ত হয়, লালচে আকার ধারন করে এবং কিছুটা ফুলে যেতে পারে। নতুন দাঁতের অগ্রভাব যখন বের হয়, তখন মাড়ির চারপাশের ত্বক ফুলে যায় এবং ধীরে ধীরে এই অংশ বড় হয় এবং দাঁত বের হয়ে আসে।

অকারনে অস্থিরতা বেড়ে যায় : নতুন দাঁত ওঠার সময় শিশুদের মধ্যে দেখা দেয় অকারন অস্থিরতা, এ সময় মাড়ি ভেদ করে দাঁত বের হয় ফলে ব্যথার কারনে শিশুদের মেজাজ একেবারেই ভালো থাকে না, এবং শিশুরা বেশ বিরক্ত করে। বারবার মাথা চুলকিয়ে অথবা চোখ চুলকে নিজেদের অস্বস্তি প্রকাশ করে তারা।

খাবারে অরুচি : মাড়ির যন্ত্রনার জন্য এই সময় শিশুদের খাবারের ইচ্ছে চলে যায়। বিশেষ করে যেসব বাচ্চারা শক্ত খাবার গ্রহন করে তারা তা একদম খেতে চায় না, এমন সময় খাবার খাওয়ানোর জন্য তাদের বেশি জোর না করাই ভালো। কারন শক্ত খাবার খেতে গেলে দাঁতের মাড়িতে ব্যথা অনুভব করে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টাটাও হতে পারে, অনেক শিশুরা বরঞ্চ শক্ত খাবার খেতেই পছন্দ করে কারন নতুন দাঁত উঠার ফলে যে ব্যথা অনুভুত হয় তা খাবার কামড়িয়ে খেলে কিছুটা উপশম হয়। 

কান ধরে টানা : শিশুর যখন দাঁত উঠতে শুরু করে তখন শুধুমাত্র যে তাদের মাড়িতেই ব্যথা করে তা নয়, অনেক সময় তাদের মুখের চোয়ালে ব্যথা হয়, যা কানের ছিদ্র পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কিভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর এমনটা হচ্ছে? যদি দেখেন আপনার শিশু নিজের কান ধরে টানছে তবে বুঝবেন যে শিশুর কানের সংক্রমণ হয়েছে অথবা দাঁতের ব্যথার জন্য, এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামরশ গ্রহন করাই উত্তম।

ঘুম কম হওয়া : সাধারনত রাতের বেলা শিশুদের দাঁত দ্রুত বাড়ে, ফলে ব্যথা আর শিরশিরানির জন্য শিশুদের বারবার ঘুম ভেঙে যায়। সেই কারণে তাদের ঘুম খুব কম হয় এবং কম ঘুমের জন্য তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে আবং বেশ বিরক্ত করতে পারে ।

নতুন দাঁত উঠা শিশুদের টুকটাক ব্যথা করবে এটাই স্বাভাবিক, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, একটু সচেতন থাকলেই কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যায়। তবে শিশুকে আরাম দেওয়ার জন্য এসময় তাকে টিদার দিতে পারেন। অবশ্যই শিশুকে টিদার দেওয়ার আগে তা পরিষ্কার করে দিবেন এবং এগুলো কিছু সময় ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে শিশুকে দিন। ঠাণ্ডা স্থানে কামড় বসালে শিশুরা আরাম পাবে।

দাঁত উঠার সময় যদি শিশুর অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা, সর্দি, অথবা জ্বর হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাক্তার বলতে পারবেন তার লক্ষনগুলো কোন সংক্রমনের কারন কিনা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন। যদি ৭-৮ মাসের মধ্যেও আপনার শিশুর দাঁত না উঠে তবে উদ্বিগ্ন না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শমতো একটি এক্স-রে করিয়ে দেখে নেওয়া ভালো। তাতে বোঝা যাবে দুধদাঁত বের হতে কত দিন বাকি আছে অথবা অনুপস্থিত কি না। আপনার শিশুর নতুন দাঁতের যত্ন প্রথম থেকেই নিতে হবে,  আপনার পর্যাপ্ত যত্ন পারে আপনার শিশুকে ভবিষ্যতে  রোগ মুক্ত দাঁতের নিশ্চয়তা দিতে। সবার জন্য রইলো শুভকামনা।সুখ তৈরি করে। তাই এমন খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ মায়ের পেটের অসুখ হলে সন্তানেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

সূত্র : গর্ভবতী 
 
 

Leave a Comment