বাচ্চা অনেক কান্না করে। করণীয় কি?
- তাশফিয়া আমিন
- সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
বাচ্চারা তো কথা বলতে পারেনা। তাদের হাসি আর কান্না এ দুটো মাত্র ভাষা। বাবা-মাকে এই ভাষা পড়তে জানতে হয়। শিশু কীসে আনন্দ পাচ্ছে আর শিশু কেন কাঁদছে এ দুটোই জানা খুব জরুরী। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন সে কেন কাঁদছে। অহেতুক বাচ্চারা কান্না করে না। এর পিছনে ওর কোনো অসুবিধা কাজ করে। যে কোনো একটা অসুবিধা হলেই সে কেঁদে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করে যেন তাকে সেই অসুবিধা থেকে উদ্ধার করা হয়। কান্নার কারণটা না বুঝলে তো আর তাকে হেল্প করা যাবে না। তাই আগে বুঝতে হবে কান্নার কারণটা কী। সাধারণ কিছু বিষয় খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন কেন সে কাঁদছে। নতুন মা-বাবাদের জন্য এটা অবশ্য একটা চ্যালেঞ্জ। যেহেতু আগে কোনো শিশু পালনের অভিজ্ঞতা নেই তাঁদের তাই শিশু কাঁদলেই তারা অস্থির হয়ে পড়েন। শিশু কাঁদলে কোলে নিলেই কান্না থেমে যাওয়ার কারণ নেই। আদরের জন্যেই সে কাঁদছে এমনটা নাও হতে পারে। তাই দেখে নিন কি কি কারনে শিশু কাঁদতে পারে।
ক্ষুধাঃ বাচ্চা কাঁদতে থাকলে প্রথমেই এ কথাটাই ভাবি আমরা যে ক্ষুধা পেয়েছে। কখন বুঝবেন যে এটা ক্ষুধার কান্না? খেয়াল রাখুন কখন তাকে খাইয়েছেন। বাচ্চার খাওয়ার সময় হয়ে গেলেই তাকে খেতে দিন। কান্না করার আগেই শিশুকে খাওয়ানো উচিত। আঙুল মুখে দিয়ে রাখা, মোচড়ানো ইত্যাদি দেখলেই বুঝতে হবে শিশুটি ক্ষুধার্ত, এবং তখনই তাকে খাওয়াতে হবে। কান্না করার আগেই, শিশুর গালের দিকে হাত দিয়ে ধরে দেখুন সে যদি হাত খেতে চায় তার মানে সে খেতে চাইছে, তখনই তাকে খাওয়ান।
ভেজা ডায়পারঃ অনেক বাচ্চারা ভেজা কাপড় বা ডায়পারে অনেকক্ষণ থাকতে পারে কোনো অসুবিধা ছাড়াই (যদিও এটা তার জন্য ক্ষতিকর) আর কিছু বাচ্চা ভেজা কিছু গায়ে লেগে থাকলেই কান্না শুরু করে দেয়। ভেজা ডায়পারের কারনেই কাঁদতে পারে আপনার শিশু। ডায়পার বদলে দিলেই সে কান্না বন্ধ হয়ে যায়। তবে কান্নার আগেই ডায়পার বদলাতে হবে। নাহলে দেখা যাবে র্যাশ হয়ে গেছে। ভেজার কারনেই যে বাচ্চা কাঁদে তা কিন্তু না, তার নরম চামড়ায় কোনো একটা জ্বালা যন্ত্রণা হওয়ার কারনেই কাঁদে। তাই ডায়পার পালটানো নিয়ে আলসেমি করলে চলবে না মোটেও। ডায়পার থেকে বাজে রকমের র্যাশ হতে পারে। এসব ঝামেলা এড়াতে বেছে নিতে হবে বেশি শোষনক্ষমতার কটন ডায়পার, যা বাচ্চাকে আরাম আর র্যাশ মুক্ত রাখবে।
ঘুমের অভাবঃ বাচ্চারা আরেকটা ছোট্ট কারণে কাঁদে, তা হলো ঘুম। আমাদের ঘুম পেলে আমরা বিছানায় গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে নিই, কিন্তু সে তো আর একা একা এ কাজ করতে পারে না! তাই অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে গেলে শুরু করে দেয় কান্না। ঘুম পেলে বাচ্চাদের চোখে পানি আসতে থাকে আর নাক মুখ চুলকায় অনেক বাচ্চা। এবং এটা যে কষ্টের কান্না নয়, বিরক্তির কান্না এটা অভিজ্ঞরা দেখলেই বুঝতে পারেন। তাই বাচ্চা কান্না করলে এটাও ভেবে দেখতে পারেন যে সে কখন ঘুমিয়েছিল, এখন আবার ঘুমাবে কিনা। এমনটা মনে হলে ওর বিছানায় নিয়ে গিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন বা কোলে করেও ঘুম পাড়াতে পারেন।
আদর চাওয়াঃ অনেক সময় শুধুমাত্র মা-বাবার আদরের জন্য কাঁদে বাচ্চারা! মা-বাবার কণ্ঠস্বর শুনলেও তাদের কাছে ভালো লাগে। আশে পাশে থাকলেই কাঁদতে থাকে যেন তাকে কোলে নেয়া হয়। ওর সাথে কথা বললে, খেলা করলে সে খুশী থাকে। এমনকি ওরা মা-বাবার গায়ের গন্ধও চিনতে পারে। বাচ্চা কাঁদলে তাই ভেবে দেখুন খাওয়া ঘুম সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন কাঁদছে? একটুখানি আদরের জন্য নয় তো? আস্তে করে ওকে কোলে নিয়ে চুমু খান, কথা বলুন। একটু কোলে নিয়ে হালকা দোল দিন। দেখবেন কান্না থেমে গেছে!
পেটের সমস্যাঃ অনেক বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর শুরু হয় তার কান্না। পেটে গ্যাস হলে বাচ্চাদের পেটের ব্যথার কারণে সে কাঁদতে পারে। কলিক বলে একটা রহস্যময় ব্যপার আছে যে কারণে শিশু দিনে তিন ঘন্টার বেশী সময় ধরে কাঁদতে পারে। হজমের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে এ জন্য দায়ী। এটা একেবারেই নবজাতকের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এছাড়া হরমোনাল বা মাসল, হাড়ের কোনো ব্যথাও হতে পারে এমন কান্নার কারন।
নবজাতকের হাসির চেয়ে প্রিয় কিছু নেই আর মা-বাবার জন্য। একটি হাসিখুশি বাচ্চা সবারই কাম্য। তাই বাচ্চার কান্নার কারন বোঝা খুবই জরুরী। এখানে যেসব কারন বলা হলো এগুলোই সাধারণত হয়ে থাকে। এর বাইরেও বাচ্চার কোনো রকম অসুস্থতা হলে সে কাঁদতে পারে। সেক্ষেত্রে দেরী না করে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। শিশুদের চিকিৎসায় বিলম্ব করা উচিত নয়।