বয়স অনুযায়ী ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন?

  • ডা.মোঃ মুরাদ হোসেন
  • মার্চ ২৮, ২০২৩

অনেকে আমার কাছে তার বয়স অনুযায়ী কিভাবে  ত্বকের যত্ন নিবেন তা জানতে চেয়েছেন।যেহেতু বাজারে হাজার হাজার স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রয়েছে এবং প্রত্যেকেই তাদের পণ্যগুলোকে ১০০% সফল বলে প্রচার করেন। তাই অনেক সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পরে যাই,যে কোনটি ব্যবহার করবো আর কোনটি করবো না। আপনাদের সুবিধার জন্য বয়স অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নেবার সূচীকে আমি মোটামুটি ৪টি ভাগে ভাগ করেছি। যেমন : 

২০বছর বয়সের শুরুতে(At early 20) এই বয়সীরা যেভাবে ত্বকের যত্ন নিবেনঃ

ক্লিনজিং(Cleansing): 

১)আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী একটি ফেসিয়াল ক্লিনজার (Facewash) ঠিক করুন।

২) দিনে ২–৩ বার এটি দিয়ে মুখ ধৌত করুন।

৩) আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত ও ব্রণ প্রবণ হয়, তাহলে আপনি স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত ফেস ওয়াস ব্যবহার করুন।

আরো পড়ুন: তরুণদের মধ্যে যে কারণে বাড়ছে হৃদরোগ

ময়েশ্চারাইজারঃ  

১)ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখবে, শুষ্কতা রোধ করবে, উজ্জলতা বাড়াবে। 

২)তাই আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি হালকা, নন কমিডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ঠিক করুন।

৩) প্রতিবার মুখ ধোয়ার সাথে সাথে মুখ হালকা ভেজা অবস্থাতেই (বিশেষ করে হায়ালুরোনিক এসিড যুক্ত হলে) ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিনঃ

১) সানস্ক্রিন আপনার ত্বকের বন্ধু। রোদে পোড়া, রিংকেল, মেছতা, অল্প বয়সেই বয়সের ছাপ ইত্যাদি থেকে আপনাকে রক্ষা করে।

২) আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি সানস্ক্রিন নির্ধারণ করুন অবশ্যই যেন এসপিএফ ১৫ থেকে ৩০ (SPF 15 to 30) এর মধ্য এবং পিএ+++(PA+++) হয়।

৩) ৩ঘন্টা অন্তর অন্তর এটি ব্যবহার করুন। রোদ,বৃষ্টি,ঘরে অথাবে বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন।

আরো পড়ুন: কিডনির পাথর দূর করার ঘরোয়া উপায় জানুন

স্ক্রাবিং ও এক্সফোলিয়েটিং ও পিলিংঃ

১) প্রতি সপ্তাহে ১ বার ভালো একটি এক্সফোলিয়েটিং টোনার দিয়ে এক্সফোলিয়েটিং করুন। মাসে ১ বার প্লিলিং করুন।

২) যদি আপনি এক্সফোলিয়েটিং ফেসিয়াল ক্লিন্সার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আর আলাদা ভাবে স্ক্র‍্যাবিং বা এক্সফোলিয়েটিং করার দরকার নেই।

২৫ বছরের শুরু হতে ত্বকের যত্ন(At the beginning of 25yr):

১) আস্তে আস্তে ভিটামিন-সি এবং হায়ালুরোনিক এসিড যুক্ত সেরাম ব্যবহার শুরু করুন। রেগুলার ব্যবহার করুন।

২) প্রথমে শুধু রাতে লাগাবেন। কোন সমস্যা/রিএকশন দেখা না গেলে আস্তে আস্তে দিনের বেলায় ব্যবহার শুরু করুন।

৩০বছর বয়স এর আগে ত্বকের যত্ন(At late 20’s):

১) আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার শুরু করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

২) আপনার যদি ফাইন লাইনের(Fine Line)  এর সমস্যা থাকে তাহলে,হায়ালুরোনিক এসিড,রেটিনল,ক্যাফেইন যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন।

৩) এসময় আপনি মুখের ত্বকের যত্নের জন্য AHA/BHA/Retinol ব্যবহার শুরু করতে পারেন।

আরো পড়ুন: মা-বাবার যেসব ভুলে সন্তান রাগী ও জেদি হয়ে ওঠে

৩০ বছর হতে ত্বকের যত্ন(30yrs& thereafter): ৩০ বছর বয়স থেকে ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা দিতে শুরু করে,যেমনঃ এই সময়ে ত্বকে ফাইন লাইন,রিংকেল বা  বলি রেখা, দাগ ইত্যাদি দেখা দিতে শুরু করে। ত্বকে ক্লান্তির ছাপ দেখা দিতে পারে, ব্রণের আধিক্য দেখা দিতে পারে। আপনি ৩০ বছর বয়স হতে কিভাবে ত্বকেত যত্ন নিবেন তার একটি প্রথমিক ধরিনা দেবার চেষ্টা  করছি—

ক্লিনজিংঃ

১) আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী একটি ফেসিয়াল ক্লিনজার(Facewash) ঠিক করুন।

২) দিনে ২–৩ বার এটি দিয়ে মুখ ধৌত করুন।

টোনার(Toner):

১) এলকোহল মুক্ত,হাইড্রেটিং বা এক্সফোলিয়েটিং টোনার ব্যবহার করুন।

২) যদি আপনি AHA/BHA যুক্ত টোনার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই সপ্তাহে ০২দিনের বেশী করবেন না এবং অবশই রাতে ব্যবহার করবেন।

আরো পড়ুন: শিশুর মাথাব্যথা হলে যেসব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না।

সেরাম(Serums):

১) আপনি যদি আগে কোন সেরাম ব্যবহার না করে থাকেন,তাহলে ভিটামিন-সি যুক্ত সেরাম রাতে ব্যবহার কর‍তে পারেন। যদি কোন সমস্যা না দেখা দেয়, তাহলে দিনেও ব্যবহার করতে পারবেন।

২) আপনি রেটিনল যুক্ত সেরামও রাতে ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেকোন সেরাম, একজন ডার্মাটোজিস্টের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করাই ভালো।

ময়েশ্চারাইজারঃ ত্বকের আদ্রতা রক্ষা করে এমন একটি ভালো  ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

চোখের নীচের ত্বকের যত্ন(Under eye care): ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। অথবা ভিটামিন-সি,ই,কে, রেটিনল, হায়ালুরোনিক এসিড যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

সানস্ক্রিনঃ ব্রড স্প্রেকট্রাম ভালো একটি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন,যা UVA ও UVB ২টির বিরুদ্ধেই কাজ করবে।

আরো পড়ুন: সন্তান উদ্বেগে ভুগছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?

★কোন নির্দিষ্ট সমস্যা যেমনঃ ব্রণ,মেছতা,রিংকেল, হাইপারপিগমেন্টেশন বা দাগ,ডার্ক সাইকেল ইত্যাদির  জন্য আপনি আপনার ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং তার নির্দেশনা মেনে চলুন।

★ধুমপান,মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে,ত্যাগ করুন।

★রাত জাগা বন্ধ করুন।পরিমিত পরিমাণ ঘুমান।

★ব্যালান্সড ডায়েট গ্রহণ করুন ও বেশী বেশী পানি পান করুন।

★জাঙ্ক ফুড,ফাস্টফুড, চিনি যুক্ত খাবার এভোয়েড করুন।

★নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

ডা.মোঃ মুরাদ হোসেন
এমবিবিএস,বিসিএস(স্বাস্থ্য),ডিডি(থাইল্যান্ড)
চর্ম,এলার্জী,সেক্স রোগ বিশেষজ্ঞ ও এস্থেটিক সার্জন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment