চুল পড়া কমাতে ও চুলের বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের রস কি সত্যিই কার্যকরী?
- ওমেন্স কর্নার
- জুলাই ১৪, ২০২৪
চুল পড়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। তবে দিনে ১০০টি পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক বলেই বিবেচিত। এর বেশি চুল পড়লে তখনই চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত, বলে মত বিশেষজ্ঞদের। চাইলে চুল পড়া কমাতে ও চুলের বৃদ্ধিতে ঘরোয়া উপায় বাতলে দেখতে পারেন।
অনেকেরই হয়তো জানা আছে, পেঁয়াজের রস চুলের যত্নে দারুণ কার্যকরী। তবে এ বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলছে? সত্যিই কি চুল পড়া কমাতে ও চুলের বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের রস কার্যকরী?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের রসে থাকা সালফার নামক খনিজ চুল পড়া বন্ধ করতে, নতুন চুল গজাতে ও চুল লম্বা করতে সাহায্য করে। সালফার অ্যামিনো অ্যাসিডে পাওয়া যায়, যা কেরাটিনসহ প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক করে।
কেরাটিন চুলের একটি মূল উপাদান। তাই উচ্চ মাত্রায় সালফারের ব্যবহার চুল আরও মজবুত ও শক্তিশালী করে। এজন্য চুলের যত্নে পেঁয়াজের ব্যবহার কার্যকরী হতে পারে।
আরো পড়ুন:
খুব সহজেই বাসায় তৈরি হবে হেয়ার মাস্ক
চুল কালো করতে কারিপাতা ও চা ব্যবহারের নিয়ম
চুলের যত্নে ডিম, জেনে নিন ঘরোয়া ৩ পদ্ধতি
চুলে তেল রাখবেন কতক্ষণ জানুন
চুল পড়া কমে
পেঁয়াজে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যা মাথার ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়া কমে।
শুধু তাই নয়, পেঁয়াজে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড। যা চুলের ফলিকলগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফলে চুল আরও লম্বা হয় ও মাথার ত্বক সুস্থ থাকে।
কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়
জানলে আরও অবাক হবেন, পেঁয়াজের রস কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে চুলের ঘনত্বও বাড়ে।
মূলত পেঁয়াজের রসে থাকা সালফার কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। কোলাজেন ত্বকের কোষ ও চুলের বৃদ্ধিচক্র তৈরিতেও সাহায্য করে।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ে
একই সঙ্গে পেঁয়াজের রস চুলে ব্যবহারের কারণে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনও বাড়ে। এক্ষেত্রে ফলিকলগুলো চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন গ্রহণ করে।
প্রদাহ কমায়
পেঁয়াজের রসের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমায়।
এছাড়া পেঁয়াজের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকের সংক্রমণ ও খুশকির বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
চুলের ফলিকল ভালো রাখে
পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, চুলের ফলিকলগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। যা চুলের বিভিন্ন ক্ষতির জন্য দায়ী।
চুলের বিভিন্ন সমস্যায় পেঁয়াজের রস কীভাবে ব্যবহার করবেন?
মাস্ক তৈরি করুন
প্রথমে কয়েকটি পেঁয়াজের খোসা এড়িয়ে টুকরো করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর পেয়াঁজের রস ছেঁকে নিন।
প্রয়োজনে সামান্য পানি মিশিয়ে মিশ্রণটি পাতলা করে নিতে পারেন। পেঁয়াজের তীব্র গন্ধ এড়াতে এই রসে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা রোজমেরি অয়েল।
চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন
এবার এই মিশ্রণ আপনার মাথার ত্বকে প্রয়োগ করুন একটি তুলোর বল বা আঙ্গুল ব্যবহার করে। চুলের গোড়ায় গোড়ায় এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
তারপর পুরো মাথায় ম্যাসাজ করুন, যাতে চুলের ফলিকলগুলোতে পেঁয়াজের রস প্রবেশ করে ও রক্ত প্রবাহ বাড়ে।
আধা ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করুন
পেঁয়াজের রস চুলে ব্যবহারের পর কমপক্ষে ৩০ মিনিটে থেকে ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করুন।
সবশেষে যথারীতি কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২-৩ বার মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস লাগান।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
পেঁয়াজের রস সাধারণত বেশিরভাগ মানুষের জন্যই নিরাপদ, তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের জন্য জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে।
তাই পুরো মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস ব্যবহারের আগে কানের পেছনের অংশে সামান্য লাগিয়ে প্যাচ টেস্ট করে নিন।
পেঁয়াজের রস চুলে ব্যবহার পর শ্যাম্পু করলেও অনেক সময় এর তীব্র গন্ধ যায় না। সেক্ষেত্রে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন ও প্রমাণ
চুলের বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের রসের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা আছে। তার মধ্যে ২০০২ সালে ‘জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে’ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মাথার ত্বকে প্রতিদিন দু’বার পেঁয়াজের রস ব্যবহার করেছেন অন্যদের তুলনায় তাদের চুল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি চুল বেড়েছে।