শিশুর বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ ও প্রতিকার
- তন্ময় আলমগীর
- নভেম্বর ৩, ২০১৮
ত্বক হল শরীরের একটি অন্যতম অঙ্গ, যা নানা রকমের জীবাণুকে শরীরে ঢুকতে বাধা দেয়। তবে ত্বকের বেশীরভাগ অংশই যেহেতু উন্মুক্ত থাকে, তাই অনেকক্ষেত্রেই মারাত্মক ধরণের কিছু জীবাণুকে আটকানো ত্বকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন ত্বক নানা রকম সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পরে। আর এমনটা যদি শিশুদের সঙ্গে হয়, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। প্রসঙ্গত, যে যে চর্মরোগে নবজাতকেরা বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেগুলি হল :
শিশুর ব্রণ: খুব ছোট শিশু এমনকি নবজাতকের মুখেও পিম্পল বা ব্রণের মতো দেখা যায়। এটি তরুণ-তরুণীদের ব্রণের মতো নয়। অনেক সময় নতুন পরিবেশ, কখনও আবার মায়ের হরমোনের সমস্যা দেখা দিলেও তা শিশুর ত্বকে আক্রমণ করে বসে। কারণ শিশুরা মায়ের দুধের ওপরই বেশীরভাগ সময় নির্ভরশীল থাকে। এছাড়াও জন্মের সময়ই অনেক শিশুর ত্বকে অ্যাকনে বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যা জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। শিশুদের গাল, পিঠ এবং কপালেই প্রধানত ব্রণ দেখা যায়। ব্রণ হওয়ার নানা কারণও আছে। যেমন, মায়ের দুধ পান করার থেকে হতে পারে, আবার খুব শক্ত এবং খসখসে কাপড় ব্যবহার করলেও হতে পারে। এমনকি খুব ক্ষার জাতীয় ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে শিশুদের জামাকাপড় ধুলেও তার থেকে এই ধরণের ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
ঘামাচি: ঘামাচির সঙ্গে আমাদের কম-বেশি পরিচিতি সবারই থাকার কথা। এটি একটি চর্মগ্রন্থির রোগ। গরমেই এটি হয়ে থাকে। একটি শিশুকে যদি বেশি রকম কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে রাখা হয় তাহলে এ রোগ বেশি পরিমাণে হতে দেখা যায়। অনেকের ধারণা, ছোট্ট শিশুকে জন্মের পরপরই গরম কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে রাখতে হবে, আবহাওয়া যতই গরম হোক না কেন? কথাটা মোটেই সঠিক নয়। গরম আবহাওয়ায় পাতলা কাপড় পরিধান করাতে হবে এবং ঘর যেন আবদ্ধ না হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ঘামাচি হলে ঠাণ্ডা হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এয়ারকুলারের মধ্যে থাকলে ঘামাচি হয় না। তা সম্ভব না হলে একটি পাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাতলা সুতির কাপড় পরাতে হবে এবং এতে নিয়ন্ত্রণ না হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ সময়মতো এর চিকিৎসা না হলে গায়ে ফোঁড়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
একজিমা: শিশুদের ত্বকের আরও একটি সমস্যা হল একজিমা। শরীরের যে কোনও অংশে, বিশেষত হাত, ভুরু, গলা, মুখ এবং হাঁটুর পিছনের দিকে এই ধরনের চর্ম রোগ হয়ে থাকে। একজিমা মূলত লালচে রঙের, শুষ্ক গোলাকার আকৃতি বিশিষ্ট হয়। বেশিরভাগ সময় চুলকানি দেখা যায় এক্সিমার ক্ষেত্রে। কিছুদিন পরে এগুলি থেকে পুঁজ বেরোতে থাকে, কখনও কখনও রক্তও বেরোয়। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার প্রচণ্ড চুলকানি হতে পারে। কখনো কখনো ইনফেকশন হওয়ার কারণে পুঁজ ও ঘা হতে পারে। যদিও শিশুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনি এই ধরণের সমস্যা ঠিক হতে শুরু করে।শিশুদের ক্ষেত্রে শীতকালে খুব বেশি দেখা যায়। এটা মূলত বংশগত কারণের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের কারণগুলো যুক্ত হয়ে রোগটি তৈরি হয়।
চিকেন পক্স: শিশুদের ক্ষেত্রে চিকেন পক্স হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, খিদের অভাব, বমি বমি ভাব এবং গায়ে ব্যাথা ইত্যাদি উপসর্গ দিয়েই শুরু হয় চিকেন পক্স। শিশুরা তাদের কষ্ট বলে বোঝাতে পারে না বলে তাদের এই ধরণের সমস্যাগুলি বোঝা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে শিশুদের শরীর লক্ষ্য করে দেখতে হয় যে, কোনও জল ভরা ফুসকুড়ির মতো হয়েছে কিনা। এটি সাধারণত আকারে ছোট এবং লালচে হয়। এই ফুসকুড়িগুলো যন্ত্রণাদায়ক হয় না ঠিকই, কিন্তু চিকেন পক্স সেরে ওঠার সময় এগুলো চুলকানির সৃষ্টি করে। প্রসঙ্গত, চিকেন পক্স মূলত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে।
মাসি-পিসি: নবজাতকের জন্মের প্রথম সপ্তাহে সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে সারা শরীরে যে লাল লাল দানা দেখা যায়, তাকে গ্রামবাংলায় মাসি-পিসি বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নাম ইরাইথেমা টক্সিকাম নিওনেটোরাম। এ ক্ষেত্রে শিশুর দেহে লাল লাল ভাব র্যাশের আকারে ফুটে ওঠে। সাধারণত মুখমণ্ডল, বক্ষপিঞ্জরের ত্বকসমূহ, হাত ও পায়ের অগ্রভাগের ত্বকসমূহে গুটি গুটি দানার আকারে বা র্যাশের আকারে ফুটে থাকে এবং সাথে কোনো রকম জ্বর বা অন্যরকম অসুস্থতা থাকে না। এবং সাধারণত দশম দিনে ভালো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
জন্মদাগ: নবজাতকের শরীরে ১ থেকে ১০টি কালো বা রঙিন জন্মদাগ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাধারণত মাতৃগর্ভে থাকার সময় বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে এই দাগ পড়ে। এগুলো জন্মের পর পর বা কয়েক মাস পরও দেখা যেতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, তবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জেনে নিতে পারেন এটি সত্যি জন্মদাগ কি না। অনেক জন্মদাগ সময়ের সঙ্গে ফিকে হয়ে আসে।
খোসার মতো ত্বক: ত্বক অনেক সময় হালকা পেঁয়াজের খোসার মতো উঠে আসে। একে বলে পিলিং। ত্বকের শুষ্কতার জন্য এটি হয়। নবজাতককে গোসল দেওয়ার পর তেল বা লোশন শরীরে লাগিয়ে দিলে এই শুষ্কতা অনেক কমে আসে। এতে বহিরাবরণ এবং নিম্নত্বক সুস্থ থাকে।