শীতে ছেলেদের ত্বক ও চুলের যত্নের কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • জানুয়ারি ৭, ২০১৮

ঋতু পরিবর্তনের নিয়মটা আমাদের সকলের মেনে নিতে হয়। আর এর সাথের ত্বকের নানান সমস্যাকেও। তাই ঋতু ঘুরে এবার এলো শীত। আর শীত আসলেই শুরু হয়ে যায় ত্বক ও চুলের যত সমস্যা। আমাদের অনেকেরি ধারনা শুধু মেয়েদের চুল ও ত্বকেরই মনে হয় সমস্যা দেখা দেয়। ছেলেদের রূপচর্চা করার হয়তো কোনো দরকার নেই। কিন্তু শীতের শুরু থেকেই ছেলেদের ত্বকেরও অনেক সমস্যা শুরু হয়। 

চুল ভাঙ্গা, রুক্ষ ও চিটচিটে হয়ে যাওয়া, র‍্যাশ, ত্বকের শুষ্কতা, ঠোঁট ফাটা, পায়ের গোড়ালী ফাটা আরও কত কি। সাধারণত হঠাৎ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় ত্বকের সহনশীলতা বদলে যায় ফলে এই সব সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। আজ তাই আমরা এই শীতে ছেলেদের ত্বকের ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলব এবং এ থেকে মুক্তির টিপস দিতে চেষ্টা করব। চলুন জেনে নেই ছেলেদের চুল ও ত্বকের নানান সমস্যা ও সমাধানগুলো।

ত্বকের যত্ন :

শীতে আপনার ত্বকের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে শুষ্কতা। মুখ ধোয়ার পরে এত টানটান হয়ে থাকে যা খুবই অস্বস্থিকর। ক্রিম লাগানোর কিছুক্ষন পর্যন্ত ভালো থাকলেও কিছুক্ষন পর অতিরিক্ত তেল চিটচিটে হয়ে যায়। ফলে বারবার মুখ ধুতে হয়। তাই এ সময় এর চাই একটু অতিরিক্ত যত্ন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে প্রতিদিন সকালে ও রাতে মশ্চারাইজার যুক্ত ক্রীম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে ১/৪ কাপ দুধ এ ১ চামুচ মধু ও ১ চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে আপনার ত্বকের শুষ্কতা তো কমবেই তার সাথে আপনার মুখ হয়ে উঠবে আরো কোমল ও উজ্জ্বল। শীতকালে মুখে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়, তাই সপ্তহে অন্তত একদিন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ব্যবহার করলে মুখের ব্ল্যাকহেডস বা কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।

চুলের যত্ন :

শীতের আগমনের সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় চুলের নানান সমস্যা যেমন শীতের শুরুতে মাথায় খুশকি, চুল ভাঙ্গা, রুক্ষ ও চিটচিটে হয়ে যাওয়া। সাধারণত হঠাৎ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় ত্বকের সহনশীলতা বদলে যায় ফলে এই সব সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। সুন্দর চুল ছেলেদের ফ্যাশন ও সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই অবশ্যই খুশকিমুক্ত চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। খুশকির জন্য কার্যকরী টোটকা হল লেবু ও পেঁয়াজের রস এক করে চুলে ম্যাসাজ করা। চুলে খুশকি দূর করার জন্য মাথায় গরম তেল ম্যাসাজ করাটাও বেশ উপকারি। প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার না করে সপ্তাহে দুবার চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। তবে খুশকির সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শীত কালে অনেকেরই চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং চুলে এক ধরনের চিটচিটে ভাব চলে আসে। এর ফলে অনেক সময় চুলের আগা ফেটে যায়। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শীতের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুলে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল গরম করে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। একটি স্টীলের বাটিতে নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল নিয়ে। এবার একটা কাচা আমলকী কেটে এর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এটাকে চুলার উপর একটা কাপড় দিয়ে ধরে কিছুক্ষন গরম করে নিয়ে। কিছুক্ষন রেখে দিয়ে কুসুম গরম থাকতে চুলের আগায় ও গোড়ায় ভালো করে আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তেল ম্যাসাজ করতে হবে। মনে রাখবেন কখনোই খুব গরম তেল চুলে লাগাবেন না। এতে চুল পরে যেতে পারে। সারা রাত চুলে তেলের উপস্থিতিতে চুলের রুক্ষ ভাব কেটে যাবে এবং চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে উজ্জ্বল।

র‍্যাশের যত্ন :

শীতে ত্বকের আর একটা সমস্যা হচ্ছে র‍্যাশ। অনেক সময় শরীরে লাল, ছোট ছোট ফুসকুনির মত হয়ে থাকে। এগুলো সাধারণত শীতকালে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমন ও উলের পোশাক পরার কারনে হয়ে থাকে। এগুলো শরীরে চুলকানি ও অস্বস্থিকর অবস্থা তৈরী করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন গোসলের পানিটাকে একটু ফুটিয়ে হালকা গরম পানি দিয়েই গোসল করতে হবে। এছাড়া পানির ব্যাক্টেরিয়া দূর করার জন্য এন্টিসেপ্টিক জাতীয় কোনো লিকুইড মিশিয়ে নিতে হবে। সবসময় উষ্ণ থাকার চেষ্টা করবেন। উলের কাপড় পরার সময় অবশ্যই তার নিচে সুতি অথবা অন্য পাতলা এবং আরামদায়ক কাপড়ের কিছু পরে নিবেন।

পায়ের যত্ন :

শীত বাড়লে প্রকটতর হয় পায়ের নানান সমস্যা। পা ফাটা এবং পায়ের দুর্গন্ধ অন্যতম। তাই এ সময়ে পায়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে পাতলা ছিদ্রযুক্ত মোজা ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পর প্রতিদিন অথবা সুযোগমত জুতা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। আর মোজা একদিন পরার পর ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। দুর্গন্ধ এড়াতে পায়ে দুর্গন্ধনাশক লোশন ব্যবহার করলে ভাল হবে। সমস্যা প্রকট হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

নখের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা থেকে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে পায়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে, তাই প্রতি মাসে অন্তত দুবার পেডিকিউর করলে পা থেকে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে। শীতের দিনে আরেকটা কমন সমস্যা হচ্ছে পায়ের গোড়ালী ফেটে যাওয়া। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে অবশ্যই পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলী লাগিয়ে নিবেন। এছাড়া প্রতিদিন গোসলের সময় শক্ত কিছু দিয়ে পায়ের গোড়ালীটা একটু ঘষে নিলে ভাল হবে। এতে মৃত কোষগুলো বের হয়ে যাবে। এছাড়া নিয়মিত মশ্চারাইজার যুক্ত লোশন ব্যবহার করবেন। এতে করে হাত ও পায়ের খসখসে ভাব থাকবে না।

ঠোঁটের যত্ন :

ত্বকের পাশাপাশি ঠোঁটের যত্ন নেয়া দরকারি। ছেলেরা শুধু মুখে বা শরীরে কোল্ড ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করলেও ঠোঁটে সাধারণত কিছুই ব্যবহার করেন না। এটি একদম করা যাবে না। কেননা মুখের ত্বকের চেয়ে ঠোঁট অনেক বেশি সংবেদনশীল। শীতে ঠোঁটের চামড়া উঠে যায়, ঠোঁট ফেটে যায়, কারও কারও ঠোঁট ফেটে রক্ত আসে। ঠোঁটে সব সময় গ্লিসারিন, ভ্যাসলিন, লিপবাম বা চ্যাপস্টিক ব্যবহার করলে ঠোঁটের এসব সমস্যা থাকবে না। যাদের ঠোঁটের সমস্যা একটু বেশি তারা সানস্ক্রিন লাগাবেন। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর শীতে ধূমপান করলে ঠোঁটের বেশি ক্ষতি হয়। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করা বাঞ্চনীয়।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment