যৌনকর্মী বানানো হয়, জন্মায় না!
- ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
- নভেম্বর ২৩, ২০২০
প্রিয়া মন্ডল ১৭ বছর বয়স, বউবাজার লালবাতি এলাকার বাসিন্দা। বাবা মা নেই। জন্ম থেকে বউবাজার হাড়কাটা গলি নোংরা পরিবেশে মানুষ। তবুও সেই পরিবেশের মধ্য থেকে পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটা আলাদা তাগিদ ছিলো। এখন আদি মহাকালী পাঠশালা একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বৃহস্পতিবার প্রিয়ার জীবনে এক ব্যতিক্রমী ছোঁয়া। এক ঘন্টার জন্য রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের চেয়ারে বসলেন প্রিয়া।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকে নিয়ে আসুন এক্সট্রা গ্লো
বিধান নগর রেল স্টেশনের পাশে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের অফিসে ঐদিন অন্য পরিবেশ। বর্তমান চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী স্বয়ং প্রিয়া কে বরণ করে নিজের চেয়ারে শুধু বসান নি, এমনকি তার কি কি দাবি শিশু অধিকারের বিষয়ে তা রীতিমতো চার্টার অফ ডিমান্ড আকারে লিপিবদ্ধ করে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। প্রিয়া এখনো রাতে ঘুমাতে পারে না, এতটাই খারাপ পরিবেশ। প্রতিদিন এক অসম্ভব হিংস্র পরিবেশ। চারপাশের নেকড়ের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবুও সেই পরিবেশ থেকে দক্ষিণ কলকাতা হামারি মুশকান নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে স্কুলে পড়তে পড়তে অন্য নানা কাজে লিপ্ত হয়।
ক্যারাটে তে পার্পেল বেল্ট পেয়েছে প্রিয়া। আত্মরক্ষার জন্য মেয়েদের ক্যারাটে, তাইকোন্ডো, বক্সিং শেখার পক্ষে সওয়াল করেন পিয়া। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাদা দিদিদের সাহায্যে ফটোগ্রাফি শেখে প্রিয়া। বউবাজারের ঘিঞ্জি অন্ধকারময় গলি থেকে এক ছুটে বেরিয়ে গহীন জঙ্গলে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মিশে যেতে চায়। প্রিয়া বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহক হতে চাই আগামী দিনে। লালবাতি এলাকায় মায়েরা সারারাত কাজ করে, বাচ্চারা সারারাত বাইরে ঘুরে বেড়ায় একটা অদ্ভুত ভায়োলেন্সের মধ্যে থাকতে হয় শিশুদের। অশ্লীল কথাবার্তা, অশ্লীল ইঙ্গিত নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুনঃ নিজেই নিজের চেহারায় ফুটিয়ে তুলুন গোলাপি আভা
শিশুদের সেই কারণেই একটা সুস্থ পরিবেশ, স্কুলে ভালোভাবে পড়ার ব্যবস্থা, লাইব্রেরীর ব্যবস্থা, খেলাধুলা, সেল্ফ ডিফেন্স এর ব্যবস্থা করা উচিত বলে প্রিয়া মনে করে। বাস, ট্রেনসহ সব পরিবহনের ভাড়ায় ছাড় দেওয়া উচিত বলে মনে করে প্রিয়া। যে সমস্ত শিশুরা স্কুলে পড়তে যায় তারাও বৈষম্যের শিকার। লালবাতি এলাকার নাম শুনলেই বহু সময় তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। এখানকার সমস্ত শিশুরাই সকালবেলায় কোনো কিছু না খেয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হয়। প্রত্যেকের মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত খারাপ হলে এখানে যাতে মেন্টাল কাউন্সিলরের ব্যবস্থা করা হয় সে দাবি তোলেন প্রিয়া। ১৪ বছরের পর এখানকার সবার কাজের সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও আবেদন তার।