মা-বাবার ভরসা রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েটাই
- ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
- নভেম্বর ২৩, ২০২০
মেয়েটার নাম পরি না, অর্থাৎ পরি নয় মানুষ। এরকম করেও তাঁর নামের অর্থ করা যায়। আসলে তাঁর পালক বাবা তাঁকে পড়ে পেয়েছেন। এই পড়ে পাওয়া শব্দের সঙ্গে মিল রেখে তার ফুফু মেয়ের নাম রেখেছিলেন পরিনা শুধুই পরিনা তার আগে পরে কিছুই নেই। সেই পরিনা পারেনা এমন কোন কাজ নেই। অনেক সময় ছেলেরা যা পারে না, পরিনা তাই করে দেখান। যেমন অনেক ছেলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখাশোনা করেনা। কেউ পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে।
এই সমাজে পরিনা পালক বাবা-মাকে দেখাশোনা করার জন্য বিয়ে করে নি। ভেবেছেন, যদি পরের ঘরে গিয়ে বাবা-মাকে দেখাশোনা করার সুযোগ না পান। তিনি ছাড়া তার বাবা-মায়ের যে আর কেউ নেই। পরিনার মনে আছে কলা বিক্রি করে বাবার যে কয় টাকা লাভ হতো। সে টাকা দিয়ে পরিনা বাজারে যা খেতে চাইত বাবা তাই কিনে দিতেন তারপর মেয়েকে ডালির ওপর বসিয়ে নিয়ে বাড়ী ফিরতেন। বাবার এই ভালোবাসার কথা কিছুতেই ভুলতে পারেনা। বাবা মায়ের ভালোবাসা ছাড়া শৈশব জীবন দুর্বিষহ ছিল। খেলার সঙ্গীদের সাথে খেলতে গেলে তারা বলতো তোর বাপ মায়ের নাম নেই।
আরো পড়ুনঃ প্লাস্টিকের জিনিস আসলে কতটা নিরাপদ?
এভাবে পড়িনা জামালগঞ্জ ব্র্যাক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এবং নিজেদের গ্রামের নুনুজ কলি মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করে। এরপর জামালগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হওয়ার পর টাকার অভাবে আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তখন সংসারে অভাব বাবা কলা বিক্রি করতে যেতে পারতেন না। মা মানুষের বাড়িতে গিয়ে চেয়েচিন্তে যা নিয়ে আসছেন তারা খেয়ে কোনরকমে জীবন ধারণ করতেন। কোন উপায় না দেখে ২০০৯ সালে মাত্র ১ হাজার ২০০টাকা বেতনে নাটোর প্রাণ কোম্পানিতে যোগদান করে। এ চাকরি করতে করতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে দিঘাপতিয়া এম কে কলেজ থেকে ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজশাহী নওহাটা ডিগ্রী কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন।
বর্তমানে তৃতীয় বর্ষ চলছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই কোম্পানিতে কাজ করেন এরপর রাজশাহী শহরের বিসিক এলাকায় নতুন প্রতিষ্ঠান ভালো বেতনে চাকরি পান। চাকরি করার সময় সালেহা খাতুন নামের এক নারীর সঙ্গে তার ভালো সখ্যতা হয়। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর রাজশাহীর পুঠিয়ার নন্দনপুর গ্রামের। আপন বোনের মতো ভালোবাসেন। পরিনার সঙ্গে তিনিও নতুন প্রতিষ্ঠান ভালো বেতনে চাকরি নিয়েছিলেন। তবে করোনার কারণে দুজনেই চাকরি হারান। এখন পরিনা সালেহার বাসাতেই থাকেন দুজনেই চাকরি থাকলে কিছু সঞ্চয় করে ছিলেন। এখন সে সঞ্চয় থেকে মাসে ২হাজার ৭০০ টাকা মুনাফা পান তা থেকে দেড় হাজার টাকা তাঁর বাবা-মায়ের জন্য পাঠান আর তারা দুজনে ১২০০ টাকায় মাস চালান।
আরো পড়ুনঃ নিউকাল কর্ড হলেই কি সিজার করতে হবে?
কাজ খুঁজছেন হন্যে হয়ে। জীবনের এই লড়াইয়ের মধ্যে পরিনা লেখালিখির অভ্যাস গড়ে তুলেছে। প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ। ঢাকায় গেলে কবি নির্মলেন্দু গুণের বাসায় যান। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬। তিনি গানও লেখেন।। গানের সংকলন- মনের কথা গানে গানে। কন্ঠ শিল্পী রিংকু গান করেছেন। নিয়মিত একটি অনলাইন পত্রিকায় লেখেন। যদিও লেখালেখি করে এখন তেমন আয় হয় না।