পুনর্জন্ম ঢাকাই মসলিনের!
- ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
- ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
কেবলই কাপড় কি এই মসলিন? বাংলাদেশ-এর ঐতিহ্য-এর কথা বললে, ইতিহাসের কথা বললে মসলিন-কে বাদ দেওয়ার কোনো উপায়ই নেই। সেজন্যই মসলিন-এর পুনর্জন্ম ঘটাতে একদল গবেষক ছয় বছর ধরে লেগে ছিলেন। এবং অবশেষে তাঁরা সফলও হয়েছেন। কী বিচিত্র উপায়ে সংগ্রহ করা হলো মিহি মসলিনের উপাদানগুলো, তা একেকটা গল্পই বটে।
আরো পড়ুনঃ নিজেই চামচ পরীক্ষায় জেনে নিন কি রোগ বাসা বেঁধে আছে আপনার শরীরে
মসলিন বোনার সুতা ফুটি কার্পাস তুলার গাছ থেকে তৈরি হয়, সেই গাছ খুঁজে বের করা হয়েছে বিচিত্র সব উপায় অবলম্বন করে। এই শাড়ি তৈরিতে তাঁতিদের হাতে কাটা ৫০০ কাউন্টের সুতাই ব্যবহার করতে হয়েছে যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে এসেও। কাপড়ও বোনা হয়েছে হস্তচালিত তাঁত-এই। লন্ডনে ১৮৫০ সালে ঢাকাই মসলিনের শেষ প্রদর্শনী হয়েছিল । প্রায় ১৭০ বছর পরে বাংলাদেশে আবার বোনা হলো ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন কাপড়ের শাড়ি। ঠিক সে রকমই, যেমনটি বলা হতো—আংটির ভেতর দিয়ে গলে যায় আস্ত একটি শাড়ি। ইতিমধ্যেই ঢাকাই মসলিনের জিআই স্বত্বের অনুমোদন পাওয়া গেছে। ২৮ ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। প্রচলিত আছে, মসলিন শিল্পীদের আঙুল কেটে দেওয়ার পরে ঢাকাই মসলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন ভারতেও মসলিন তৈরি হয়। ঢাকাই মসলিনের বিশেষত্বই আলাদা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই তো একদল গবেষক ঢাকাই মসলিন তৈরি করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ছয় বছরের চেষ্টা আর গবেষণা ফল দিয়েছে। তৈরি হয়েছে মসলিনের ছয়টি শাড়ি। গবেষকেরা এর একটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু শুরুতে এক টুকরা অরিজিনাল মসলিন কাপড় জোগার করতে গবেষকদের কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত ছুটতে হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের অক্টোবরে মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। বাংলাদেশ-এর কোন কোন এলাকায় মসলিন সুতা তৈরি হতো, তা জেনে সে-ই প্রযুক্তি উদ্ধারের নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ-এ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
আরো পড়ুনঃ সুস্থ শিশুর ৭টি চিহ্ন জানুন, মায়েদের জানা জরুরী!
কমিটির অন্যান্য সদস্য হচ্ছেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহ আলীমুজ্জামান, বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত পরিচালক মো.আখতারুজ্জামান, বিটিএমসি ঢাকার মহাব্যবস্থাপক মাহবুব-উল-আলম, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের উপমহাব্যবস্থাপক এ এস এম গোলাম মোস্তফা ও সদস্যসচিব করা হয় তাঁত বোর্ডের জ্যেষ্ঠ ইনস্ট্রাক্টর মো. মঞ্জুরুল ইসলামকে। পরে আরও সাত সদস্যকে এই কমিটিতে যুক্ত করা হয় গবেষণাকাজের স্বার্থে। তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুলবন ওসমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম ফিরোজ আলম, অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিল বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী ও বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রাজশাহীর গবেষণা কর্মকর্তা মো. আবদুল আলিম।
'বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুর হোসেনকে প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক করা হয়। বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আয়ুব আলী প্রকল্প পরিচালক নিযুক্ত হন।
আরো পড়ুনঃ মা হতে চাইলে আজই যেসব অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত
মসলিন কাপড় বা তুলার কোনো নমুনাই গবেষকদের কাছে ছিল না কাজের শুরুতে। তাঁদের প্রথম কাজ ছিল তুলা থেকে সুতা কেটে মসলিন শাড়ি বোনা হতো, সেই তুলার গাছ খুঁজে বের করা। সেই গাছটি আসল ফুটি কার্পাস কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার মসলিন কাপড়ের প্রয়োজন ছিল। এই দুটি জিনিস জোগাড় করাই এই প্রকল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল।
সূত্রঃ প্রথম আলো