ছোট থেকেই যেভাবে আপনার শিশুর আচরণ উন্নয়ন করবেন

  • তাসফিয়া আমীন
  • জুন ১৫, ২০২২

একদম ছোটবেলা থেকেই শিশুদের সঠিক আচরণ শেখানো এবং তা তাদের দৈনন্দিন জীবনে চর্চা করানো মা-বাবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি। এই কাজ কিন্তু মোটেও সহজ নয়। তবে শুরু থেকেই কিছু ছোটখাটো টিপস কাজে লাগিয়ে এই কঠিন কাজটা সহজ করতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ মনে হলেও শিশুদের আচরণ উন্নয়নে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমন কয়েকটি টিপস সম্পর্কে জেনে নিনঃ

১. আপনার শিশুকে তার পরবর্তী কাজ সম্পর্কে আগে থেকে বলুন ধরুন, আপনার বাচ্চা খেলছে তখনই হঠাৎ কিছু না বলেই আপনি তাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলেন। এতে কিন্তু সে কান্না করবে, বিরক্ত হবে, মোটকথা তার ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ, সে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলোনা যে এখন তাকে গোসল করতে হবে।

সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কাজটা যতটা সহজ হওয়ার কথা ছিলো ঠিক ততোটাই কঠিন হয়ে যেতে পারে। তাই শিশুকে তার সারাদিনের কাজগুলোর ব্যাপারে আগে থেকে বলা ভালো। যেমন ধরুন, শিশু এখন খেলছে তাকে আপনি আগে থেকেই বলতে পারেন খেলা শেষে আমরা গোসল করতে যাবো, বা আর ৫ মিনিট খেলো তারপর তোমার গোসল করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ত্বক উজ্জ্বল করবে আমলকীর জুস

শিশু গোসল করছে আপনি বলতে পারেন গোসল শেষে ড্রেস পরে আমরা খেতে যাবো। এটা শুধু দৈনন্দিন রুটিনের বিষয়ই নয়, কোথাও বেড়াতে গেলেও আগে থেকে শিশুকে বলা ভালো কোথায় যাচ্ছেন, কাদের বাসায় যাচ্ছেন, কখন ফিরবেন, ওখানে কে কে থাকবে, কী কী করবেন ইত্যাদি। তাতে শিশুর মস্তিষ্ক পরবর্তী কাজ শুরু করার আগে রেডি হওয়ার সুযোগ পায়। এবং বাচ্চার খাপ খাওয়ানো সহজ হয়। একই বিষয় করতে পারেন আপনাদের বাসায় মেহমান আসার কথা থাকলেও, কে আসবে, কি হবে এসব আগে থেকেই বলতে পারেন। আপনার মনে হতে পারে এসব বললে কি বাচ্চা বুঝবে? অবশ্যই বুঝবে, আমাদের ধারণার থেকে আমাদের শিশুরা সাধারণত বেশি বোঝে৷

২. শিশুর পাশে বসে শিশুর চোখে চোখ রেখে কথা বলুন শিশুরা যেহেতু বড়দের থেকে উচ্চতায় ছোট হয় তাই অনেক সময়ই আমাদের সাথে ওদের একটা গ্যাপ ওরা অনুভব করে। দিনের মধ্যে কয়েকবার হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে বা পাশে বসে চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন, জড়িয়ে ধরবেন, এটা আপনার শিশুর সবকিছুতে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করবে, আপনার প্রতি ওর আস্থা বাড়বে এবং সে খুব নিরাপদ বোধ করবে। এটি শিশুদের সাথে কমিউনিকেট করার একটি চমৎকার এবং কার্যকরী একটি উপায়।

৩. শিশুকে উত্তর দেয়া শেখান আপনি হয়তো আপনার বাচ্চাকে ডাকছেন আর সে কোনো সারাশব্দ না করেই আপনার সামনে এসে দাঁড়ালো। আবার আপনি পড়তে বসতে বললেন বা খেতে বললেন সে কোনো কথা না বলেই সেটা করা শুরু করলো। বেশিরভাগ শিশুদের মধ্যেই এই বিষয়টি খুব দেখা যায়। এইসব কথার বিপরীতে আপনার শিশুকে ছোটবেলা থেকেই "কমান্ড এক্সেপ্টেড" টাইপ উওর দেয়া শেখানো উচিত।

আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বক? ঘরোয়া উপায়ে বানিয়ে ফেলুন সানস্ক্রিন লোশন

যেমনঃ আপনি ডাকলেন, আপনার শিশু উত্তর দিলো --জি মা/বাবা, ইয়েস মাম্মা/বাবা। আপনি বললেন- হোমওয়ার্ক করে নাও, ঘর গুছিয়ে নাও এক্ষেত্রে ওর উত্তর হতে পারে --ওকে মা বা আচ্ছা মা। এতে আপনার কমান্ড বা আপনার প্রতি একটা শ্রদ্ধা বা আনুগত্য প্রকাশ পায়। তাই ছোট থেকেই কমান্ডের এই রেসপন্স নেয়ার চর্চা করান। শিশুর দেড় থেকে দুই বছর বয়স থেকে এই চর্চা শুরু করলে বেশি কার্যকরী হবে।

৪. শিশুকে নোটিশ বা ওয়ার্নিং দিন শিশুকে মোবাইলে গেইম খেলতে দিয়েছেন বা কার্টুন দেখতে দিয়েছেন, বাইরে খেলতে নিয়ে গেছেন। হঠাৎ করেই তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া বা হঠাৎ করে খেলা বন্ধ করে বাসায় নিয়ে আসবেন না। আগে থেকে শিশুকে ওয়ার্নিং দিন- "আর ৫ মিনিটের মধ্যে তোমার স্ক্রিন টাইম শেষ হবে, আমরা ৫ মিনিট পর বাসায় চলে যাবো।

" আবার বাইরে কোথাও বা বাজারে গিয়েছেন কিন্তু শিশু হঠাৎ কোন অপ্রত্যাশিত আচরণ বা আবদার শুরু করে দিলো, তখন বলতে পারেন - "৫ মিনিটের মধ্যে তুমি শান্ত না হলে আমরা বাসায় চলে যাবো।" এতে করে শিশু নিজে প্রস্তুত হওয়ার সময় পায় এবং মা-বাবার সাথে কো-অপারেট করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শুরুতে শিশু নাও মানতে পারে তবুও এই চর্চাগুলো করে যান, কিছুদিনের মধ্যেই শিশু বুঝে যাবে।

৫. শিশুকে কাজের জন্য অনুমতি নিতে শেখান ছোটবেলা থেকে শিশুকে শেখাতে হবে তার কোনো কাজ বা কিছুর দরকার হলে সে যেনো মা-বাবার কাছ থেকে অনুমতি নেয়৷ কোন কিছু কিনতে ইচ্ছে হলে, খেলতে যেতে চাইলে।

যেমনঃ "মা আমি কি এই খেলনা টা নিতে পারি, মা আমি কি স্কুলের পর আমার বন্ধুর বাসায় যেতে পারি?" যদি এই অনুমতি নেয়ার অভ্যাস আমরা করাতে পারি তাহলে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই ধারণা পেয়ে যায় আমরা মা-বাবারা কী কী বিষয়ে তাদের অনুমতি দেই, আর কীসে কীসে দেই না।

আরো পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভারের সমস্যার সমাধানে খাদ্যতালিকায় রাখুন বিট

ছোটবেলা থেকেই এই চর্চাটা করলে তারা যখন টিনেজ হবে তখন তাদের হ্যান্ডেল করা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহজ হবে, যেহেতু ততদিনে সে তার মা-বাবার পছন্দ-অপছন্দ, তাদের পারিবারিক কালচার জেনে যায় এবং মা-বাবার কমান্ড ফলো করার একটা অভ্যাসও হয়ে যায়। শুরুতে খুবই ছোটছোট বিষয়গুলোতে চর্চা করান, ধারাবাহিক চর্চায় এটি শিশুর আচরণের অংশ হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment