পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে নারীর শরীরে গুরুতর যে ক্ষতি হয়!
- কবিতা আক্তার
- নভেম্বর ২৩, ২০২২
শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুমের পরিমাণ ও গুণমান উভয়েরই সমান তাৎপর্য আছে। ঘুম একজনের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অপরিহার্য। আর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে অনিয়মিত অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে নারী পুরুষ উভয়ই স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিদ্রা কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, ডায়াবেটিস মেলিটাস, ক্যান্সার, বিষন্নতা ও উদ্বেগ জনিত ব্যাধিসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সম্প্রতি গবেষণাগুলো প্রমাণ করছে যে, ঘুমের ব্যাঘাত ডিম্বোসফোটন না হওয়া, অনিয়মিত মাসিক সহ নারীর উর্বরতা কমে যাওয়ায় এমনকি বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে জড়িত।
গবেষকদের মতে, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। কারণ ঘুম ও প্রজনন ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
মেলাটোনিন, অন্ধকারের প্রতি কি আয় মস্তিষ্কের দ্বারা নিশ্চিত একটি মূল হরমোন ঘুম প্ররোচিত করে ও এটি শরীরের সাকার্ডিয়ান ছন্দ বজায় রাখে।
একই ভাবে মস্তিষ্ক প্রজনন হরমোন গুলোকে একটি ছন্দময় প্যাটার্নের সংশ্লেষিত করে, যা দিনে নয় বরং রাতে। তাই ঘুম বা সার্কায়ান ছন্দে কোন ব্যাঘাত ঘটলে এই হরমোন গুলোর স্বাভাবিক উৎপাদন ও কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
এমনকি একটানা কয়েক রাত পর্যন্ত ঘুম না হলে হরমোন উৎপাদন ও চাপ সহনশীলতা ব্যাহত করতে পারে। উর্বরতার উপর অনিদ্রার কি কি প্রভাব পড়ে জেনে নিন...
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: ঘুমের অভাবে মেজাজ ও উৎপাদনশীলতা বেশি প্রভাবিত হয়। ফলে নির্দিষ্ট প্রজনন হরমোনের উৎপাদন কমে যায়। হরমোন ডিম্বস্ফোটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীর সক্রিয়ভাবে তখনই কাজ করে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি।
প্রতি রাতে আমাদের এন্ড্রোক্রাইন সিস্টেম ( যা আমাদের হরমোন গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে ) , ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, লুটিনাইজিং হরমোন ( এলএইচ ) ও খালি কল স্টিমুলেটিং হরমোন সহ গর্ভধারণের সঙ্গে জড়িত কিছু মূল হরমোন তৈরি করে।
অনিদ্রা এসব হরমোনের উৎপাদন ও কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে প্রাকৃতিক ভাবে গর্ভধারণের প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে পড়ে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কম শক্তি হ্রাস, মেজাজের চরম পরিবর্তন ও ক্লান্তির কারণও হতে পারে।
ডিম্বের গুণমান কমায়: রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও অধিক গেজেটের ব্যবহারের ফলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিনকে দমন করে ( এটি ঘুমকে প্ররোচিত করে ও এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাবের মাধ্যমে ডিম্বাস্ফোটনের সময় ডিম্ব গুলোকে রক্ষা করে ) অপর্যাপ্ত মেলাটোনিন উৎপাদনের ফলে ডিম্বের মান খারাপ হয় ও উর্বরতা নষ্ট হয়।
আরো পড়ুনঃ আপনার চুলের যত্নের জন্য কিছু উপকারী হেয়ার মাস্ক
সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ঘুমের প্রয়োজন?
গবেষকদের মতে, দৈনিক ৬-৭ ঘন্টা একটানা গভীর ঘুম নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জরুরী। তবে ৯ ঘন্টার বেশি নয়। অতিরিক্ত ঘুম ও প্রজনন ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সাম্প্রতিক ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন সমীক্ষা অনুসারে, আইবিএফ এর মাধ্যমে সন্তান ধারণে চেষ্টা করা নারীরা প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমালে গর্ভধারণে ২৫ শতাংশ বেশি সফল হন।
যারা ৭ ঘন্টার কম ঘুমান তাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ কমে। তাই প্রতি রাতে ৭-৮। ঘন্টা ঘুম সফল ইমপ্ল্যান্টেশন ও একটি নিরাপদ গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে।