ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত যে ৭ রোগ থেকে সাবধান থাকবেন
- কবিতা আক্তার
- জুলাই ৩০, ২০২৩
শুধু ডেঙ্গু নয় মশার কামড়ে মারাত্মক সব রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু থেকে বয়স্ক, সবাই এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বর্ষাকাল হলো মশার প্রজননের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। তাই এই সময় মশার উপদ্রব ও বাড়ে।
মশার কামড়ে শুধু ডেঙ্গু নয় হতে পারে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া সহ নানা ভয়াবহ রোগ। তাই এ সময় মশাবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকতে সবাইকে সচেতন ও সাবধান হতে হবে।
জেনে নিন ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত ভয়াবহ সাতটি রোগ-
ইয়েলো ফিভারঃ টাইগার মশা ও এডিস প্রজাতির আরো কিছু মশার মাধ্যমে ইয়েলো ফিভার ছড়ায়। সাধারণভাবে একে ফ্লাবি ভাইরাস ও বলা হয়। আফ্রিকার ৩৪ টি , দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ১৩ টি দেশে ইয়েলো ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।এ রোগের লক্ষণ হিসেবে শুরুতে জ্বর এলেও পড়ে তা বমি দেখা দেয়। এক সময় মেনিনজাইটিসের রূপ নেয়। যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
আরো পড়ুনঃ গোদ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গুঃ বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রাদুর ভাব বেড়েছে। এডিস ইজিপ্টাই নামের মশা কামড়ে ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যথা হয়, লাল গুটি দেখা দেয়, মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়াতেও ব্যথা হয়।চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে রক্ত ক্ষরণের ফলে এ রোগের মৃত্যুও হতে পারে। প্রথমবার সামলে উঠলেই যে মুক্তি তা কিন্তু নয়। ডেঙ্গু রোগে কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা প্রথমবারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে।
চিকুনগুনিয়াঃ কয়েক বছর আগেও চিকুনগুনিয়া দেশে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগের প্রভাবে জ্বর কাটিয়ে উঠতে ৩-৪ দিন লাগে। তবে এরপর হাড়ের জোড়ায় ভয়াবহ ব্যথা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে চামড়ায় ক্ষত দেখা দিতে পারে। তবে একবার চিকুনগুনিয়া হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একেবারেই কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ মানবদেহে কীভাবে ছড়ায় নাইল ভাইরাস?
ম্যালেরিয়াঃ মশা বাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে বেশি পরিচিত। খুবই মারাত্মক এই রোগ। অ্যানোফিলিস নামের মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
এই রোগে আক্রান্ত হলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। ম্যালেরিয়ার কার্যকর ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে আগে থেকে সতর্ক থাকলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমানো যেতে পারে।
জিকাঃ এডিস, ইজিপ্টাই, টাইগার মস্কিউটো ও এডিস আলবোপিকটাস জিকা ভাইরাস ছড়ায়। ২০১৫ সালে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। জিকার আক্রমণে ব্রাজিলে অসংখ্য শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মাইক্রোসিফেলি নামের ভয়াবহ প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্মায় তারা। এর ফলে শিশুদের মাথার আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা জিকায় আক্রান্ত হলে শিশুদের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি।
আরো পড়ুনঃ ম্যলেরিয়া কী ? ম্যালেরিয়ার লক্ষণ!
ওয়েস্ট নাইল ফিভারঃ বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের এই রোগ ভয়াবহ ক্ষতি করে। এর ফলে মেনিনজাইটিস ও মায়োকার্ডিটিস হতে পারে।অন্যান্য মশাবাহিত রোগের মতো কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর,মাথা ব্যথা,ঝীমুনি দেখা দিতে পারে।এর কোন ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।
লাইশম্যানিয়াসিসঃ গর্ভবতী নারী মশাদের কামরে এই রোগ ছড়ায়। ৩০ ধরনের ভিন্ন প্রজাতির লাইশম্যানিয়াসিস জীবাণু আছে। এর মধ্যে ১০ টি মানবদেহে রোগ ছড়ায়। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর ও মাথা ব্যথা দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কিন আলসার হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। রোগটি এতই ভয়াবহ যে দ্রুত ডাক্তার না দেখালে লিভার কিডনিসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসার অভাবে মশাবাহিত এই রোগ মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।মশা বাহিত এসব রোগ থেকে সাবধান থাকার উপায় হল মশা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। এজন্য সবার উচিত মশা যেন না কামড়ায় তা নিশ্চিত করা ও ঘরে বাইরে থাকাকালীন যথেষ্ট নিরাপত্তা বজায় রাখা।