ম্যলেরিয়া কী ? ম্যালেরিয়ার লক্ষণ!
- রেজবুল ইসলাম
- ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
(Malaria) হল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের একটি মশা-বাহিত সংক্রামক রোগ যার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের প্রোটিস্টা (এক ধরনের অণুজীব)। ম্যলেরিয়া শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন Torti (1753)। ইতালিয় শব্দ Mal (অর্থ- দূষিত) ও aria (অর্থ- বায়ু) হতে Malaria (ম্যালেরিয়া) শব্দটি এসেছে। তখন মানুষ মনে করতো দূষিত বায়ু সেবনে এ রোগ হয় স্ত্রী জাতীয় এনোফিলিস মশার কামড়ে ছড়ায় এমন এক ধরনের সংক্রামক জ্বর হলো ম্যালেরিয়া৷ ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু (প্লাসমোডিয়াম) মশার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যের কাছে ছড়াতে পারে।
কী ধরণের ম্যালেরিয়া হতে পারে ঃ জীবাণুর ধরন অনুসারে ম্যালেরিয়া কে ফেলসিপেরাম, ভাইভ্যাক্স,ওভালি ও ম্যালেরি হিসেবে ভাগ করা যায৷ আবার রোগের লক্ষণের ধরন অনুসারে ম্যালেরিয়া কে সাধারণ/জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া ও মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসাবেও চিহ্নিত করা যায়৷ বাংলাদেশের বেশির ভাগ ম্যালেরিয়া ফেলসিপেরাম ধরনের৷ ভাইভেক্স ম্যালেরিয়া ও রয়েছে৷ পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত বর্তী তেরটি জেলা ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত৷ এর মধ্যে প্রায় ঌ৫ ভাগ ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে তিন পার্বত্য জেলা (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) এবং কক্সবাজারে৷
লক্ষণঃ রোগের লক্ষণের ধরন অনুসারে ম্যালেরিয়া কে সাধারণ/ জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া ও মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা যায়৷
মারাত্মক ম্যালেরিয়াঃ ম্যালেরিয়া রোগের জটিল ধরন হলো মারাত্মক ম্যালেরিয়া৷ জরুরি চিকিৎসা না পেলে এসব রোগীর মৃত্যু হতে পারে৷ সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া (মারাত্মক ম্যালেরিয়া) রক্ত শূণ্যতা, কিডনি বৈকল্য, শ্বাস কষ্ট হওয়া, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়৷ এক্ষেত্রে রোগী নিজে বসতে দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতে পারে না, বারবার বমি হয়৷ রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে৷
ম্যালেরিয়ার চিকিৎসাঃ সাধারণ/জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় আগে মুখে খাওয়ার ঔষুধ ক্লোরো কুইন ব্যবহার করা হতো৷ ক্রমে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করা হয়৷ যার মধ্যে বাংলাদেশে কো-আর্টেম ব্যবহার করার নিয়ম সম্প্রতি চালু হয়েছে৷ যদিও ভাইভেক্স ম্যালেরিয়ায় এখনো ক্লোরো কুইন কার্যকর ঔষুধ হিসেবে বাংলাদেশে স্বীকৃত৷ সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার (মারাত্নক ম্যালেরিয়া)-রোগীকে মুখে খাওয়ার ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়৷ ফলে এদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেই নজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়৷ এখনো কুইনাইন ইনজেকশন স্যালাইনের মাধ্যমে প্রদান করাই হচ্ছে মারাত্ম কম্যালেরিয়ার মূল চিকিৎসা৷এ ধরনের রোগীর প্রয়োজনীয় নার্সিং খুবই গুরুত্ব পূর্ণ৷
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধঃ
(১) ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের পদ্ধতি গুলো হচ্ছে কীটনাশকে ডুবানো মশারি ব্যবহার করা এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার বিভিন্ন উপায় গ্রহন করা৷
(২) মশার বংশ বৃদ্ধি রোধে বিভিন্ন মুখী সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করা৷ যেমন- বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধার গুলো শুকনো, পানি শূন্য রাখতে হবে৷
(৩) যেসব জিনিসে বৃষ্টির পানি জমা হয়,যেমন-পুরনো টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি বাসার আশে পাশে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন৷ টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন৷
(৪) ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন৷ ফুল দানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন৷ জন স্বাস্থ্য কর্মীরা যাতে স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করে সে ব্যাপারে পাড়ার সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে৷
তথ্য এবং ছবি : গুগল