মুখের যে ৩ ধরনের দুর্গন্ধ ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত দেয়
- ওমেন্স কর্নার
- জুন ৫, ২০২৪
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই খুঁজলে পাওয়া যাবে ডায়াবেটিসের রোগী। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো এই রোগ। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
বর্তমানে ছোট থেকে বড় অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
তাই নিয়মিত রক্তে শর্করার পরিমাণ পরিমাপ করা উচিত সবারই। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব শুধু জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই।
রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ ফুটে ওঠে। যার মধ্যে অন্যতম হলো নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ। তাই নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধও অবহেলা করবেন না। মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস অবহেলা করলে স্ট্রোক, অঙ্গচ্ছেদসহ বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
কীভাবে ডায়াবেটিস শরীরের গন্ধ তৈরি করে?
ডায়াবেটিস কেটোঅ্যাসিডোসিস ডায়াবেটিসের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি। ডায়াবেটিসের জটিলতা তখনই বিকশিত হয়, যখন কোষে রক্তে শর্করাকে শক্তি হিসেবে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন না থাকে।
তারপরে লিভার জ্বালানির জন্য চর্বি ভেঙে দেয়, যা কিটোন নামক অ্যাসিড তৈরি করে। যখন অনেকগুলো কিটোন খুব দ্রুত উৎপাদিত হয়, তখন সেগুলো রক্ত ও প্রস্রাবে বিপজ্জনক মাত্রা পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। এই প্রতিক্রিয়া লিভারের অভ্যন্তরে ঘটে, যার ফলে রক্ত অম্লীয় হয়ে যায়।
এই অবস্থা নিঃশ্বাসে ৩ ধরনের গন্ধ তৈরি করতে পারে। এটি বিষাক্ততার লক্ষণ। কিটোনগুলো আমাদের শ্বাস ও ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, যা গন্ধ সৃষ্টি করে।
যেমন- নিঃশ্বাসে ফলের গন্ধ, মলের মতো গন্ধ কিংবা অ্যামোনিয়া-সদৃশ গন্ধ, যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কিডনি ব্যর্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঘটে।
আরো পড়ুন:
ত্বকে অতিরিক্ত আঁচিল হওয়া কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?
মাথায় সারাক্ষণ কাজের চিন্তা, টাইম ফ্যামিনে ভুগছেন না তো?
গলা-বুক জ্বালাপোড়া করে কেন? সমাধান কী
কিডনির পাথর দূর করার ঘরোয়া উপায়
এই অবস্থা কত ঘন ঘন হয়?
টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সংক্রমণ, আঘাত, গুরুতর অসুস্থতা, অস্ত্রোপচারের চাপ বা ইনসুলিন শটের অনুপস্থিত ডোজগুলোর কারণে কেটোসিডোসিস বিকাশ করতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস কেটোসিডোসিস কম ঘন ঘন ও গুরুতর হয়। যাই হোক, এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অনিয়ন্ত্রিত রক্তে শর্করার দ্বারা ট্রিগার হতে পারে।
যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের ক্ষেত্রেও কেটোঅ্যাসিডোসিস হতে পারে। এটি অনাহারের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে, যেখানে গ্লুকোজের অভাব শরীরকে শক্তির জন্য কেটোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বাধ্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বোহাইড্রেট কম খাবারের কারণে এই অবস্থাটি খুব কমই বিকশিত হতে পারে।
কেটোঅ্যাসিডোসিসের অন্যান্য লক্ষণ
শ্বাসের গন্ধ ছাড়াও এই অবস্থার অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে-
>> গভীর শ্বাস
>> ক্লান্তি
>> অতিরিক্ত প্রস্রাব
>> ওজন কমে যাওয়া
>> বমি বমি ভাব ও বমি
>> পেটে ব্যথা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট টিপস
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের উচিত প্রতিদিনের খাবারে ক্যালোরি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, চিনি ও লবণ কমানো। এর পাশাপাশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পুরো শস্য, রুটি, ভাত বা পাস্তা অল্প পরিমাণে খাওয়া। সোডা ও প্যাকেজ করা রস বাদ দিতে হবে।
তাজা কমলা, লেবু, শসা বা স্ট্রবেরি রাখুন খাদ্যতালিকায়। এছাড়া প্রচুর ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। ডায়াবেটিস-বান্ধব খাবার পরিকল্পনার জন্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
খাদ্যতালিকায় বিশেষ নজর দেওয়ার পাশাপাশি দিনে বেশ কয়েকবার বাড়ির আশপাশে বা কর্মস্থলে ৩-১০ মিনিট করে হাঁটাহাঁটি করুন। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলেও উপকৃত হবেন।