চুলকালেও চুলকানো যাবে না যখন
- ডা. আফলাতুন আকতার জাহান
- অক্টোবর ২, ২০২৪
চুলকানি ভীষণ অস্বস্তিকর। প্রাথমিকভাবে না চুলকানো পর্যন্ত এর থেকে রেহাই মেলে না। চামড়ার বাইরের স্তর এপিডারমিস থেকে চুলকানির সিগন্যাল মস্তিষ্কের থ্যালামাসে পৌঁছে। চুলকালে চামড়ার সেন্সরি নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অথবা ইনহিবিটরি সিগন্যালের কারণে এই চুলকানি বন্ধ হয়। কিন্তু চুলকানির কারণে চামড়ায় সৃষ্টি হয় ক্ষত, অনেক সময় ঘটে জীবাণুর সংক্রমণ। সুতরাং প্রথমে চুলকানির কারণ খুঁজতে হবে এবং করতে হবে চিকিৎসা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নন–প্যাথলজিক্যাল বা রোগবালাই ছাড়াই চুলকানি হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। চুলকানির ধরন বুঝে যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করবেন, তা জেনে রাখুন।
শুষ্ক ত্বক: শীতকালে যেকোনো বয়সীর এবং বছরের যেকোনো মৌসুমে বয়স্কদের ত্বক থেকে পানি বের হওয়ার পর শুষ্ক হয়ে যায়। আর তখন শুরু হয় চুলকানি। এ ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা ক্রিম লাগাতে হবে। অলিভ অয়েল চামড়ার জন্য ভালো ময়েশ্চারাইজার।
মশা বা পোকার কামড়: মশার কামড় মানেই চুলকানি। তবে অনেক সময় খুব বেশি চুলকায়। এ ক্ষেত্রে আইসপ্যাক বা অ্যান্টি–ইচ ক্রিম লাগানো যায়।
আরো পড়ুন:
পায়ের নখ দেখলেই বুঝা যাবে কোলেস্টেরলের পরিমাণ
নখের সাদা দাগ কীসের ইঙ্গিত দেয়?
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া ৭ উপায়
দাঁতের শিরশিরানি সারাতে যা করবেন
রোদে পোড়া: অনেকক্ষণ রোদে থাকলে চামড়া লাল হয়ে যায় এবং অস্বস্তিকর চুলকানি শুরু হয়। ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে ফেললে বা গোসল করলেই এটি চলে যায়।
গরম পানি দিয়ে গোসল: গরম পানি দিয়ে গোসলের পর অনেকের শরীর চুলকায়। সে ক্ষেত্রে গরম পানি দিয়ে গোসল না করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে করতে হবে।
খাবারের অ্যালার্জি: অনেকের অনেক খাবারে অ্যালার্জি থাকে, যেমন চিংড়ি, গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি। এসব খাবার খাওয়ার পর মুখের চামড়া অথবা পুরো শরীর চুলকাতে পারে। এ সময় অ্যান্টি–হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খেতে হবে এবং এসব খাবার পাতে তোলা যাবে না।
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস: রাবার, ধাতব পদার্থ, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, পাউডার ও সিনথেটিক কাপড় স্পর্শ করলে অনেকের অ্যালার্জি বা চুলকানি হয়। তাই নিজেই খুঁজে বের করতে হবে কী থেকে ডার্মাটাইটিস হচ্ছে। খুঁজে বের করার পর সেই পদার্থ বা বস্তু পরিহার কিংবা সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। চুলকানি শুরু হলে হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম ব্যবহার করুন। অনেকের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তেমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চুলে খুশকি ও উকুনের সংক্রমণ: চুলে খুশকি হলে অথবা উকুনের সংক্রমণ হলে অনেক বেশি চুলকায়। অ্যান্টি–ড্যানড্রাফ ও অ্যান্টি–লাইস শ্যাম্পু ব্যবহার এর প্রতিকার।
রোগের কারণে চুলকানি ও করণীয়
চামড়ার রোগগুলোই প্রধানত চুলকানির কারণ। স্ক্যাবিস, একজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো রোগে অনেক বেশি চুলকানি হয়। চামড়ায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকের সংক্রমণ টিনিয়া বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চামড়ায় এ ধরনের রোগ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন করতে হবে। সব সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে।
চামড়ার সংক্রমণ ছাড়া চুলকানি হতে পারে, যেমন লিভারের সমস্যা অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসে রোগীর শরীর এত বেশি চুলকায় যে রোগী ঘুমাতেই পারে না এবং সারা শরীরে নখের আঁচড় দেখা যায়। কিডনি রোগী, যাঁরা ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান, তাঁরাও চুলকানিতে ভোগেন। রক্তশূন্যতা, রক্তের ক্যানসার লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়োলোমা, পলিসাইথেমিয়া রুবরা ভেরা—এসব রোগেও চুলকানি হয়।
ডায়াবেটিস, হাইপো ও হাইপারথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও চুলকানি দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় চুলকানি সাধারণ সমস্যা। এ সময় অনেক ধরনের অ্যান্টি–হিস্টামিন ওষুধ দেওয়া যায় না।
দীর্ঘ সময় চুলকানি থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। চামড়ায় আঁচড়ের দাগ পড়ে, ক্ষত তৈরি হয়। অনেক সময় রক্ত বের হয়। সুতরাং চুলকানি হলে না চুলকিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।