
গর্ভকালীন সময়ে লো লায়িং প্লাসেন্টা বা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া!
- রেজবুল ইসলাম
- মার্চ ২১, ২০১৮
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল তৈরি হয়, যা জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে লেগে থাকে। মা ও ভ্রূণের যোগাযোগ এই গর্ভফুলের মাধ্যমে হয়। প্লাসেন্টা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা গর্ভের সন্তানকে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ এবং শিশুর রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটা জরায়ুর দেয়ালের সাথে সংলগ্ন থাকে এবং শিশুর আম্বিলিক্যাল কর্ড এর থেকেই সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা জরায়ুর শীর্ষভাগে অথবা পাশে অবস্থান করে । কিন্তু গর্ভফুলটি যদি জরায়ুর একদম নিচের দিকে বা জরায়ুমুখে লেগে থাকে, তাহলে এই মেডিকেল কন্ডিশনকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা লো লায়িং প্লাসেন্টা বলে। প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তানের মাথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরের দিকে বা আড়াআড়ি থাকতে দেখা যায় , এ অবস্থানকে বলা হয় ব্রীচ পজিশন। এবং এ সমস্যায় সাধারণত গর্ভবতী নারীরা স্পটিং বা হালকা থেকে ভারী রক্তপাতের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। কিন্তু এ রক্তপাতের সময় কোন ব্যথা অনুভূত হয় না এবং রক্তের রং থাকে উজ্জ্বল লাল।
এমতাবস্থায় কী করা উচিৎ?
যদি ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ড এ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ধরা পরে তাহলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। সময় বাড়ার সাথে সাথে টা জরায়ুর মুখ থেকে সরে যেতে পারে এবং আর কোন সমস্যার সৃষ্টি না ও করতে পারে। যেহেতু প্লাসেন্টা জারায়ুর সাথে সংযুক্ত থাকে তাই তা অবস্থান পরিবর্তন করেনা। জরায়ুর আকার বাড়ার সাথে সাথে তা মুখ থেকে দূরে চলে যায়। আর যেহেতু প্লাসেন্টা আকারে বাড়ে তাই সম্ভাবনা বেশী যে তা জারায়ুর উপরের দিকে বাড়বে যেখানে রক্ত সরবরাহ বেশী থাকে। যদি দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার আপনার প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা লো লায়িং প্লাসেন্টা পাওয়া যায় তাহলে তৃতীয় ট্রাইমেস্টার এ আবার ফলোআপ করা হবে। যদি এ সময়ে আপনার যোনি পথে রক্তক্ষরণ হয় তবে আলট্রাসাউন্ড করে দেখার পরামর্শ দেয়া হবে। খুব কম মায়েদের ক্ষেত্রেই শিশুর জন্মের সময় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকে যাদের ২০ সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ড এ মারজিনাল প্রিভিয়া পাওয়া যায়। টোটাল বা কমপ্লিট প্রিভিয়ার ক্ষেত্রে প্রসবের সময় ও তা একই অবস্থায় থাকে। সাধারণত প্রতি ২০ জনে ১ জনের লো লায়িং প্লাসেন্টা থাকে।
যদি ফলোআপ আলট্রাসাউন্ড এ আপনার প্লাসেন্টা প্রিভিয়া পাওয়া যায় তাহলে আপনাকে বিশ্রাম এর পরামর্শ দেয়া হবে। এ সময় শারীরিক মিলন বা জার্নি করতে মানা করা হয়। এমনকি যোনি পথের কোন ধরনের পরীক্ষা ও করা হয়না। সবধরনের ভারী কাজ এ সময় নিষিদ্ধ যেগুলোর কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রসবের সময় সি-সেকশন করতে হয় কারণ প্লাসেন্টা আপনার জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখে। প্রসবের সময় মারজিনাল প্লাসেন্টা থাকলে ও সি-সেকশনের পরামর্শ দেয়া হয় কারন জরায়ুর মুখ বড় হওয়ার সাথে সাথে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ধরনের লো লায়িং প্লাসেন্টার ক্ষেত্রে তৃতীয় ট্রাইমেস্টার এ আপনার ব্যাথাহীন রক্তপাত হতে পারে। এ অবস্থায় আপনাকে হসপিটালে ভর্তি হতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে আপনি গর্ভধারণের কোন পর্যায়ে আছেন, রক্তপাতের পরিমান এবং আপনি ও শিশুর অবস্থার উপর। যদি আপনি গর্ভধারণের ফুল টার্ম এ থাকেন তবে তৎক্ষণাৎ সি-সেকশন এর মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।