
প্যাপ টেস্ট - জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্নয় করে !
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- নভেম্বর ১৩, ২০১৭
প্যাপ টেস্ট আসলে কি ?
প্যাপ টেস্টের আরেক নাম প্যাপ স্মেয়ার। জরায়ু মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ দেখার জন্য চিকিৎসকেরা এই পরীক্ষা করে থাকেন। জরায়ু এবং যোনিপথের সংযোগস্থল হল জরায়ু মুখ। এটি জরায়ুর নিম্ন প্রান্ত। প্যাপ টেস্ট করার জন্য চিকিৎসকরা হাঁসের ঠোটের মত দেখতে স্পেকুলাম নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করে যোনিপথের দেয়াল প্রসারিত করেন। এরপর অন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করে যোনিমুখ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়। এরপর পরীক্ষাগারে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে সেই টিস্যু পরীক্ষা করা হয় কোনও অস্বাভাবিকতা আছে কিনা। অবশ্য স্পেকুলাম ব্যবহার করা মানে এই নয় যে প্যাপ টেস্ট করা হচ্ছে।
প্যাপ টেস্টের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ, এমন কোষ যা পরে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হতে পারে, শনাক্ত করা যায়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত ক্যান্সার রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্যও লাভ করা যায়।
কখন প্যাপ টেস্ট করবেন ?
একজন ২১ বছর বয়সী নারীর প্যাপ টেস্ট করানো উচিত। যখন একজন নারীর বয়স ৩০ হবে চিকিৎসক তাকে জরায়ু মুখ ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য একটি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন, এর নাম এইসপিভি পরীক্ষা।
প্যাপ টেস্টের জন্য প্রস্তুতি ?
প্যাপ টেস্টের জন্য বিশেষ কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। অনেক নারী মনে করে থাকেন যে প্যাপ টেস্ট এর ২ দিন আগে থেকে যৌন সহবাস পরিহার করতে হয় বা যোনিপথে কিছু ঢুকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আদতে এর কোনও প্রয়োজন নেই। যারা সম্প্রতি সহবাস করেছেন বা যোনিপথে ক্রিম বা পিচ্ছিল কারক ব্যাবহার করেছেন তাদের ক্ষেত্রেও প্যাপ টেস্ট ঠিকভাবে কাজ করে। এমনকি পরীক্ষার দিন যদি পিরিয়ড চলে তাহলেও ঘাবড়ানোর কিছু নাই। যদি রক্তপাত বেশি হয় তাহলে চিকিৎসককে বলে পরীক্ষার দিন পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো হবে।
একজন নারীর কতবার প্যাপ টেস্ট করা প্রয়োজন?
একজন নারীর বয়স এবং পূর্ববর্তী প্যাপ টেস্ট এর ফলাফলের উপর নির্ভর করে এটা ঠিক করা হয়।
– ২১ থেকে ২৯ বয়স পর্যন্ত প্রতি ৩ বছরে ১ বার করে করা উচিত।
– ৩০ বছর বা এর ঊর্ধ্বে প্রতি ৩ বছরে ১ বার প্যাপ টেস্ট বা প্রতি ৫ বছরে একটা প্যাপ টেস্ট এবং একটি এইসপিভি করা যেতে পারে।
– ৬৫ বছর বা এর চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের পরীক্ষার প্রয়োজন নেই যদি তারা নিন্মোক্ত ৩টি শর্ত পূরণ করে থাকেনঃ
> নিয়মিতভাবে প্যাপ টেস্ট করেছেন ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত।
> পরপর ৩ বার প্যাপ টেস্ট এর স্বাভাবিক ফলাফল
> বিগত ১০ বছরে কোনও অস্বাভাবিক ফলাফল আসেনি।
HPV এইসপিভি প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে কি প্যাপ টেস্ট করতে হবে?
হ্যাঁ, করতে হবে। HPV প্রতিষেধক হল “Human Papilloma Virus” এর প্রতিষেধক। এটি জরায়ু মুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এই প্রতিষেধক এর জন্য ভাইরাসটির আক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায় কিন্তু এর মানে এই নয় যে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে।
যদি প্যাপ টেস্ট এর ফলাফল অস্বাভাবিক আসে সেক্ষেত্রে কি করতে হবে?
প্রথমত, জানা প্রয়োজন যে অস্বাভাবিক ফলাফল একটি সাধারণ ঘটনা। এটি একটি প্রাথমিক পরীক্ষা এবং অনেক নারীর ক্ষেত্রেই ক্যান্সার রোগ না থাকলেও অস্বাভাবিক ফল আসে। অস্বাভাবিক কোষ পেলে চিকিৎসক আরও কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেন আসলে কি হতে যাচ্ছে। নারীর বয়স এবং প্যাপ টেস্ট এর ফলাফল অনুসারে চিকিৎসক এইসপিভি বা HPV পরীক্ষা করে থাকেন প্যাপ টেস্ট এর জন্য সংগৃহীত নমুনা থেকে। এই পরীক্ষার ফলে জানা যায় কোন ধরণের HPV ভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হয়েছে যা ক্যান্সার রোগ করতে পারে।
তথ্য এবং ছবি : গুগল