ব্রেইন স্ট্রোক হবার পূর্বাভাস। এর লক্ষণ ও করণীয়
- রেজবুল ইসলাম
- এপ্রিল ২২, ২০১৮
যদি সহজ বাংলায় বলা হয় তবে টি,আই,এ হলো সাময়িক ব্রেইন স্ট্রোক (brain stroke )। ব্রেইন স্ট্রোক হলে যে উপসর্গগুলো মাসের পর মাস কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়, টি,আই,এ হলে তার উপস্থিতি থাকে মিনিটখানেকের জন্য, কখনো সখনো হয়তোবা পুরো একদিন।
কী হয় এ সময়?
কারো টি,আই,এ হলে তিনি হঠাৎ করে সাময়িক ভাবে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলতে পারেন এমনকি কিছু সময়ের জন্য ভারসাম্য হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাও এর আওতার মধ্যেই পরে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই হঠাৎ দৃষ্টি হারিয়ে ফেলা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের একপাশ অবশ বা দূর্বল হয়ে যাওয়া, জীহবা (tongue) ভারী ভারী লাগা এসব লক্ষনের মধ্যে টি,আই,এ সীমাবদ্ধ থাকে। রোগী এই মুহুর্তগুলোর পর আবার সতস্ফুর্ত ভাবেই স্বাভাবিক হয়ে উঠেন।
কারা আক্রান্ত হতে পারেন?
সাধারণত যাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ (Hypertension), ডায়াবেটিস (diabetes) থাকে, কিংবা যারা নিয়মিত ধুমপান করেন, যাদের পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস আছে এমন লোকজনই টি,আই,এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে পুরুষদের বয়স ৫৫ এর বেশী হলে এ রোগের প্রবণতার হার বেড়ে যেতে পারে।
কেন হয়?
যে সকল কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হয় তার সবগুলোই টি,আই,এ হওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে মস্তিস্কের রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া হলো এর প্রধান কারণ। ধুমপান, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে চর্বির (Lipid) পরিমান বেড়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ক্রনিক ডায়াবেটিস, অপরিমিত শারীরিক / কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদি কারণেই সাধারনত মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড অথবা শরীরের অন্য কোন স্থানের রক্তনালী সরু হয়ে যেতে পারে। এই অসুস্থ রক্তনালীর কোন অংশ থেকে ছুটে আসা কোন ক্ষুদ্র দুষিত অংশ (embolus) ছুটে এসে যদি ব্রেইন এর ধমনী/রক্তনালী তে আটকে যায় তাহলেই টি,আই,এ হয়। তবে হৃদপিন্ডের অনিয়মিত স্পন্দন জনিত রোগ (arrhythmia, atrial fibrillation) এর কারনেও টি,আই,এ হতে পারে।
করণীয় কী?
এমন রোগে আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিষ্ট (neurologist)এর স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। রোগীর ইতিহাস জেনে এবং কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিনি নিশ্চিত হতে পারেন রোগটি টি,আই,এ কিনা। তবে এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য এবং ভবিষ্যতে এর প্রকোপ থেকে মুক্তির জন্য ব্রেইন এর সিটি স্ক্যান (CT scan), এম,আর,আই (MRI), ই,সি,জি (ECG), ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram), রক্তে চর্বির পরিমান জানা (Lipid profile) অন্যান্য পরীক্ষাও করানো হয়ে থাকে। টি,আই,এ হলে প্রথমেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বির পরিমান খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হয়। সেই সাথে রোগীকে রক্ত পাতলা রাখার প্রয়োজনীয় কিছু অসুধ ও প্রদান করা হয়। তবে এ সব কিছুই একজন নিউরোলজিষ্টের এখতিয়ারে পরে, তিনিই এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তবে কোনো ক্ষেত্রে বার বার টি,আই,এ/স্ট্রোক হবার ঝুকি থাকলে মস্তিস্কের রক্তপ্রবাহের ধমনীর (carotic artery) অপারেশন (carotid endarterectomy)ও করানোর প্রয়োজন হতে পারে।