শরীরে পানি কেন জমে? জমলে কী করবেন?
- আল আমীন
- মে ৪, ২০১৮
বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় যে, আমাদের কারো হাতে পায়ে কিংবা শরীরের কোথাও পানি জমে। এতে অনেকে ভয় পায়। কেন কীভাবে কী হয়েছে, সেটা না জানা এবং আতঙ্কের কারণে অনেকে অনেক ভুলও করে ফেলি, যেটা অনেক সময় মারাত্মক বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু কেন এমন হয়? এমন হলে কী করবেন? সেটাই জানার বিষয়।
নানান কারণে শরীরে জমতে পারে পানি। ফুলে যেতে পারে পা, হাত, মুখমণ্ডল। শরীরে পানি জমে গেলে সব সময়ই ঔষধ প্রয়োজন হয় না। বা ঔষধে কাজও হয় না। বরং শরীরের পানি কমানোর জন্য যেসব ঔষধ সেবন করা হয়, সেগুলোই পানি জমার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে আপনার দৈনন্দিন জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা। প্রতিনিয়ত আপনার অভ্যাসের একটি দুইটি করে ভুল, আস্তে আস্তে বড় বিপদের দিক নিয়ে যেতে পারে। শরীরে পানি জমাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এডিমা বলে। খেয়াল করছেন তো আপনার দৈনন্দিন জীবনে কতটা সচেতন আপনি? চলুন জেনে নিই শরীরে পানি জমার কারণ ও প্রতিকার:
১। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে:
আজকাল ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা এক জায়গায় বসে কাটিয়ে দেই বা দিতে পারি অনায়াসেই। কম্পিউটার বা মোবাইল নিয়েই বসে বসে কেটে যায় কত সময়। অথচ আপনি জানেন কি? অনেক বেশি সময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে রক্ত সংবহন কমে যায়। যার ফলে শরীরে পানি জমতে পারে। এখনই সচেতন হওয়া উচিত। এটি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক সক্রিয়তা। একাধারে অনেক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটাহাঁটি করুন। প্রতি ২-৩ ঘন্টার মধ্যে ওয়াশরুমে ঘুরে আসুন।
২। পর্যাপ্ত পানি পান না করা:
পরিমাণমত পানি পান করছেন তো? শরীরে পানি আসার সাধারণ একটি কারণ হচ্ছে, কম পানি পান করা। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে ইলেক্ট্রোলাইট এর লেভেল বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীরে পানি জমে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আপনি মাত্রাতিরিক্ত পানি পান করবেন। সেক্ষেত্রে আবার উল্টা প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। দিনে সাধারণত ৩-৪ লিটার পানি পান করাই যথেষ্ট।
৩। স্বাস্থ্যগত সমস্যা:
কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, কিডনি রোগ, লিভার ইনফেকশন অথবা ব্রেইন টিউমারের কারণেও এডিমা (পানি জমার সমস্যা) হতে পারে। কমবেশি অনেক গর্ভবতী মহিলাদেরও শরীরে পানি আসে। আপনার যদি এই ধরণের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে সতর্ক হোন, দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
৪। ঔষধ:
ঔষধ যে আমাদের শরীরে কেবল রোগ সারায়, তা কিন্তু নয়। প্রত্যেক ঔষধেরই কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তেমনই কিছু কিছু ঔষধের প্রতিক্রিয়াতেও শরীরে পানি কমতে পারে। যেমন, উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ এম্লোডিপিন সেবনের ফলে পানি আসতে পারে। এছাড়াও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষুধ এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল সেবনের কারণেও এডিমা বা পানি জমা সমস্যা হতে পারে। তবে যেকোনো ঔষধ বাদ দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫। লবণ বেশি খাওয়া:
শরীরে পানি জমার আরেকটি কারণ হচ্ছে অত্যাধিক লবণ খাওয়া। সোডিয়াম পানিকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং শরীরে কোষের ভেতরের ও বাইরের তরলের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। উচ্চমাত্রার সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন, প্রসেসড ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খাবারের সাথে বাড়তি লবণ গ্রহনের অভ্যাস বদলে ফেলুন।আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ উপাদান হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম। শরীরের অতিরিক্ত পানি জমার সমস্যাটি কমানো যায় ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে। দৈনিক ২০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে মেয়েদের শরীরে পানি আসার সমস্যা কমে। বাদাম, ডার্ক চকোলেট, হোল গ্রেইন ও সবুজ শাকসবজিতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
আর/এস