
রোযা রেখেও গর্ভবর্তী মায়েরা থাকতে পারবেন সুস্থ্য, যদি…
- আল আমীন
- মে ১০, ২০১৮
দেখতে দেখতে প্রতিবারের মতো আবারও চলে এসেছে পবিত্র মাস রমযান। হবু মায়েদের অনেকেই চিন্তায় আছেন এ রমযানে রোযা রাখবেন কিনা। ঠিক বুঝতেও পারছেন না যে, কীভাবে কী করবেন। রোযা রাখলে নিজের কোনো সমস্যা হবে কিনা, শিশুর ওজন কমে যাওয়া বা অন্য কোনো সমস্যা হবে কিনা। অনেকে সাহস পাচ্ছেন না রোযা রাখতে, আবার অনেকে নিজে চাইলেও আপনজনেরা নিষেধ করছেন এ অবস্থায় রোযা রাখতে।আর দ্বিধা নয়। আসুন, জেনে নিন কী করবেন।
গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখতে সাধারণত কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তিনি রোজা রাখতে পারেন, তবে তাঁর নিজের এবং গর্ভের সন্তানের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মা ও তাঁর গর্ভের সন্তানের কোনো সমস্যা না হলে, মা রোজা রাখতে পারেন অনায়াসেই। আর রোযা যদি রাখেনই তাহলে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে কিছু বিষয়ে। যেমন, গর্ভধারণকালের প্রথম তিন মাস সাধারণত কারো কারো অতিরিক্ত বমি হয়। যেহেতু মুখভর্তি বমি হলে রোযা ভেঙে যায়, তাছাড়া অতিরিক্ত বমিতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই এমন অবস্থায় সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যেহেতু গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর থেকে সাধারণত বমির সমস্যা কমে আসে। তাই এ অবস্থায় রোজা রাখতেই পারেন। তবে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক আছে কিনা, কিংবা আগের চেয়ে নড়াচড়া কমে যাচ্ছে কিনা। যদি দেখেন দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকায় গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া কমে যাচ্ছে, তাহলে আপনার জন্য রোযা না রাখাই ভাল হবে।
গর্ভাবস্থায় রোযা রাখতে চাইলে যা করবেন: গর্ভাবস্থায় রোযা রাখতেই পারেন, যদি আপনি সেভাবে সচেতন থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আগে নিশ্চিত হতে হবে আপনি শারিরীক এবং মানসিকভাবে পুরপুরি ফিট আছেন কিনা। তাই রোযা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সর্বপ্রথম একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন। তিনিই আপনার সর্বাবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
পরীক্ষা করে নিন ডায়াবেটিস, অ্যানেমিয়া আছে কিনা। ডায়াবেটিস যদি থেকে থাকে তবে রোজা রাখাকালীন রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে তখন গর্ভবতী মা ও শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এছাড়া অ্যানেমিয়া আক্রান্ত মায়েরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন, তাই অতিমাত্রায় অ্যানেমিয়া আক্রান্ত মায়েদের গর্ভাবস্থায় রোজা না রাখাই ভাল। সব কিছু ঠিক থাকলে তৈরি করে নিন ডায়েট প্ল্যান। আর এ ক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তাতে রোযা অবস্থায় মায়ের পুষ্টি মান অটুট থাকবে।
গর্ভাবস্থায় রোযা রাখলে কী করবেন?
এতক্ষণ তো গেল রোযা রাখার প্রস্তুতির পালা। এবার রোজা রাখার পর কী করবেন, সেটা জেনে নেয়া যাক।ইফতারের সময় একবারেই অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলবেন না। যেহেতু রোযা রাখার ফলে পরিপাক ক্ষমতা ধীর হয়ে যায়, তাই একবারে বেশি খেয়ে ফেললে পরিপাকজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সুতরাং শুরুতে ছোট এক গ্লাস ফলের রস বা পানি পান করতে পারেন। এরপর অল্প অল্প করে অন্য খাবার খেতে পারেন। কিছুক্ষণ পরপর বারবার অল্প করে খাবার খান। প্রচুর পরিমাণ তরল এবং পানি পান করুন। একবারে বেশি না খেলেও অল্প অল্প করে সেহরীর সময় শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত যথাসম্ভব খাবার গ্রহণ করুন। তবে বিশেষ করে সেহরীতে খাদ্য তালিকায় বেশি রাখবেন জটিল ধরণের শর্করা জাতীয় খাবার। এই ধরণের খাবার পরিপাক দীর্ঘ সময় লাগে এবং তা সারাদিন ধরে আপনার শক্তি সরবরাহে সাহায্য করবে।
খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে ডুবো তেলে ভাজা কিংবা চর্বিযুক্ত খাবার। আর খাবার শেষে সিরাপ নির্ভর খাবার যেমন- জিলাপী খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে এক বাটি তাজা ফলের সালাদ বা দই বড়া খেতে পারেন। চা বা কফি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়। যদি খালি পানি পান করতে একঘেয়ে লাগে তবে দুধ, দই, বরফ এবং ফলমূল দিয়ে তৈরী সালাদ খেতে পারেন।
রাতের খাবারের পর অবশ্যই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিবেন এবং তারপর বাকি কাজ। দিনের কাজগুলো পরিকল্পনা মাফিক করুন, যাতে আপনি নিয়মিত বিশ্রাম নিতে পারেন। দীর্ঘ পথ হাঁটা এবং ভারি কিছু বহন করা থেকে বিরত থাকুন। ঠান্ডা জায়গায় থাকুন। নাহলে খুব দ্রুত আপনার শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে, যা আপনার বা আপনার বাচ্চার জন্য ভাল নয়।
আরো সতর্কতা: বাচ্চার নড়াচড়া ১২ঘন্টায় ১০-১২বার হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। যদি শিশুর নড়াচড়া অনুভব না করেন। আপনার তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন যেমনটা মাসিকের সময় হয়ে থাকে। অনেক বিশ্রাম নেয়ার পরও আপনি যদি ঘুম ঘুম ভাব বা দুর্বলতা অনুভব করেন। যদি গা গুলিয়ে উঠে এবং বমি হতে থাকে। যদি আপনি প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করেন। জ্বর জ্বর ভাব থাকে। যদি খুব ঘন ও কম প্রস্রাব হয়।বুঝতে হবে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন। যদি বিকট গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয় । সেক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন এর সম্ভাবনা থাকে যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। এরকম কোনো সমস্যা দেখা দিলে যতদ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।