শিশুর প্রথম বাড়তি খাবার কি দেওয়া উচিত? এবং কখন দেওয়া উচিত?
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- মে ২১, ২০১৮
শিশুর ৬ মাস বয়সের পর বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারের প্রয়োজন । কারণ ৫ মাস বয়সের পর বাড়ন্ত শিশুর পুষ্টি ও বিকাশের জন্য সুষম খাদ্য উপাদান বিশিষ্ট খাবারের প্রয়োজন হয় । মায়ের দুধ সে প্রয়োজন মিটাতে যথেষ্ট নয়। তাই বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বাড়তি খাবার দেয়া দরকার।
অনেক নতুন মায়েরাই বুঝতে পারেন না শিশুকে কোন খাবার কখন, কিভাবে এবং কি পরিমানে দেবেন! দেখা যায় যে, অনেকে প্রথম শিশুর মুখে যে খাবারটা দেয়, সেটাই সে শিশু খাচ্ছে না। শিশুকে ৬ মাস থেকে বাড়তি কি খাবার, কখন এবং কিভাবে খাওয়ানো যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো -
বাড়তি খাবার কি?
শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ৬ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পরিবারের যে খাবার দেয়া হয় তাকেই পরিপূরক বা বাড়তি খাবার বলে।
শিশুর বাড়তি খাবার কেন প্রয়োজন?
শিশু অবস্থায় শিশুর শারিরীক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশ নির্ভর মায়ের দুধ পানের উপর এবং পূর্ণ ৬ মাস বয়সের পর মাতৃদুগ্ধের সাথে অন্যান্য বাড়তি খাবার খাওয়ার উপর।মানব জীবনের প্রথম বছরে পরবর্তী বছরগুলোর তুলনায় অতি দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর স্বাভাবিক অবস্থার ৬ মাস পূর্ণ হলে ৬ মাস বয়সের পর থেকে একমাত্র মায়ের দুধে শিশুর চাহিদা মেটে না। কাজেই শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই মায়ের দুধের পাশাপাশি তাকে বাড়তি খাবার দিতে হবে।
শিশুকে নতুন খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় বিষয়: ছোট শিশু একবারে বেশি করে খেতে পারে না। তাই তাদের বারে বারে অল্প করে খাবার দিতে হবে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে অতিরিক্ত পানি না থাকে। বিভিন্ন ধরনের খাবার হলে শিশু ভালভাবে গ্রহণ করবে এবং একঘেয়ে লাগবে না। শিশুকে নতুন খাবার দিতে হলে কতগুলো বিশেষ দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেমনঃ
- শিশুর শারীরিক অবস্থা, বয়স, ওজন ইত্যাদি।
- শিশুটির বয়সানুসারে শক্তি, আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন নির্ধারন করতে হবে।
- খাবারগুলো এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যেন তা সহজপাচ্য, পুষ্টিমান ও সহজলভ্য হয়।
- শিশুকে সাধারণতঃ বাবা মায়ের সংগে বসিয়ে খাওয়াতে হবে, ফলে সে খাবারে উৎসাহ পাবে। শিশুকে কোন খাবারের জন্য জবরদস্তি করা যাবে না। শিশু ক্ষুধার্ত হলে আপনা আপনি খাবে।
- শিশু নুতন খাবার কতটা হজম করতে পারলো তা বোঝা যাবে তার মল দেখে ও ওজন বৃদ্ধির রেকর্ড থেকে (শিশুর ক্রমবৃদ্ধির চার্ট বা কার্ড এর মাধ্যমে)।
- শিশুর খাবার বিশুদ্ধও নিরাপদ হতে হবে।
- একই ধরনের খাবার প্রতিদিন না দেয়া ভাল। শিশুর খাবার পরিমাণে অল্প তবে প্রয়োজনীয় ক্যালরী সমৃদ্ধ হতে হবে।
পূর্ণ ৬ মাস বয়সে শিশুর বাড়তি বা পরিপূরক খাবার : পূর্ণ ৬ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত খাবার পরিপূরক হিসাবে শিশুর জন্য প্রযোজ্য সেসব খাবারের কিছু কিছু উল্লেখ করা হলোঃ
১. আলু সিদ্ধ ও ডাল চটকিয়ে
২. ডালে বা দুধে ভেজানো রুটি
৩. ফলের রস ও চটকানো ফল (দেশীয় ফল যেমন কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা, আম, আনারস ইত্যাদি)
৪. দুধের পায়েস বা দুধ দিয়ে রান্নাকরা সুজি
৫. নরম সিদ্ধ ডিম
৬ ভাত, মুড়ি, চিড়া, দুধ দিয়ে নরম করে মেখে
৭. শাক-সব্জি, চাল, ডাল ও তেল দিয়ে নরম খিচুড়ি রান্না করে
৮. টমেটো, মটরশুটি, ফুলকপি, সীম ও অন্যান্য শাকসব্জি ভাল করে সিদ্ধ করে চটকিয়ে
৯. পরিমাণে স্বাভাবিক খাবার। কিন্তু তাতে ঝালও মসলা কম হতে হবে
১০. এ সমস্ত খাবারের সাথে রান্না করা মাছও চটকিয়ে দেয়া যায়
১১. খাবারের সাথে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে
সময়মত পরিপূরক খাবার না দিলে কি সমস্যা হতে পারে?
উপযুক্ত পরিপূরক বা বাড়তি খাবার যদি বেশি দেরী করে শুরু করা হয় তাহলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিশু পুষ্টিহীণতায় ভোগে, যার ফলে বাকি জীবনের উপর নানা রকম প্রভাব ফেলে। ফলে বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত উপসর্গ দেখা দেয়।
কতক্ষন পর পর দিতে হবে খাবার?
প্রথম সপ্তাহে সারাদিনে একবারই দিন। দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ বার। এভাবে আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে। এক সাথে কয়েক ধরনের খাবার কখনই দেবেন না। একটি খাবার দেয়ার ৩/৪ দিন পর অন্য একটি খাবার দিন। কোন শিশুই নিজে খেতে পারে না। তাই তাকে খাওয়া শিখাতে হবে। প্রথম এক দুইবার দেয়ার পর সে যদি না খায় হাল ছেড়ে না দিয়ে আস্তে আস্তে দিতে হবে।
তথ্য এবং ছবি : গুগল