পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর কিছু পদ্ধতি (ভিডিও সহ )
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- নভেম্বর ২২, ২০১৭
পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা খুব সাধারন একটি ঘটনা । কিন্ত ব্যথা যদি খুব তীব্র হয় এবং দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে তাহলে কিন্ত চিন্তার বিষয় । পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে । আসুন জেনে নিই সেই পদ্ধতিগুলো কি কি ?
পদ্ধতি ১ : গরম সেঁক
হট ওয়াটার ব্যাগে (আপনি যেকোনো ফার্মেসিতে পাবেন ) গরম পানি নিয়ে অথবা একটি বোতলে গরম পানি নিয়ে তলপেটে সেঁক দিতে হবে । এতে ব্যথা অনেক কমে আসবে । এই কাজটি সাপ্তাহে ৩-৪দিন করবেন । অনেকে কিছুটা কনফিওজ হয়ে যায় সাপ্তাহের ৩-৪দিন নিয়ে । তাদের প্রশ্ন - পিরিয়ডের আগের ৩-৪দিন অর পরে ? অত্তর হচ্ছে প্রতি সাপ্তাহে ৩-৪দিন । এতে করে পিরিয়ডের সময় ব্যথা ধীরে ধীরে কমে আসবে ।
পদ্ধতি ২ : সিজ বাথ
প্রথমে ৩ মিনিট গরম পানিতে কোমর ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে এবং পরের ২মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে । এভাবে ২০-২৫ মিনিট করে সিজ বাথ নিতে হবে । সিজ বাথও সাপ্তাহে ৩-৪বার করে নিবেন । পানিতে কিছু লবন, বেকিং সোডা বা ভিনেগার ব্যবহার করে নিতে পারেন ।
পদ্ধতি ৩ : কেজেল ব্যায়াম
কেজেল ব্যায়াম/কেজেল এক্সারসাইজ/ কেজেল এক্সারসাইজ (Kegel Exercises) প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং শ্রোণী এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। এখানে কেজেল ব্যায়াম সঠিক ভাবে করার জন্য একটা ভিডিও দেওয়া হলো । কেজেল ব্যায়াম শ্রোর্ণী মেঝের পেশীকে দৃঢ এবং শক্তিশালী করে যা জরায়ু, মূত্রথলি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। আপনি প্রায় যে কোনো সময়ে শুয়ে বা বসে কেজেল ব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি গর্ভবতী অবস্থায়ও করা যেতে পারে।
কেজেল ব্যায়ামের উপকারিতা :
অনেক সময় আপনার শ্রোর্ণী মেঝের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসব, বয়স বৃদ্ধি, এমনকি মুটিয়ে গেলে বা ওজন বৃদ্ধি পেলেও এমন হতে পারে। এ কারণে শ্রোণী অঙ্গ থেকে যোনির অনেক পেশী ঢিলা হয়ে নিচের দিকে নেমে যেতে পারে। এতে প্রস্রাবের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়া সহ আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
কেজেল ব্যায়াম কিছু অবশ্যম্ভাবী ঘটনাকে বিলম্বিত করে, শ্রোর্ণী অঙ্গ স্থানচ্যুতি এবং সম্পর্কিত উপসর্গ প্রতিরোধ করে আপনার তারুণ্য অনেকদিন ধরে রাখতে পারে। এছাড়া যাদের চরমপূলক লাভে সমস্যা হয় তাদের জন্যও এটা উপকার হতে পারে।
কিভাবে কেজেল ব্যায়াম করতে হয়- সেটা জানার আগে আপনার শ্রোর্ণী মেঝের পেশী চিহ্নিত করে নিতে হবে এবং কিভাবে পেশী সংকোচন এবং প্রসারণ করতে হয়।
প্রথমে পেশী খুঁজে নিতে হবে। যোনির ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে পার্শ্ববর্তী পেশীগুলো সংকুচন করার চেষ্টা করুন। আপনার যোনি আঁটা এবং আপনার শ্রোর্ণী মেঝের পেশীগুলো ঊর্ধ্বাভিমুখী মনে হবে। তারপর পেশী শিথিল করে দিন। দেখবেন শ্রোণীপেশীগুল আবার আগেরঅবস্থানে ফিরে এসেছে।
প্রস্রাব করার সময় দু-একবার প্রস্রাব করার প্রবাহ বন্ধ করে দিন। সফল হলে বুঝলেন প্রাথমিক ধাপটা পার হতে পারছেন। (প্রস্রাব করার প্রবাহ বন্ধ করাটা বার বার বা অভ্যাসে পরিনত করবেন না।) মূত্রথলি পরিপূর্ণ অবস্থায় বা প্রস্রাব করার সময় কেজেল ব্যায়াম করবেন না। এতে পেশী আরো শিথিল হয়ে যাবে বা প্রস্রাব করা অপূর্ণ থেকে যাবে যা মূত্রনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
এবার পূর্ণ পদ্ধতি। শ্রোণী এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর অবস্থান নির্ণয় করা হয়ে গেলে বা বুঝতে পারার পর মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি করবেন। তারপর চেয়ারে বসে বা মেঝে/বিছানায় শুয়ে পড়বেন। পেলভিস মাসল সংকুচন করুন। ৫ সেকেণ্ড ধরে রাখুন। ৫ সেকেণ্ড পরে শিথিল করে দিন। এভাবে একটানা ৪/৫ বার করুন। এভাবে ধীরে ধীরে ৫ সেকেণ্ডের জায়গায় ১০ সেকেণ্ড করে করার চেষ্টা করুন।
শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক ভাবেও পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য শুধু পেলভিস মাসলের উপরই মনোযোগ দেবেন। খেয়াল রাখবেন- পেটের পেশী, উরু, নিতম্বের পেশীতে যেন টান না পড়ে বা সেগুলো সংকুচিতনা হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস ধরে বা বন্ধ রাখবেন না। স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস নেন, এই ব্যায়ামের সময়ও সেভাবে নেবেন।
ব্যায়ামটি ১০ বার পুনরাবৃত্তি করে ৩ টি সেট করবেন এবং দিনে ৩ বার করার চেষ্টা করবেন। এজন্য আলাদা সময়ের দরকার নাই। অন্যান্য কাজের ফাঁকেই এটা করতে পারেন। যেমন কম্পিউটারের কাজ করার সময় বা সোফায় বসে টিভি দেখার সময়, বিছানায় গড়াগড়ি দেয়ার সময়।
যদি একাগ্রতার সাথে সঠিক ভাবে কেজেল ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন। আর ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হবে না। সেক্সের সময় যোনি মধ্যে ব্যথা কমে যাবে, বেশীক্ষণ মিলিত হতে পারবেন, মিলনে আগের চেয়ে বেশী সুখানুভূতি হবে। আরো অনেক সুবিধা পাবার জন্য এটা অব্যাহত রাখা উচিত।
ভিডিওতে দেখে নিন কেজেল ব্যায়াম
তথ্য, ভিডিও এবং ছবি : গুগল