সন্তান নেয়ার সঠিক সময় কখন!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • আগস্ট ১১, ২০১৮

ছেলেদের মতো মেয়েদেরও থাকে পড়াশোনা। আবার পড়াশোনা শেষে ভালো জবের আশা সবাই করে। এতো কিছুর মধ্যে সন্তান কখন নিবে এটা নিয়ে পড়েন অনেকে বিপাকে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সন্তান নেয়ার সুবিধা অনেক। এ কারণে ডাক্তার এবং অনেক গুরুজনেরা ২৫-২৬ বছর বয়সের দিকে প্রথম সন্তান নেয়ার পরামর্শ দেন। আপনার শরীর তখন অনেক নমনীয় থাকে এবং ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আপনি সবচেয়ে স্বাস্থ্যবতী অবস্থায় থাকেন। তখন আপনার শারীরিক সক্ষমতাও বেশি থাকে, যার ফলে আপনি তখন বাচ্চা লালন-পালনের চাপ ভালোভাবে সামাল দিতে পারেন।

দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের অনেক মেয়েই তাদের প্রথম বাচ্চা নেয় ১৭-১৮ বছর বয়সের দিকে, যখন তারা নিজেরাই শিশু থাকে। এই ব্যাপারটি নিরুৎসাহিত করা উচিত। মহিলারা প্রথম সন্তান তাড়াতাড়ি নিলে এরপর আবার দ্রুত গর্ভবতী হবার প্রবণতা দেখান। এতে অপুষ্টি এবং রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অল্প বয়সে সন্তান নিলে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের (cervical cancer) ঝুঁকি বেড়ে যায়। কম বয়সে বাচ্চা নেয়ার কারণে আপনি শিক্ষা, চাকরি বা ব্যবসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন অথবা এসব ক্ষেত্রে অন্যদের চাইতে পিছিয়ে পড়তে পারেন। মায়ের দায়িত্ব পালন করা তখন কঠিন মনে হতে পারে। কম বয়সে বাচ্চা নিলে প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় (postnatal depression) ভোগার ঝুঁকিও অনেক বেশি থাকে।

আজকাল অনেক মহিলাই ৩০ বছর বয়স বা তারও পরে মা হবার কথা ভাবেন। নির্ভরযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, গর্ভকালীন এবং প্রসবোত্তর উন্নত যত্ন, এবং ঢাকার হাসপাতালগুলোর কার্যকরী নবজাতক পরিচর্যা ইউনিট (neonatal intensive care units ) এবং ফার্টিলিটির উন্নত চিকিৎসা (fertility treatments) ব্যবস্থার সুবাদে আপনিও (ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের মত) ৩৫ বছর বয়সে বাচ্চা নেয়ার কথা ভাবতে পারেন। পৃথিবীর সবখানে সেলিব্রিটিরা ৪১ বছর বয়সে বাচ্চা নিচ্ছেন কোন রকমের সমস্যা ছাড়াই, এটা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।

মহিলারা সাধারনত ত্রিশের পর পেশাগত লক্ষ্যগুলো অর্জন করে একটি সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছে যান, যখন তাঁরা শিশুপালনে সময় দিতে পারেন। শিশুর যত্ন নেয়ার জন্য যেসব ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা করতে তারা তখন আগ্রহী থাকেন। তারা কম বয়সি মায়েদের মত নিজদেরকে জীবনের অন্যান্য দিকগুলো থেকে বঞ্চিত মনে করেন না। এছাড়া আর্থিক নিশ্চয়তা, শিক্ষা, এবং মানসিক স্বস্তি তাদেরকে ভাল মা হতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দিলে তারা স্কুলে বেশ ভাল করে এবং তাদের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।

তবে বাচ্চা নিতে দেরি করার কিছু ঝুঁকি আছে। তখন গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক মহিলারই তখন গর্ভধারণের জন্য বিশেষ চিকিৎসা (fertility treatment) এবং অনেকক্ষেত্রে কৃত্রিম নিষিক্তকরন (in vitro fertilisation -IVF) পদ্ধতির সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে বেশি বয়সে মায়েদের সিজারিয়ান সেকশনের (Caesarean section) দরকার হয় বেশি।

বেশি বয়সে মা হওয়ার আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গর্ভপাত, স্থানচ্যুত গর্ভধারণ (ectopic pregnancy), এবং স্বতপ্রনোদিত রক্তপাত (spontaneous bleeding) এর ঝুঁকি। ৩৫ বা ৪০ বছরের বেশি বয়সের মায়েদের সন্তানদের ক্রোমজমের অস্বাভাবিকতাজনিত সমস্যা যেমন ডাউনস সিণ্ড্রোমের সম্ভাবনা বেশি থাকে। মৃত শিশু জন্মানোর সম্ভাবনাও বেশি থাকে। এর কারণ হল বেশি বয়সের মেয়েদের জরায়ুতে বেশি সময় থাকার ফলে ডিম্বাণুগুলো বিষাক্ত পদার্থ (Toxin) এবং তেজস্ক্রিয়তার (Radiation) প্রভাবও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

কিন্তু তারপরও হতাশ হবার কিছু নেই। ভ্রূণ এবং ডিম্বাণু সংরক্ষন (embryo and egg freezing), কৃত্রিম নিষিক্তকরন পদ্ধতি (in vitro fertilisation), এবং কৃত্রিম প্রজনন (artificial insemination) পদ্ধতি এখন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে বহুল ব্যবহৃত। যদিও এগুলো ব্যয়বহুল চিকিৎসা, তারপরও আগে গর্ভধারণ করতে পারেননি এমন অনেক মহিলা এসব পদ্ধতির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।

যারা বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে চান তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে যে তারা যেন শরীরটাকে তরতাজা রাখেন। নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই জরুরী। অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার, (যেমন শাকসবজি ও ফলমূল) বেশি করে খান। মদ্যপানের অভ্যেস থাকলে কমিয়ে দিন এবং ধূমপান করলে তা এখনি বন্ধ করুন!

 

আর/এস

 

Leave a Comment