নিয়ন্ত্রনহীন প্রসাব এর জটিলতা

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮

অনিচ্ছাসত্বেও হাসলে, কাশলে বা বাথরুমে পৌঁছতে পারার আগেই হঠাৎ প্রস্রাব হয়ে যাওয়া ঠিক অসুখ নয়, এটা হল মূত্রাশয় বা মুত্রনালী সংক্রান্ত অসুখের একটি লক্ষণ। এই সমস্যা পুরুষ-নারী উভয়েরই হয় - বিশেষ করে বৃদ্ধবয়সে এই সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এই সমস্যা পুরুষদের থেকে মেয়েদের বেশি হয়। যদিও স্বাস্থ্যের দিক থেকে এটি গুরুতর সমস্যা নয়, কিন্তু মানসিক ভাবে এটি ভুক্তভোগীদের বিপর্যস্ত করতে পারে।

মানবদেহে প্রস্রাব তৈরি হয় বৃক্কে (kidneys)। সেখান থেকে এটি জমা হয় মূত্রাশয় বা মূত্রস্থলীতে (bladder)। সেখান থেকে একটি সরু নালী - মূত্রনালী (urethra) দিয়ে দেহ থেকে বার হয়। মূত্রস্থলী থেকে বেরোবার মুখে মূত্রনালীর চারিদিক পেশী দিয়ে ঘেরা থাকে (অনেকটা আংটির আকারে)। পুরুষদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী প্রস্টেটের মধ্যে দিয়েও যায়। মূত্রস্থলী যখন প্রস্রাবে পূর্ণ হয়ে যায়, তখন যতক্ষণ না পর্যন্ত নার্ভের মারফতে সংকেত আসে যে ততক্ষণ ঘিরে থাকা পেশী শক্ত হয়ে মূত্রনালীর ফুটো চেপে বন্ধ করে রাখে এবং মূত্রস্থলী ঢিলে বা শিথিল অবস্থায় থাকে। ফলে মূত্রস্থলী প্রস্রাব-পূর্ণ হলেও সেটি বাইরে বেরিয়ে আসে না। প্রস্রাব সুরু হবার সময়ে মূত্রস্থলী নার্ভের সংকেতে সংকুচিত হতে সুরু করে এবং মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশী শিথিল হয় - ফলে মূত্র বেরিয়ে এসে মূত্রস্থলী শূন্য হয়।

প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের অসুবিধা তখনই হয়, যখন হঠাৎ মূত্রস্থলী সংকুচিত হতে সুরু করে অথবা যখন সংকুচিত হওয়া উচিত তখন না হয়ে অত্যাধিক প্রস্রাবে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, যার প্রবল চাপে অনিচ্ছাসত্বেও মূত্র বেরিয়ে আসে। এছাড়া মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশী ঠিকমতো তার কাজ না করলেও এই সমস্যা হতে পারে।

অনেক সময়ে এই নিয়ন্ত্রণের সমস্যা হঠাৎ করে অল্প দিনের জন্য দেখা দেয়। এগুলি বিভিন্ন অসুখের জন্য হতে পারে এবং সেই অসুখের চিকিৎসা করলে এটি চলেও যায়। অন্য সমস্যা হল ক্রনিক সমস্যা - যেটি দীর্ঘস্থায়ী।

স্ট্রেস বা চাপ জনিত কারণে অনেক সময় এই সমস্যা দেখা দেয়। এটা সাধারণতঃ ঘটে যখন কোনো কারণে মূত্রস্থলিতে চাপ পড়ে - যেমন, কাশলে, হাঁচলে, জোরে হাসলে বা ওজন তুললে। পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে প্রস্টেট গ্রন্থির সার্জারির পর এটা দেখা দেয়। কোনো কারণে এই সার্জারির সময়ে স্নায়ু বা মূত্রনালীর চারপাশের পেশী আঘাত পেলে সেটা অকেজো হয়ে পড়তে পারে বা তার শক্তি খর্ব হতে পারে। তখন মূত্রস্থলীর উপর চাপ পরলে প্রস্রাবকে আটকে রাখতে পারে না। নারীদের ক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম দেবার সময়ে, বা অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে পেটের নিচের পেশীগুলি শিথিল হয়ে পড়লে সেটি মূত্রস্থলীকে ঠিকমত ধরে রাখতে পারে না - সেটা নিচে নেমে যে পেশীগুলি মূত্রনালীকে চেপে রাখতে সাহায্য করে তাদের কাজে বাধা দেয়।

অনেক সময়ে এত প্রস্রাবের বেগ পায় যে, বাথরুমে পৌঁছনো পর্যন্ত সেটা চেপে রাখা যায় না। এই অবস্থাকে অনেক সময়ে অতি-ক্রিয়াশীল মূত্রস্থলী (overactive bladder) বলা হয়। এটা ঘটে যখন মূত্রস্থলী দ্রুত সংকুচিত হয়। এই সংকোচনের সঙ্গে মূত্রস্থলী বেশি ভরাট হয়ে থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। মূত্রস্থলীতে অল্পপরিমান প্রস্রাব থাকলেও মূত্রস্থলীর এই দ্রুত সংকোচন শুরু হতে পারে। এই সংকোচনের চাপ মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশীগুলি সামাল দিতে পারে না। এটি কেন হয়, অনেক সময়েই সেটা ধরতে পারা যায় না। তবে এর মূলে মূত্রপ্রণালীর কোনো সংক্রমণ, মূত্রস্থলীর ক্যানসার, প্রস্টেটের সমস্যা, পার্কিন্সন্স অসুখ, স্ট্রোক, ইত্যাদি জড়িত থাকতে পারে।

অনেক সময়ে প্রস্রাবের পরেও মূত্রস্থলী সম্পূর্ণ খালি হয় না। একটু একটু করে সেটা বেরোতে থাকে। মূত্রস্থলীর পেশীগুলি কমজোর হয়ে পড়লে বা অন্যকোনো বাধার জন্য (যেমন, মূত্রনালী কোনো কারণে ক্ষুদ্র হয়ে গেলে কিংবা পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে) সেটা ঘটতে পারে। মূত্রনালীকে যে পেশীগুলি চেপে বন্ধ করে রাখে সেগুলি তার জোর হারালে - সব সময়েই একটু একটু প্রস্রাব বার হতে থাকে।

আর/এস 

Leave a Comment