এড়িয়ে চলুন কৃত্রিম রঙ এর খাবার
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- অক্টোবর ৩, ২০১৮
খাবারকে ক্রেতার কাছে মনোগ্রাহী এবং লোভনীয় করে তুলতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট তো বটেই, রাস্তার আশপাশের খাবার দোকানিরাও বিভিন্ন ধরনের রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে কেক, বিস্কুট, ফাস্টফুড, কেচাপ, বেভারেজ, আইসক্রিম- এসব খাবারে নানা রকম রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করেন দোকানিরা।
বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে এ ধরনের রঞ্জক পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা সংবলিত লেবেল এঁটে দেওয়া হয়। যদিও এ রঞ্জক পদার্থগুলো কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিকর নয় বলে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু একাধিক গবেষণায় বিভিন্ন প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে এসব রঞ্জক উপাদান যে শরীরের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়- তা প্রমাণিত হয়েছে। জুলাই ২০১০ সাল থেকে ব্রিটিশ সরকার ক্রমেই এসব কৃত্রিম রঞ্জক পদার্থকে খাদ্য উপাদানগুলো থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন খাদ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাও সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সহকারে খাবার পরিবেশনের নির্দেশ দিয়েছে। ব্রিটেনে ২০০৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কৃত্রিম রঞ্জক পদার্থ নিরাপদ মনে হলেও তা শিশুদের উত্তেজনাকর প্রবৃত্তি বাড়িয়ে দেয়।
খাবারে যোগকৃত কৃত্রিম রঞ্জকগুলোর মধ্যে মোট আটটিকে গবেষকরা ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করেছেন। তবে মানুষের শরীরে এ কৃত্রিম রঙ বা রঞ্জক পদার্থগুলো কী ধরনের ক্ষতি করে তা এখনও গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসেনি। এ কৃত্রিম রঙগুলো হলো ব্লু ১ (ব্রিলিয়ান্ট ব্লু), ব্লু ২ (ইনডিগোকারমিন), সাইট্রাস রেড ২, গ্রিন ৩ (ফাস্ট গ্রিন), রেড ৩ (ইরাইত্রোসিন), রেড ৪০ (এলুরা রেড), ইয়েলো ৫ (টারটাজিন) এবং ইয়েলো ৬ (সানসেট ইয়েলো)। এর মধ্যে রেড ৪০, ইয়েলো ৫ এবং ইয়েলো ৬ কে বিজ্ঞানীরা অধিক ক্ষতিকারক বলে চিহ্নিত করেছেন। এসব রঞ্জক পদার্থ রুটি, কেক, চকোলেট, সিরাপ, সস, পশুখাদ্য এমনকি ওষুধে মেশানো হয়।
রেড ৪০ বা এলুরা রেড হলো সবচেয়ে বেশি বিক্রীত কৃত্রিম রঞ্জক পদার্থ। গবেষণায় দেখা গেছে, এ রঙটি ইঁদুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ রঙ সংবলিত খাবার গ্রহণে অ্যালার্জির বিস্তর আশঙ্কা থাকে।
বাচ্চাদের রঙ সংবলিত খাবারে উত্তেজনা প্রবণতা বৃদ্ধির আলামত পাওয়া গেছে ইয়েলো ৫ বা টারটাজিন ও খাবারে মেশানো হয় মনোযোগ আকর্ষণে। কিন্তু এ রঙ সংবলিত খাবার সেবনে তীব্র মাত্রায় অ্যালার্জিসহ বাচ্চাদের মধ্যে উত্তেজনা প্রবণতা বৃদ্ধির বেশ কিছু নজির পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ওষুধ এবং কসমেটিকসে এ ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সানসেট ইয়েলো বা ইয়েলো ৬ হলো আরেক ধরনের কৃত্রিম রঙ, যা কি-না বিভিন্ন সস, চকোলেট, কেক, ওষুধ এবং কসমেটিকসে ব্যবহূত হয়ে থাকে। এই রঙ ব্যবহারেও অন্যান্য প্রাণীর শরীরে টিউমার দেখা দেওয়ার নজির গবেষণায় দেখা গেছে। মানুষের শরীরে এগুলো তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। আমাদের দেশেও প্রচলিত খাবারের মধ্যে জিলিপি, মিষ্টি, বেগুনি, কেক, কোমল পানীয়তে অনুমোদিত রঙের বাইরে নানা ধরনের ক্ষতিকর রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ উপমহাদেশের কালচারের অংশ হিসেবে বিক্রীত চিকেন টিক্কা এবং চিকেন টিক্কা মাসালায় মাত্রাতিরিক্ত সানসেট ইয়েলোর সন্ধান পেয়েছে, যা কি-না জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ব্রিটেনে প্রতি বছর ৪ হাজার ৫০০ লোক খাবারে অ্যালার্জিজনিত অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে ১০ জন প্রাণহানির সম্মুখীন হয়।
শিশুদের মধ্যে ৮ শতাংশ খাদ্যজনিত অ্যালার্জির শিকার আর বড়দের ২ শতাংশ এ ধরনের অ্যালার্জিতে ভুগে থাকে। প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে হলুদ, শুকনা মরিচের নির্যাস, বিভিন্ন ফলের রঙ এবং জাফরান বাজারে পাওয়া গেলেও উচ্চমূল্যের কারণে তা ক্রেতাসাধারণের আয়ত্তের বাইরে রয়ে যায়। এ জন্য রঙিন খাবার পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে পুষ্টিকর এবং ক্যালরিযুক্ত খাবারে মনোযোগী হতে পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন।
আর/এস