নারী যৌনাঙ্গের না বলা সমস্যাসমূহের সঠিক যত্ন
- তাশফিয়া আমিন
- অক্টোবর ৬, ২০১৮
নারীর বহিঃযৌনাঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া ও ঈস্টের(ছত্রাক) মতো অসংখ্য অণুজীব উপস্থিত থাকে। শরীরের ত্বকের মতো, এইসব অণুজীব ও ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট সমন্বয় যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অনুজীবগুলি, যোনির ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিহত করে এবং পিএইচ (অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের স্থিতাবস্থা) নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই অণুজীবগুলোর মধ্যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়, তখন তা ঈস্ট সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস (যোনিপথে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ) প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি করে থাকে। সেই সাথে, নারীরা তাদের সঙ্গীদের মাধ্যমেও বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। এইসব কারণে নারীর জননাঙ্গের নিবিড় যত্ন নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. বাথরুম করার এবং স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তনের আগে ও পরে হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। ভালো মানের ব্যাকটেরিয়া নাশক হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে অন্তত ১ মিনিট হাত ভালো করে ধুয়ে নিন।
২. যোনিপথ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন। সুবাসিত ও সুগন্ধী পন্য ব্যবহার করে মহিলারা প্রায়ই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার শিকার হোন যা ছত্রাক সংক্রমণের সৃষ্টি করে। যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে নিয়ন্ত্রিত অম্ল ও ক্ষারযুক্ত (PH balanced) ক্লীনজার ব্যবহার করুন। যদি তা না পাওয়া যায়, তাহলে খুব মৃদু সাবান ব্যবহার করুন। দিনে একবারের অধিক সাবান দিয়ে ধোয়া উচিৎ নয়। বেশী বেশী সাবান দিয়ে ধোয়া বা অপরিমিত অম্ল বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার অণুজীবের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে এবং তাতে সংক্রমণের সৃষ্টি হয়।
৩. পানি দিয়ে ধোয়ার পর টিস্যু দিয়ে শুকিয়ে নিন। ধর্ম, সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নারীদের এটা অনুধাবন করা গুরুত্বপূর্ণ যে বাথরুমে গিয়ে শুধুমাত্র যৌনাঙ্গ মোছা মানেই পরিষ্কার করা নয় বরং প্রথমে পানি দিয়ে ধোয়া এবং পরে টিস্যু দিয়ে শুকিয়ে নেয়াটা সঠিক।
৪. প্রেসক্রিপশন ছাড়া কখনোই দীর্ঘ সময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ করবেন না। কারণ এতে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে অ্যান্টিবায়োটিক ধ্বংস করে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণের পথ সুগম করে দেয়।
৫. বাথটাব এর পরিবর্তে ঝর্না ব্যাবহার করে গোসল করা ভাল। বাথটাবে পানি, বিশেষ করে গরম পানি যোনির চারপাশে দীর্ঘ সময়ের জন্য জমে থাকে এবং তা ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যাবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬. সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করুন এবং তলদেশে আঁটসাঁট কাপড় পরা থেকে বিরত থেকে ঢিলেঢালা কাপড় পড়ুন। কৃত্রিম উপাদানে তৈরি আঁটসাঁট কাপড় এবং জিন্স বাতাস রোধ করে রাখে। শরীরের নিচের দিকের পোষাকের মধ্যে বাতাস প্রবাহিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী কেননা তা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।
৭. রজঃস্রাব চলমান অবস্থায় না থাকলে প্যাড পরে রাখবেন না। কৃত্রিম উপাদান দীর্ঘ সময় শরীরের সাথে যুক্ত রাখলে তা বারবার সংক্রমণ ও জ্বালার সৃষ্টি করবে। যদি আপনার ত্বক খুবই সংবেদনশীল হয়ে থাকে, তাহলে পুরোনো বিছানার চাদর কিংবা কোনো সুতির কাপড় কেটে তা দিয়ে প্যাডের উপরের অংশ আবৃত করে ব্যবহার করুন। এতে করে ত্বক প্যাডের সংস্পর্শে আসবে না এবং অ্যালার্জি সৃষ্টি করবে না।
৮. ভালো বা সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার জন্য প্রোবায়োটিক (উপকারী) খাবার যেমন – দই খাওয়া উপকারী।
৯. প্রতিদিন জননাংগ ধোয়ার জন্যে সাবানের উত্তম বিকল্প হলো ৩% ভিনেগার ও পানির দ্রবণ অথবা ২ লিটার পানির সাথে অর্ধেক লেবুর রস মিশ্রিত তরল। সাবান ব্যবহার যোনির স্বাভাবিক অ্যাসিডযুক্ত পিএইচকে অ্যালকালিনে রূপান্তরিত করে দিতে পারে যা ক্ষতিকর জীবানু বৃদ্ধির সহায়ক।
যোনিপথে সংক্রমণঃ যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়া, বিবর্ণ হওয়া বা ফেটে যাওয়া পরিলক্ষিত হলে অথবা যৌন মিলনের সময় ব্যথা হলে সংক্রমণ সন্দেহ করা যেতে পারে। প্রস্রাবের সময় অথবা তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যোনির ভেতরের আবরন ও অভ্যন্তর স্বাভাবিক অবস্থায় স্যাঁতস্যাঁতে, গোলাপি রংযুক্ত এবং এক ধরনের ঘন তরলের হালকা আবরনে ছাওয়া থাকে। এরকম না থাকলে শুকিয়ে গিয়ে সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়া্তে পারে। এরকম কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হলে লজ্জা না করে দ্রুত গাইনী ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন।