সাধ্যের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার

  • লুবনা আক্তার লিমা
  • অক্টোবর ১৩, ২০১৮

খাদ্য আমাদের মেীলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে প্রধান । আমরা কম বেশি সবাই খাদ্য গ্রহন করে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে একটি ধারনা রয়েছে যে, দামি খাবার মানেই পুষ্টিকর খাবার। যখনই আমরা কোন গরীব পরিবারকে পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দিতে যাই, তাদের কাছে শুনতে পাই, ‘‘ আমরা গরীব নুন আনতে পানতা ফুরায় আমরা কিভাবে অত পুষ্টি পাব ”। কিন্তু এই ধারনাটি আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারনা।

খাদ্য গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য কখনই পেট ভরানো নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হলে ,সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হয়ে বেঁচে থাকা। তাই খাদ্য সচেতেনতা আমাদের জন্য জরুরী। আমাদের পুষ্টিহীনতারোধে আহারকে করতে হবে সুষম,যেখানে খাদ্যের ৬ টি উপাদান ,শর্করা,আমিষ, ভিটামিন,খনিজ ও পানি বিদ্যামান থাকবে।  
 
একটি খাবারকে আমরা তখনই পুষ্টিকর খাবার হিসাবে আখ্যায়িত করবো, যখন খাবারটি আমাদের দেহের জন্য সুফল বয়ে আনবে ও অধিক পুষ্টি প্রদান করবে। আর সেই পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে শীর্ষেই রয়েছে আমাদেরে দেশীয় ফলমূল,শাক-সবজি।আমি আপেল খেতে পারলাম না, আঙ্গুর,বেদেনা, নাশপাতি কিনতে পারছিনা। আমি ও আমার পরিবারের ভিটামিন , মিনারেলস এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না, এ ধারনা এক মুহূর্তে পাল্টে যাবে,পেয়ারা ,আমলকি ,জলপাই ,বরই, জাম্বুরা ,আমড়া,কামড়াঙ্গা ইত্যাদির পুষ্টিগুন সম্পর্কে সচেতন থাকলে।
 
প্রতিদিনের পোলাও, মাংস,পিজ্জা, বার্গারে নয় ,আপনার আমার সবার পুষ্টি লুকিয়ে আছে সাধ্যের মধ্যে থাকা, ঢেঁকিছাটা  চাল ,ভুসিসমেত আটায় তৈরি রুটির মধ্যেই। ডাল তো গরীবের মাংস। প্রতিদিন মাংস না’ ই খেতে পারলাম ,ডাল তো রান্না করে খেয়ে নিতেই পারি। সেই সাথে সাধ্যমত মাছের ঝোল হলে মন্দ হয় না। পরিবারের আয় বুঝে,প্রয়োজনে সদস্য সংখ্যা গুনে মাছের টুকরা রান্না করে পুষ্টির চাহিদা মেটানো  যায় সহজেই। প্রতিদিন মাছ! না ,না সপ্তাহে ২ দিন দুপুরের খাবারে ডিম তরকারি হলে খাবার আরো সুস্বাদু হয়ে যায়।

মাংস না হয় ১৫ দিনে একবার চেষ্টা করে দেখাই যেতে পারে।সুজলা- সুফলা ্এ দেশে শাকসবজির অভাব নেই। যারা গ্রামে বসবাস করেন , তারা সহজেই নিয়মিত আহারে শাক-সবজি রাখতে পারেন। শহরেও ১৫-২০ টাকা হলেই , অতি পুষ্টিকর শাকের চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারি।মৌসুমি সবজির দাম মৌসুম চলাকালীন আমাদের সাধ্যের মধ্যেই বিদ্যামান থাকে।সময়মত পরিমিত আহার ,সুষম খাবার আমাদের সম্পূর্ণ পুষ্টিচাহিদা পূরন করে দিবে সাধ্যের মধ্যেই, শুধু একটু  সচেতন থাকতে হবে আমাদের।ভাত বা আটার রুটির সাথে সবজি/ ডাল/ সাধ্য অনুযায়ী মাছ /মাংস /ডিমেই সাজানো হয়ে যাবে আমাদের পুষ্টি প্লেট।

ফল কেনা হয় না, একটি লেবু তো কেনাই যায় ৪/৮ টি ভাগ করে পাতে পাতে দিয়ে দিলেই পূরণ হয়ে যাবে ভিটামিন সি এর চাহিদা। চাকচিক্যপূর্ণ প্যাকেটজাত খাবার না খেয়ে ১০ টাকার বাদাম কিংবা ছোলা কিনে খেয়ে পূরণ করতে পারি প্রোটিনের চাহিদা, সেই সাথে বৃুদ্ধি পাবে স্মরণ শক্তিও।সাধ্য অনুযায়ী সন্ধ্যার নাস্তায় দুধ দিয়ে পায়েস,ক্ষীর রান্না করে খেয়ে উৎসবে মেতে উঠতে পারি।সাধ্যের মধ্যে মিটিয়ে নিতে পারি আদর্শ খাবারের চাহিদাটাও।সাধ্যের মধ্যে যখন সবটুকু সুখ খুঁজে পেলাম, অবশ্যই খুশি তবে সেই আনন্দে পরিমিত পানি পানের কথা যেন ভুলে না যাই।অবশ্যই পরিমিত পারিমান বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
 
সুস্থ  থাকুন, সুন্দর থাকুন । বজায় রাখুন  ‘‘ সাধ্যের মধ্যে সবটুকু পুষ্টি”

লেখিকা : লুবনা আক্তার লিমা
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ

Leave a Comment