শিশুর কাওয়াসাকি রোগে করণীয়
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
- নভেম্বর ২৪, ২০১৮
শিশুর কাওয়াসাকি রোগটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন কমবেশি হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে ঢাকায় এখন পর্যন্ত ৮৯ জন কাওয়াসাকি রোগী পাওয়া গেছে, যাদের গড় বয়স ৪.৭ বছর। ২০১৫ সাল থেকে বারডেম হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১২ জন শিশুর মধ্যে পাওয়া এই রোগ স্বনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে, যারা নিয়মিত ফলোআপে এখন ভাল আছে।
কাওয়াসাকি রোগের কারণ : রোগটি ইনফেকশনজনিত হলেও এটি বংশগত, পরিবেশগত, জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে হতে পারে।
যাদের হয় : সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাওয়াসাকি রোগ বেশি হয়। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশি হয়। রোগটি ছোঁয়াচে নয় বিধায় পরিবারে কোনো শিশুর হলে অন্যজনের হওয়ার আশঙ্কা নেই।
উপসর্গ : কাওয়াসাকিতে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরে অনেক দিন (পাঁচ দিনের বেশি) ধরে ভুগে থাকে। প্যারাসিটামল প্রয়োগ করেও তেমন কাজ হয় না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও জ্বরের তেমন কারণও বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- মুখ ও শরীরে লাল আভা থাকে। জিব লাল হয়। তবে চোখ অস্বাভাবিক লাল হলেও কোনো পুঁজ বা পিঁচুটি থাকে না। ঠোঁট ফেটে লাল ও শুকনো হয়ে যেতে পারে। গলার গ্ল্যান্ড বা ঘাড়ের এক পাশের লসিকাগ্রন্থিগুলো ফুলে যেতে পারে।
- হাত-পা, যৌনাঙ্গে চামড়ায় নানা ধরনের দানা, চুলকানি ইত্যাদি হতে পারে। হাত ও পায়ের আঙুলে পানি জমে ফুলে যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে আঙুলের মাথা থেকে চামড়া উঠে যেতে পারে।
- মেজাজ খিটখিটে ধরনের হয়। তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে।
- অস্থিসন্ধি (গিরা) ফোলা ও ব্যথা থাকতে পারে।
- এই রোগের মারাত্মক দিকটি হলো, হার্টের করোনারি আর্টারি আক্রান্ত হয়ে দুর্বল ও প্রসারিত হয়ে যাওয়া। যার ফলে পরবর্তী সময়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
পরীক্ষা : কাওয়াসাকি চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই। তবে রক্তের সাধারণ পরীক্ষায় এ রোগের কিছু লক্ষণ পাওয়া যায়। যেমন সিবিসি পরীক্ষায় প্লাটিলের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বেড়ে যায় রক্তে সিআরপি এবং ইএসআর-ও। পাশাপাশি ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষা করলে রক্তনালি ফাঁপা বা অস্বাভাবিক প্রসারণ নির্ণয় করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, রোগটি কাওয়াসাকি।
চিকিৎসা : কেউ কাওয়াসাকিতে আক্রান্ত হলে শুরুতে সঠিক চিকিৎসা নিলে বেশির ভাগ রোগীই ভাল হয়ে যায়। আবার চিকিৎসা সত্ত্বেও কারো কারো হৃদপিন্ডে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এমন সন্দেহ হলে দেরি না করে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। এ রোগের চিকিৎসায় ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিন (আইভিআইজি) ব্যবহার করা হয়, যা খুবই ব্যয়বহুল। তবে অসুস্থ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে এই আইভিআইজি প্রয়োগ করতে পারলে হার্টের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালির জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব। যাদের ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে উন্নতি হয় না, তাদের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে বায়োলজিক ড্রাগসও দেওয়া যেতে পারে।