জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি – পিল খাবার নিয়ম, সুবিধা-অসুবিধা
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
বর্তমানে ব্যস্ততা এবং সচেতনতা দুটিই সমান তালে বেড়ে গেছে। নিজেদের ক্যারিয়ার গুছানো এবং দুটি বাচ্চার মাঝখানে সব দম্পতিই একটু গ্যাপ রাখতে চান। এসময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কেউই দীর্ঘমেয়াদি পদ্দতি নিতে চান না। বরং সহজেই শুরু এবং বন্ধ করা যায় এমন পদ্ধতিই খুঁজে নিতে চান। আজ জেনে নিন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে -
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম :
সাধারণত পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে যে কোনও দিন পিল খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। প্রতিদিন রাত্রে খাবার খাওয়ার পর নির্দিষ্ট পিলটি খেতে হবে। পর পর ২১ দিন খেতে হবে। তারপর এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে আবার নতুন প্যাকেট শুরু করতে হবে।
কোন একদিন ভুলে গেলে পরদিন দুটো পিল খেতে হবে। বর্তমানে বাজারে ২১ প্লাস ৭ ও ২৪ প্লাস ৪টি পিলেরও প্যাকেট পাওয়া যায় ৷ এর সুবিধা হচ্ছে মনে রাখার বা ভুলে যাওয়ার কোন ব্যাপর থাকে না।
২৮ দিন পর পর নতুন প্যাকেট শুরু করলেই হল ৷ বাচ্চা নিতে ইচ্ছুক নারীদের ক্ষেত্রে ৩-৪ মাস আগে থেকে পিল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোন ধরনের পিল খাওয়া উচিত তা ঠিক করে নেয়া ভালো। তাহলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়।
কাদের জন্য পিল প্রযোজ্য নয়:
(১) ৪০ উর্ধ্ব মহিলাদের জন্য পিল প্রযোজ্য নয়। এতে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে।
(২) সদ্য মা হওয়া মহিলাদের ইসট্রোজেনের মাত্রা বেশি এমন পিল খাওয়া উচিত নয়। এতে বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
(৩) যেসব মহিলাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে
(৪) যেসব মহিলার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি
(৫) যাদের ডায়াবেটিস আছে
(৬) উচ্চ-রক্তচাপে ভুগছেন এমন মহিলারা
(৭) যাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে
পিল খেতে ভুলে গেলে যা করবেন:
অনেকে মহিলাই নিয়মিত পিল খেতে ভুলে যান। এতে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ হতে পারে। পিল শুরু করার প্রথম সাত দিনের মধ্যে দুই থেকে তিন দিন ভুলে গেলে পিল কাজ না করার সম্ভাবনা বেশি। একদিন পিল খেতে ভুলে গেলে পরদিন পিলটি খেয়ে নিলে হবে। আর পর পর দুইদিন বা তিন দিন পিল খেতে ভুলে গেলে ওই মাসের পিল খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে এবং বাকি মাসটুকু স্বামীকে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধকল্পে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এরপর পরবর্তী মাস থেকে আগের নিয়মে পিল খাওয়া শুরু করতে হবে।
পিল খাওয়ার পর বমি হলে বমির সাথে অনেক সময় পিল বেরিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে পিল খাওয়ার কতক্ষণ পর বমি হল। পিল খাওয়ার ঘণ্টা দুই পরে বমি হলে কোন সমস্যা নেই। তবে তার আগে হলে আরও একটি পিল খেয়ে নিতে হবে। এরপরও যদি বমি হয়, তবে একটু সুস্থ হওয়ার পর আরো একটি পিল খেয়ে নিতে হবে।
কিছু কিছু ঔষধ রয়েছে পিলের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই যারা পিল খান তাদের কোন ঔষধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তা না হলে পিল খেয়ে কোন ফল পাওয়া যাবে না।
পিল খাওয়ার সুবিধা:
জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পিলের নানা সুবিধা রয়েছে। যেমন:
(১) যাদের অনিয়মিত পিরিয়ড, তাদের পিরিয়ড নিয়মিত হয়।
(২) তলপেটের প্রদাহ, ব্রেস্টের কিছু রোগ, সিস্ট ইত্যাদি পিল গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।
(৩) পিল গ্রহণের মাধ্যমে পিরিয়ডবিহীন ছুটি কাটানো অথবা রমজান মাসে টানা একমাস রোজা রাখায় কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
(৪) নিয়মিত পিল ব্যবহারে ওভারিয়ান সিস্ট, অ্যানিমিয়া, আর্থ্রাইটিস, এটোপিক প্রেগনেন্সি, যৌনাঙ্গে প্রদাহজনিত রোগ ইত্যাদির সম্ভবনাকে কমিয়ে দেয়।
(৫) যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের জন্য ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল উপকারী।
পিল খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে:
(১) বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা
(২) মাথা ব্যথা হওয়া
(৩) মেজাজ খিটখিটে হওয়া
(৪) বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
(৫) ওজন বেড়ে যাওয়া
(৬) চোখে দেখার অসুবিধা বা ঝাপসা দৃষ্টি
(৭) ব্রেস্টে ব্যথা
(৮) পিরিয়ডবিহীন ব্লিডিং
(৯) সেক্সুয়াল আগ্রহ কমে যাওয়া
(১০) পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া
(১১) প্রতিদিন একই সময় পিল খেতে হয়
(১২) ৩ বছরের বেশি পিল খেলে গ্লুকোমা হয়
(১৩) টেনশন
(১৪) তলপেটে ব্যথা
বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য ওরাল পিলের সহযোগিতা :
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ওরাল পিল খাওয়া উচিত নয়, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা ৷ অনেকে ভাবেন ব্রেস্ট ফিডিং করালে আর আলাদা কন্ট্রাসেপশনের প্রয়োজন নেই৷ এ ধারণাও সম্পূর্ণ ঠিক নয় ৷ শিশুকে পুরোপুরি বুকের দুধের উপর রাখলে, অর্থাৎ, বাচ্চাকে জল, মধু, রাত্রে এক-আধবার বোতলের দুধ খাওয়ানো। এ সব কিছু না করলে ৩-৪ মাস গর্ভসঞ্চার হওয়ার চান্স কম থাকে। তবে এটি পুরোপুরি প্রমানিত নয়। পিরিয়ড বন্ধ থাকলেও অনেক সময় গর্ভসঞ্চার হতে পারে ৷ আর মাঝে মধ্যে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ালে বাচ্চা এসে যেতে পারে ৷ সুতরাং তাদের জন্য প্রোজেস্টেরন হরমোনযুক্ত মিনি পিল ব্যবহারেই শ্রেয়। এতে বুকের দুধের পরিমাণ ও তার গুণগতমানের কোন পরিবর্তন হবে না।
পিল খাওয়ার পূর্বে / পরে যে উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত:
(১) যেসব মহিলাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের পিল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
(২) যেসব মহিলার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি, যাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন আছে এবং যারা কিছুটা স্থুলকায়, তাদের ক্ষেত্রে খাবার পিল স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এমন মহিলাদের পিল খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরী।
(৩) নিয়মিত পিল খাওয়ার কারনে যদি ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা মহিলাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত
(৪) যারা বেশি পিল খান তাদের ভেনাস থ্রোম্বোএম্বলিসম নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
(৫) গর্ভনিরোধক পিলে তেমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কিছু নেই। কিন্তু যদি বেশি ব্লিডিং হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
(৬) পিল খাওয়ার পর যদি বুকে ব্যথা, কাশির সঙ্গে রক্ত বেরুনো বা কোনো অস্বাভাবিকতা দেখে দিলে ডাক্তারের সাহায্য নেয়া উচিত।
পিল খাওয়ার পরেও যে সব কারনে গর্ভধারণ হতে পারে :
১. নিয়মমতো পিল না খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থেকে যায়। ।
২. প্রতিদিন সঠিক সময়ে পিল না খেলে পিলের কার্যক্ষমতা কমে যায় ।
৩. কিছু বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য পিল কাজ করে না। যেমন- টিউবারকুলোসিসের জন্য রিফাডিন চিকিৎসা, গ্রিসেওফালভিনের জন্য অ্যান্টি-ফানগাল ড্রাগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে পিল কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
৪. কোনো হার্বাল সাপ্লিমেন্টের কারণে গর্ভনিরোধক পিলের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
পিল খাওয়ার পূর্বে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত :
প্রথম সন্তান নেয়ার আগে পিল না খাওয়াই ভালো। তাতে পরবর্তীতে সন্তান ধারণে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। একটি সন্তানের পর দীর্ঘদিন পিল খেলে পরবর্তীতেও সন্তান ধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ওজন বেড়ে যাওয়া সহ নানা রকম শারীরিক সমস্যার উপসর্গ দেখা দিতে পারে পিল সেবনে।
তথ্য এবং ছবি : গুগল