মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ এবং ঘরোয়া সমাধান
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
আমরা যখন পানি পান করি তখন তা কিডনির মাধ্যমে ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে মূত্র হিসেবে বের হয়ে যায়। মানুষের শরীরের দুটি কিডনি রয়েছে। দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। আর এই মুত্রতন্ত্রের যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি বা মূত্রথলি অথবা একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরণের ইনফেকশন হতে পারে। এই ইনফেকশনকেই সংক্ষেপে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়।
মুত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউরিন ইনফেকশন একটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর সমস্যা। প্রস্রাবের বেগ হওয়া সত্ত্বেও ঠিকমতো প্রস্রাব না হওয়া বা খুবই সামান্য প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বোধ করা, প্রস্রাব ঘোলাটে বা রক্তাভ হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া, অবসন্ন ও ক্লান্ত অনুভব করা – এই উপসর্গ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে যে আপনার মূত্রনালীর সংক্রমণ হয়েছে। ছেলেদের থেকে মেয়েরাই এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়।
মেয়েদের ইউরিথ্রা বা মূত্রনালী পায়ুর খুব কাছাকাছি থাকে ফলে মলদার দিয়ে নির্গত ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রনালিতে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও মেয়েদের মুত্রনালী ছোট হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই মুত্রথলিতে ও কিডনিতে পৌঁছে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রনালির সংক্রমন বা ইউটিআই নির্ণয় করা যায়। কী জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তা দেখে ডাক্তার আপনাকে এন্টিবায়োটিক সেবন করতে দেবেন। এন্টিবায়োটিক-এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলাই বাহুল্য। যেমন- ডায়রিয়া, বমি , র্যাশ ও চুলকানি হওয়া ইত্যাদি। এই সংক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ :
(১) প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে হওয়া
(২) প্রস্রাবে বাজে গন্ধ
(৩) একটু পর পর প্রস্রাব লাগা কিন্তু ঠিক মতো না হওয়া
(৪) প্রস্রাব করার সময় জ্বালা পোড়া বা ব্যথা করা
(৫) তলপেটে বা পিঠে তীব্র ব্যথা
(৬) সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব অথবা কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর হওয়া
(৭) বমি ভাব বা বমি হওয়া
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইউরিন ইনফেকশনের সমাধান :
প্রচুর পানি পান করুন :
যাদের ইউটিআই আছে তাদের প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন । বেশী পানি পান করলে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়।
সোডা পান করুন :
না কোন সফট ড্রিংক এর কথা বলছি না, বেকিং সোডার কথা বলছি। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন সকাল বেলা পান করুন প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া কমবে ।
কিছু সেলারি বীজ চিবান :
সেলারি বীজ মূত্র বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এক মুঠো সেলেরি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন অথবা এক কাপ গরম পানিতে কিছু সেলেরি বীজ দিয়ে ঢেকে দিন ,৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটা ইউ টি আই প্রতিরোধ করে।
শসা খান : শসাতে প্রচুর পানি আছে। প্রতিদিন কম পক্ষে একটি শসা স্লাইস করে খেতে পারেন।
গরম সেঁক নিন : হট ওয়াটার ব্যাগ এ গরম পানি নিয়ে আপনার তলপেটের উপর রাখুন, এতে খুব দ্রুত প্রস্রাবের জ্বালা পোরা ও ব্যথা দূর হবে।
আরামদায়ক পোশাক : স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। সূতির অন্তর্বাস পরলে ও ঢিলেঢালা পোশাক পরলে স্পর্শকাতর অঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ভিটামিন সি :
ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেক ডাক্তারই রোগীদেরকে দৈনিক ৫০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন সি মুত্রথলীকে ভালো রাখে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
আনারস :
আনারসে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপকারী এঞ্জাইম। গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় এবং তা ইউরিন ইনফেকশন ভালো করে দেয় খুব দ্রুত। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন এক কাপ আনারসের রস খান।
তথ্য এবং ছবি : গুগল