জন্মগতভাবেই বাচ্চা কেন প্রতিবন্ধী হয়? জেনে নিন প্রতিকার
- তাসফিয়া আমিন
- জুলাই ৯, ২০১৯
আমাদের সমাজে শারিরিক, মানসিক বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ আরো অনেক রকম ত্রুটি যুক্ত বা প্রতিবন্ধকতযুক্ত মানুষ দেখতে পাই। এদের কেউ কেউ কোনো না কোনো দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবন্ধী হন। আর বাকিরা জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী বা বিভিন্নরক শারিরীক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই অজানা এই বিষয়টি - জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত বাচ্চা কেন জন্ম নেয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা হবার পেছনে শতকরা ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট কারন খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু বিষয় যা গর্ভস্থ বাচ্চার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা জন্ম নেয়ার কারণসমূহঃ
- বাচ্চার স্বাভাবিক গঠনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে জেনেটিক এবং ক্রোমোজোমাল ফ্যাক্টর। এই আ্যাবনরমালিটি গুলো বাবা- মা থেকে ভ্রুণে ট্রান্সমিট হয়, আবার অনেক সময় ভ্রুণেও নতুন করে তৈরি হতে পারে। এছাড়াও বাবা কিংবা মায়ের অধিক বয়সে সন্তান গ্রহন বা রেডিয়েশনের কারণেও ভ্রুণের গঠনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সুতরাং ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা জন্মের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় কারণ।
- ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা জন্ম নেয়ার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো প্রেগনেন্সিতে জীবানুর সংক্রমণ। এক্ষত্রে যেসব জীবাণু সবচেয়ে ক্ষতিকর, সেগুলো হলো - Measels, Rubella, Toxoplasmosis, Cytomegalovirus, Zika virus ইত্যাদি। এইসব জীবাণুর আক্রমণে গর্ভস্থ বাচ্চার বিভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসহ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে থাকে। আর এসব জীবাণুর ক্ষতি কতটা বা কীরকম হয়, তা নির্ভর করে এটি কখন প্রেগন্যান্ট মাকে সংক্রমিত করেছে তার উপর।
- অনেক গর্ভবতী মায়েরা আছেন যারা এসময়ে যেকোনো ঔষধ খেতেই ভয় পান। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা মেনে সঠিক ঔষধ খেতে কোন সমস্যা নেই। কারণ, বেশিরভাগ ঔষধই নিরাপদ। বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ঔষধ গুলো pregnancy category C/D হয়ে থাকে। আবার ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে কোন সময়ে ঔষধ খাওয়া হচ্ছে তার উপর। সাধারণত গর্ভস্থ প্রথম তিন মাসে কোন ঔষধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক না। কারণ এই সময়ে ক্ষতির মাত্রা বেশি থাকে। এসময় Ratinoic acid/VitaminA ভ্রুণের ক্ষতিসাধন করে, আবার কিছু ভিটামিনের(যেমন ফলিক এসিড) অভাবে ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ভিটামিন গ্রহণেও রয়েছে ঝুঁকি।
- পরিবেশ দূষণকারী এবং পানিবাহিত বিভিন্ন টক্সিক পদার্থ গর্ভস্থ বাচ্চার আ্যবনরমালিটি ছাড়াও আরো অনেক গর্ভকালীন জটিলতা করে থাকে। এই টক্সিন পদার্থ গুলোর মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, লেড, ফ্লোরাইড ইত্যাদি।
- গর্ভাবস্থায় ধুমপান বা আ্যলকোহোল গ্রহণ অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কনসিভের আগেই এই অভ্যাস রোধে অনেক ধরনের প্রোগ্রাম এবং কাউন্সিলিং সেন্টার রয়েছে বিভিন্ন দেশে। ধুমপানে বাবাদের সন্তানদের জন্মগত ত্রুটি এবং কিছু চাইল্ডহুড ক্যান্সার যেমন লিউকেমিয়া বা ব্রেইন টিউমার হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ হচ্ছে ধুমপানের ফলে তাদের DNA mutations হয়, যা অনাগত সন্তানদের মধ্যে ট্রান্সমিশন হয়ে ক্ষতি করে থাকে।
জন্মগত ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা জন্ম রোধ বা প্রতিকারে বেশ কিছু সচেতনতামূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন
- যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলিক এসিড খেতে হবে পরামর্শপত্র ছাড়া অবশ্যই এবং অবশ্যই ঔষধ গ্রহণে বিরত থাকতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় যথাসম্ভব ভাল পরিবেশে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- বাবা- মায়ের কোন জেনেটিক সমস্যা থাকলে কনসিভের আগেই পরামর্শ গ্রহন ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
- মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি হলে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বাচ্চার নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে।
- রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে কনসিভের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
- ইনফেকশন প্রতিরোধক টিকা (Rubella vaxin) নিতে হবে।
- নিকট আত্বীয়-স্বজন তথা (রক্তের সম্পর্কের) খালাতো, মামাতো কিংবা ফুফাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
টি/শা