‘বিয়ের পর তো চাঁদনী চকেই নিয়ে যেতে পারলা না?’
- ফারজানা আক্তার
- অক্টোবর ২১, ২০১৭
বিয়ে হলো একটি জটিল বাস্তবতা। বিয়ের মাধ্যমে দুইটি ভিন্ন স্বভাবের মানুষ, ভিন্ন স্বপ্ন দেখা মানুষ, ভিন্ন মানুসিকতার মানুষ, ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা মানুষ এক হয়ে একই ছাদের নিচে বসবাস শুরু করে। তাদের দুইজনের চলার ভিন্ন পথ, ভিন্ন স্বপ্ন তখন এক হয়ে যায়। যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন মানুষ এক হয়ে চলার চেষ্টা করে তাই তাদের মাঝে কিছু সমস্যা , কিছু ভিন্নমত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
দাম্পত্য জীবনে বেশ কিছু কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু এই লেখাটা আমি লিখছি তাই আমি আমার মতামতটুকুই দিচ্ছি। অন্য কারো সাথে মিলে যেতে পারে আবার নাও মিলতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মেয়েলি রোগ লিউকোরিয়ার (সাদাস্রাব ) কারণ ও প্রতিকার
বিবাহের মূল ভিত্তি হলো দুইটি ভিন্ন জগতের মানুষ একহয়ে একসাথে চলবে। এই জন্য দরকার পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস করা, পরস্পরের প্রতি নির্ভলশীলতা, দুইজনের ইচ্ছা – অনিচ্ছার কথা শুনা এবং প্রাপ্ত সম্মান। আমাদের সমাজে দেখা যায় বিয়ের পর মেয়েটাকে একটা অন্য জগতে ঠেলে দিতে। তার চাওয়া – পাওয়া গুলোকে তখন তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না।
আমি এমন অনেক দেখেছি বিয়ের আগে মেয়ের লেখাপড়া বা চাকরি করার বিষয়ে ছেলেপক্ষ রাজি হলেও, বিয়ের পর সে বিষয়ে উদাসীনতা দেখায়। তাদের কিছু কমন ডায়লগ থাকে – “বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর লেখাপড়া করে কি হবে ? বিয়ের পর আমাদের বাড়ির কোনো বৌ চাকরি করে না ! ইত্যাদি ইত্যাদি ” এদের অজুহাত লিখতে গেলে এক লেখায় সম্ভব না।
এই যে মেয়েটার স্বপ্ন বা ইচ্ছেটাকে গলা টিপে হত্যা করা , সেটা থেকে মেয়েটার মনে একটা ক্ষোভ তৈরী হয়, মেয়েটা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরে, একটা অন্য রকম ইনসিকিউরিটি অনুভব করে। স্বামীর প্রতি, সংসারের প্রতি একটা দূরত্ব তৈরী হয়ে যায়। তখন আবার বলা হয় মেয়েটার সংসারের প্রতি মন নেই বা অন্য কোথাও আসক্ত। স্বামী মানুষটিও মেয়েটির মূল সমস্যাটা না খুঁজে প্রতি রাতে নিজের সুখ খুঁজে নেয় অথবা অন্য কারো প্রতি আসক্ত হয়ে পরে।
বিয়ের প্রথম প্রথম মেয়েটার নিজের বাবা -মা, ভাই-বোন অথবা ফেলে আসা নিজের জন্মস্থান বা পরিবারের প্রতি একটা আলাদা মায়া অনুভব করে। এই মায়াটাকে সে তখন নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখতে পারে না, বের হয়ে আসে কান্নার জল হয়ে। স্বামী মানুষটি বা নতুন পরিবারটি এই বিষয়টি মানতে চায় না। বিয়ের পর স্বামীর ঘরই আসল ঘর অথবা বাপের বাড়ির প্রতি এতো দরদ থাকলে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো এমন কঠিন কথাতেই তারা আবদ্ধ থাকে।
প্রতিটা সম্পর্কে একটা তৃতীয় পক্ষ থাকে। দাম্পত্য জীবনে শশুর-শাশুড়ি, দেবর – ননদ, ভাসুর – জা, শালা – শালী, অন্য কোনো আত্মীয় ইত্যাদি ইত্যাদি তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা পালন করে। এমন কিছু পরিবার আছে যারা স্বামীর সামনে বউয়ের সাথে খুব ভালো। স্বামী মানুষটি যখন একটু আড়াল হয় , তখন তারা আসল রূপ নিয়ে বের হয়ে আসে। এই বিষয়টা যে মেয়ের সাথে ঘটে সেই শুধু বুঝতে পারে এর ভয়াবহতা। মেয়েটি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যায় সে কি তার স্বামীকে বলবে, আর যদি বলেও তার স্বামী বিশ্বাস করবে কিনা !
এই ক্ষেত্রে স্বামী কখনোই বউয়ের পক্ষে যায় না কারণ সে দেখে তার পরিবার মেয়েটিকে কত ভালোবাসে ! স্বামী মানুষটি আড়ালের ঘটনা খুঁজে না, জানার চেষ্টাও করে না আবার বিশ্বাসও করে না। এই কারণে মেয়েটি তার স্বামীর ওপর নির্ভর করতে পারে না, আস্থা রাখতে পারে না। অপরদিকে স্বামীও বউয়ের ওপর আস্থা রাখতে পারে না, বিশ্বাস করতে পারে না। তার সবসময় মনে হতে থাকে তার ভালো পরিবারকে তার বউ মিথ্যা কথা বলে বদনাম করতে চাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় কি ধরণের সমস্যা হতে পারে !
ভালোবাসার বিয়ের ক্ষেত্রে, বিয়ের আগে ছেলেটি আকাশের চাঁদ, তাঁরা মেয়েটিকে এনে দিতে চায়। সুখের এক অপরূপ স্বপ্ন দেখায়। অন্যদিকে মেয়েটিও চাঁদ, তাঁরা ছাড়া শুধু ছেলেটির সাথে তিন বেলা তিনমুঠো ভাত আর দুইটি কাপড় নিয়ে সুখী হতে চায়। কিন্ত বাস্তব কখনোই এতো গুছানো এবং সুন্দর হয় না।
বিয়ের পর দুইটি পরিবারের চাওয়া – পাওয়া , মেয়ে এবং ছেলে দুইজনের ভিন্ন ভিন্ন আত্মীয় – স্বজন এবং বন্ধু -বান্ধবের চাওয়া পাওয়ার কাছে তখন চাঁদ, তাঁরা, তিনবেলা তিনমুঠো ভাত এবং দুইটি কাপড় ক্ষীণ হয়ে যায়। বিয়ের আগে তুমি বলেছিলে চাঁদ দিবা, বিয়ের পর তো চাঁদনী চকেই নিয়ে যেতে পারলা না এই নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা। বিয়ের আগে তুমি বলেছিলে তিনবেলা তিনমুঠো ভাতেই খুশি থাকবা, বিয়ের পর এখন কেন মাসে একবার চায়নিজ খেতে চাও এই নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া। বাড়তে থাকে মান – অভিমান , বাড়তে থাকে দূরত্ব।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু বিষয় কাট – ছাট, দুইজনের সচেতনতা, দুইজনের লিমিটেশন, পরস্পরের বোঝাপড়ার অভাবে জীবন যেমন তিক্ততায় ভরে যেতে পারে , তেমনি এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনি একটু সচেতন হলেই দাম্পত্য জীবন সুখের হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ আপনি জেনে বুঝে পরিমাণমতো ব্যায়াম করছেন তো ?