আপনি কি প্রতিদিন নারকেল তেল খাচ্ছেন বা ত্বকে ব্যবহার করছেন?
- ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
- এপ্রিল ১১, ২০২০
আপনি কি প্রতিদিন নারকেল তেল খাচ্ছেন বা ত্বকে ব্যবহার করছেন? জানেন কি এটি আপনার শরীরের জন্য কতটা ভালো?
নারকেল তেল এমন এক তেল যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। একদল বিশেষজ্ঞ বলেন এই তেল ফ্যাটি এসিডের একটি অনন্য সংমিশ্রণ, অন্যদিকে আরেকদল এটিকে বিষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আপনি কাদের কথা বিশ্বাস করবেন?
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত নারকেল তেল খান তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কম তাদের থেকে যারা নারকেল তেল মোটেও খান না। তবে এটিও সত্যি যে, নারকেল তেলে ৮০% স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং লাল মাংসে থাকে ৫০% স্যাচুরেটেড ফ্যাট। প্রতিদিনের সুষম খাবার তালিকায় বেশি মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকলে তা শরীরের জন্য ভালো নয়।
আরো পড়ুন : বাচ্চার ওজন বাড়াতে সহায়ক ঘী মেশানো পুষ্টিকর খাবার রেসিপি!
অপরদিকে, নারকেল তেলে বিদ্যমান ট্রাইগ্লিসারাইড স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী। চলুন জেনে নিই নারকেল তেল আপনার শারীরের জন্য কতটা এবং কেনো উপকারী।
১. শরীরের ফ্যাট বার্নিং বাড়ায়: নারকেল তেলের মিডিয়াম-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস (MCT) আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১৫-৩০গ্রাম এমসিটি খাওয়ার ফলে শরীর ৫% ক্যালরি বার্ন করে। আপনি যখন ওজন কমানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন তখন এই অতিরিক্ত ফ্যাট বার্নিং আপনাকে বিশেষ সাহায্য করবে। এই জন্যই ডায়েটে MCT ওয়েল বা নারকেল তেল খাওয়ার কথা বলা হয়।
২. ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই: নারকেল তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিডের ৫০%-ই লৌরিক অ্যাসিড। হজম হওয়ার পর লৌরিক অ্যাসিড মনোলিউরিন নামক যৌগে রূপান্তরিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে লৌরিক অ্যাসিড এবং মনোলিউরিন উভয়ই ভাইরাস, ছত্রাক এবং ব্যাকটিরিয়া সহ ক্ষতিকারক রোগ জীবাণুকে মেরে ফেলতে সক্ষম।
আরো পড়ুন : সাবুদানা (সাগু) কেন শিশুদের প্রথম খাদ্য খাওয়া উচিত?
ইস্ট সংক্রমণের উৎস ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস (Candida) এবং স্ট্যাফাইলোকোক্কাস অ্যারিয়াস (Staphylococcus) উভয়কেই লৌরিক অ্যাসিড এবং মনোলিউরিন প্রতিরোধ করতে পারে।
৩. ক্ষুধা হ্রাস করে: নারকেল তেলের ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এগুলি আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। MCT ওয়েল অন্যান্য ধরণের চর্বিগুলির চেয়ে আলাদাভাবে হজম হয়। এগুলি সরাসরি যকৃতে যায় এবং কিটোনে পরিণত হয়।
কিটোন হলো লিভারের এক ধরণের অ্যাসিড যা ফ্যাট থেকে শক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ব্যায়াম বা ডায়েটের সাথে একযোগে, বেশি পরিমাণে নারকেল তেল খাওয়া ওজন হ্রাস করতে খুবই কার্যকর। আর কিটোন যখন শরীরের ফ্যাট থেকেই এনার্জি দেয় তাই ক্ষুধা হ্রাস পায়। তাই যে সমস্ত লোকেরা সকালের নাস্তায় নারকেল তেল রাখে তারা সারা দিন খুব কম ক্যালোরি গ্রহণ করে।
আরো পড়ুন : বাচ্চাদের মাথা ন্যাড়া করলে চুল ঘন বা কালো হয়?
৪. খিঁচুনি কমায়: তথাকথিত "কিটো" বা কিটোজেনিক ডায়েট এখন খুব জনপ্রিয়। রক্তপ্রবাহে কিটোন উৎপাদন উচ্চ ফ্যাট গ্রহণের উপর নির্ভর করে। কিটো ডায়েট ওজন হ্রাস করে, তবে বিভিন্ন ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এই ডায়েট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এর মধ্যে একটি রোগ হলো মৃগী।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ চর্বি এবং কম কার্ব ডায়েটে থাকা মৃগী বাচ্চাদের মধ্যে খিঁচুনির ঘটনা অনেক কম। আসলে, নারকেল তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড সমস্ত বয়সের মৃগী রোগীদের কেটোসিস তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুন : আপনার শিশুর পানিশূন্যতা হচ্ছে! কিভাবে বুঝবেন?
৫. ত্বক ভালো রাখে: নারকেল তেল থেকে উপকার পাওয়ার জন্য যে এই তেল শুধু খেতেই হবে এমন নয়। এটি কসমেটিক হিসেবে বা বাহ্যিক ব্যবহারও জনপ্রিয়। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের জন্য লোশনের মতো এটি ত্বকে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে নারকেল তেল একজিমার লক্ষণগুলিকে কমাতে পারে।
সমস্ত বিশেষজ্ঞ একমত যে নারকেল তেল আপনার ত্বকের জন্য দুর্দান্ত উপকারী। নিয়মি ত্বকে মালিশ করলে শুকনো চুলকানি দূর হয় এবং ত্বক মসৃণ করে।