হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে জানুন!
- ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস
- জানুয়ারি ১৩, ২০২১
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে যা করবেন যেসব জিনিস থেকে হাঁপানির আক্রমণ শুরু হয় সেগুলো বাড়ি থেকে দূরে রাখুন। এজন্য হাঁপানি রোগীদের এলার্জি পরীক্ষা করে জানা দরকার তার কোন দ্রব্যাদি থেকে এলার্জি শুরু হয়। হাঁপানি রোগে আক্রান্তের অনেকেই পশুপাখির লোমে হয়ে থাকে। এসব প্রাণী বাড়ির বাইরেই রাখুন। বিছানা করুন প্লেন লিনেন দিয়ে। প্রতিদিন দুই বেলা ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা দরকার। রোগীদের বিছানার চাদর প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে অথবা প্রতিদিন রোদে শুকাতে হবে। যেসব জিনিস থেকে ধুলো ওড়ে সেগুলো নাড়াচাড়া করবেন না।
এসব ঝাড়ার সময় রোগীকে ঘরের বাইরে থাকতে হবে। কোনো ঝাঁজালো গন্ধ যেমন মসলা ভাজার গন্ধ, মশা মারার স্প্রে, পারফিউম যেন নাকে প্রবেশ না করে। ধুলো, ধোঁয়া, ঠান্ডা বা কুয়াশা লাগানো চলবে না। রাস্তার ধুলো, ঘরের পুরনো ধুলো, গাড়ির ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করুন। যারা বাইক অথবা নন-এসি গাড়ি চালান, তারা অবশ্যই মাস্ক পরে নেবেন।
আরো পড়ুনঃ ‘ডার্ক সার্কেল’ কমাতে সাহায্য করে এই খাবারগুলো!
ধূমপান বারণঃ সিগারেটের ধোঁয়া হাঁপানির কষ্ট সাংঘাতিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। শুধু হাঁপানিই নয়, ফুসফুস ও শ্বাসনালীসংক্রান্ত অনেক অসুখের অন্যতম কারণ ধূমপান। সিগারেটের ধোঁয়া থেকে প্রথমে ব্রঙ্কাইটিস, পরে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি হয়। যেখানে হাঁপানি রোগী থাকে সেখানেও কোনো স্মোকারের প্রবেশ নিষেধ। কারণ পরোক্ষ ধূমপানও হাঁপানির কষ্ট অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
শোবার ঘর রদবদল করুনঃ ঘর থেকে কার্পেট বের করে দিন। এগুলোতে প্রচুর ধুলো জমে। নরম চেয়ার কুশন ও বাড়তি বালিশও বের করে দিন। এগুলোতেও ধুলো জমে। তোষক ও বালিশে চেইনটানা বিশেষ ধুলোরোধক ঢাকা ব্যবহার করুন, তা না থাকলে অন্তত পাতলা রেক্সিনের কভার দিন। পরিষ্কার ও খোলা হাওয়ার জন্য জানালা খোলা রাখুন। ভাপসা ও দম বন্ধ লাগলে জানালাগুলো খুলে দিন, এমনকি রান্না করার সময় ধোঁয়া উঠলে কিংবা উগ্র গন্ধ ছড়ালেও তা করতে পারেন। কাঠ বা কেরোসিনে রান্না করলে ধোঁয়া বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটা জানালা অল্প খুলে রাখুন। যখন বাইরে গাড়ির ধোঁয়া, ফ্যাক্টরির দূষণ ধুলো বা ফুল ও গাছের রেণু বেশি থাকে, তখন জানালা বন্ধ রাখুন।
ব্যায়াম করুনঃ প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা ব্যায়াম করা খুব জরুরি। তবে একটা ব্যাপার ভুললে চলবে না, বেশি ব্যায়ামের জন্য যেন হাঁপানির টান না ওঠে। হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো- এগুলো কিন্তু হাঁপানি রোগীদের পক্ষে ভালো ব্যায়াম। হাঁটার সময়ে সামনে ঝুঁকে হাঁটবেন না। শিরদাড়া সোজা রেখে প্রতিদিন দুই-তিন কিলোমিটার উন্মুক্ত বাতাসে সমতলে হাঁটুন। এর সাথে করা দরকার গভীর শ্বাস নেয়ার ব্যায়াম। যেমন ধীরে ধীরে শ্বাস টানতে হবে, যতক্ষণ নেয়া যায়, তারপর যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস আটকে রাখতে হবে, ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। শিশুদের ব্যায়াম ও খেলাধুলার সময় সতর্ক দৃষ্টি রেখে দেখা উচিত যে, ওদের কোনো অসুবিধা বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। হলে খেলার আগে ওষুধ দিয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বর্ষায় আপনার চুলের যত্ন নিচ্ছেন তো?
টেনশনমুক্ত থাকতে হবেঃ কোনো কারণে ভয় পেলে, মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা শোক পেলেও হাঁপানির টান হতে পারে। তাই মনটাকে রাখতে হবে টেনশন ফ্রি, শরীর মন শিথিল করে দেয়া রপ্ত করতে হবে। হাঁপানি রোগীর অনুপস্থিতিতে কয়েকটি কাজ সেরে রাখুন। ঘরদোর মুছে ভ্যাকুয়াম করে বা ঝাঁট দিয়ে রাখুন, পোকামাকড়ের জন্য স্প্রে করুন, কড়া গন্ধযুক্ত রান্নাবান্না সেরে রাখুন, ঘরে ফেরার আগে হাওয়া খেলতে দিন।
পানিঃ হাঁপানি চিকিৎসা চলাকালে রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে দিন। কারণ শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে হাঁপানির ওষুধ কাজ করে না। এছাড়া পানির অভাবে কফ জমে যায় ও সহজে বেরোতে পারে না, ফলে শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যায়।
খাওয়া-দাওয়াঃ বেশি রাতে ভরপেট খেলে টান উঠতে পারে। তাই রাতে পেট ভরে ভুলেও খাবেন না। হাঁপানি রুখতে নিয়ম করে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে খেতে হবে। অকারণে তাড়াহুড়া করা চলবে না, ঝাল মসলাদার খাবারের বদলে বাড়িতে হালকা রান্না করা খাবার খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ফ্রিজ থেকে বের করে সাথে সাথে ঠান্ডা জিনিস খাওয়া উচিত নয়। রুম টেপারেচারে এলে তবেই খাবেন, ঠান্ডা কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ফ্রিজের পানি প্রচন্ড গরমেও খাওয়া উচিত নয়।
ঘরের তাপমাত্রাঃ শীতকালে ঘর গরম রাখতে পারলে ভালো হয়। বাতানুকূল ঘরের বাইরে বারবার যাতায়াত করা উচিত নয়। যন্ত্রের হাওয়াটা যেন সোজাসুজি গায়ে এসে না লাগে, এটাও দেখা প্রয়োজন। হাঁপানির আক্রমণ শুরু হলে চটপট তা সামলাতে চেষ্টা করুনঃ হাঁপানির আক্রমণ শুরু হওয়ার লক্ষণগুলো হলো... কাশি, শো শো শব্দ, বুকে চাপ সৃষ্টি, রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, যে জিনিস থেকে শুরু হয়েছে সেটি থেকে দূরে সরে যান। সালবুটামল-জাতীয় ওষুধের ইনহেলার ব্যবহার করুন প্রয়োজনে ৫ মিনিট পরপর। শান্ত থাকুন, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। যদি এতেও ভালো না হন, তাহলে ডাক্তারের কাছে জরুরি সহায়তার জন্য যান। যদি হাঁপানির এই বিপদসঙ্কতেগুলোর কোনো একটিও দেখেন তাহলে সাহায্য নিন।
- আপনার আরামের ওষুধ যদি খুব বেশিক্ষণ কাজ না করে বা তাতে একেবারেই উপকার না হয়।
- শ্বাস-প্রশ্বাস যদি দ্রুত ও জোরে জোরে হয়।
- যদি কথা বলতে কষ্ট হয়।
- ঠোঁটে বা আঙুলের নখ নীল বা ছাই রঙের হয়ে যায়।
- পাঁজরের চার পাশে ও চামড়া শ্বাস নেয়ার সময় ভেতরের দিকে টেনে ধরে।
আরো পড়ুনঃ খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়া কতটা ভালো, নাকি খারাপ?
- হঠাৎ পন্দন বা নাড়ির গতি অত্যন্ত দ্রুত হয়, হাঁটা চলা করতে কষ্ট হয়। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করবেন। অনেক সময় ডাক্তার ইনহেলার প্রেসক্রিপশন করেন কিন্তু রোগী বা রোগীর অভিভাবকেরা দ্বিধাদ্বনেদ্ব ভুগে থাকেন এটা ব্যবহার করবেন কি করবেন না। মনে রাখবেন, এটা একবার ব্যবহার করলে সারাজীবন নিতে হবে, বিশেষ করে যখন এক বছরের নিচের শিশুদের দেয়া হয়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের সর্বত্রই ইনহেলার ব্যবহার হচ্ছে। এতে ওষুধের পরিমাণ কম লাগে এবং কাজও হয় খুব তাড়াতাড়ি। তাই পেসারের মাধ্যমে শিশুদের ব্যবহার করাবেন। তা ছাড়া রোগীদের চিকিৎসায় অ্যালার্জির ধরন অনুযায়ী ডাক্তার ভ্যাকসিন দিলে তা ঠিকমতো দিতে হবে। অনেক ভ্যাকসিন নিয়েও দ্বিধাদ্বনেদ্ব ভুগে থাকেন।