শিশুর জন্যে মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা ও উপযোগিতা
- ডা : রীপা চক্রবর্তী
- জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
‘মায়ের দুধের বিকল্প নেই’ এবং এমন কোনোকিছুও এ জগতে নেই যার গুনাগুন মায়ের দুধের সমকক্ষ হতে পারে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের নিজেদের জন্যে বরাদ্দকৃত সময় দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত,বোধজ্ঞান হওয়া থেকে শুরু করে ক্যারিয়ার ও কর্মজীবনের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত বিভিন্নভাবে ভাগ হয়ে আমাদের বাস্ততারই জানান দিয়ে যায় নিয়ত। মানুষ তাই এখন সবকিছুই চায় সুলভ,যুগোপযোগী ও স্বল্পসময়ে কার্যকর। তাই ব্যস্ত ও কর্মজীবী মায়েদের জন্যে ফর্মুলা বা পাউডার মিল্ক উদ্ভাবিত হয়েছে ও বহুলাংশে জনপ্রিয়তার সাথে মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের সহায়ক এমন মনোভাবে বাস্তবতার সাথে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু যত উপযোগিতায় থাকুক না কেন,শিশুর জন্যে জন্মের পর থেকে এক বছর বয়স পর্যন্ত এবং যতদিন তার পাকযন্ত্র সম্পূর্ণরূপে সকল খাদ্যগ্রহণের জন্যে প্রস্তুত না হচ্ছে ততদিন সিনথেটিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরী প্রিজারভেটিভে সংরক্ষণ খাদ্য খেতে না দেয়াই ভালো। কোনো আজ এই আলোচনার অবতারণা করলাম তা নিম্নোক্ত কথাকলি দিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করছি।
প্রথমত,মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্যে সবচেয়েআদর্শ খাবার কারণ এতে শিশুর পরিপূর্ণবর্ধন ও পরিপুষ্টি সাধনের সকল উপাদান সঠিকপরিমানে প্রাকৃকিতভাবেই বিদ্যমান এবং কোনো অবস্থাতেই এর কোনো পরিবর্তন ঘটেনা। কেন এতো জোড় দিয়ে কথাটি বলছি তার কারণ হলো ,অনেকেই জানেন না যে মায়ের দুধ সুবিধামতো ফ্রিজ এ রেখে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়,ও গরম করা যায়। এতে এর গুনাগুনের কোনো পরিবর্তন হয়না। তাই কর্মজীবী কিংবা শারীরিকভাবে অসুস্থ মা সকলেই যদি হাতে অথবা ব্রেস্টপাম্প এর মাধ্যমে দুধ বের করে নিয়ে একটি পরিছন্ন পাত্রে নিয়ে ফ্রিজ এ ( ফ্রিজার এ নয় )রেখে দেন তবে তা ভালো থাকবে ও শিশুকে খাওয়ানোর আধ থেকে একঘন্টা পূর্বে বের করে নিলে বা বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে কিংবা হালকা গরম করে তারপর নির্দ্বিধায় শিশুকে খাওয়াতে পারেন।একদিনের দুধ পরের দিন বেশি হয়ে যাবে বা জ্বাল দেয়া দুধে শিশু পুষ্টি পাবেনা, এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারণা।
মায়ের দুধ সহজপাচ্য তাই শিশুচিকিৎসকগণের মতে,শিশুর ৬ ম্যাশ বয়স পর্যন্ত শুধুই বুকের দুধ এবং তার পরবর্তীতে ঘরে তৈরী পুষ্টিকর খাদ্য শিশুকে খেতে দেয়া উচিত যা শিশুর দ্রুত বেড়ে ওঠা,সুন্দর ত্বক,সুঠাম গঠন নিশ্চিতকরণ সর্বোপরি সঠিক বুদ্ধিমত্তা ও এর যথার্থ বিকাশসাধন করে। দ্বিতীয়ত,মায়ের দুধ সকল ধরণের ক্ষতিকারক ফ্যাট ও কোলেস্টেরোল মুক্ত ,সুলভ ও সকলরকমের কৃত্রিমতা বিবর্জিত।সর্বোপরি ,মা ও শিশুর বন্ধন দৃঢ়করণে অদ্বিতীয়।
ফর্মুলা মিল্ক সম্পর্কে আসল যেগুলো বিষয় লুকায়িত থাকে তা হলো :
প্রথমত ,ফর্মুলা মিল্ক সাধারণত অসুস্থ অথবা অপুষ্ট মা এর সহযোগিতা ও অপুষ্ট শিশু যাদের মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত প্রাপ্তি ঘটেনা,তাদের কথা মাথায় রেখে একটি কমপ্লেক্স প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সিনথেটিক প্রোটিন ,জরুরি মিনারেলস ও অন্যান্য পুষ্টিউপাদানগুলোর সমন্বয়ে তৈরী করা হয় যা শিশুর জন্যে সহজপাচ্য নয়। আর এখনো আমাদের মতো দেশগুলোতে ফর্মুলা মিল্ক এখনো সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি।ফর্মুলা মিল্ক অনেকেই পাউডার মিল্কের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে করেন,কিন্তু ফর্মুলা মিল্ক উন্নত দেশগুলোতে একবছরের নিম্নের শিশুদের উপযোগী করে কৃত্রিমভাবে তৈরী হয়। কিন্তু পাউডার মিল্ক গরুর দুধ থেকে ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে ( জলীয় অংশ আলাদা করে,দুধের সারবস্তু অবশিষ্ট রেখে,গুঁড়ো হিসেবে ) তৈরী হয় যা শিশুদের উপযোগী নয়,বরং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে উপযোগী।
দ্বিতীয়ত ,এই দুধ তৈরী করার আধঘন্টা থেকে একঘন্টার মধ্যে শিশুকে খাওয়াতে হয়,অবশিষ্ট দুধ কোনোভাবেই গরম করা উচিত নয়,তাতে বিষক্রিয়া তৈরী হতে পারে এবং ফ্রিজে রেখেও সংরক্ষন করা যায় না। এই দুধ শিশুর পেট অনেকক্ষন ভরিয়ে রাখে,ফলে শিশুর রুচি কমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরী হয়.যদিও ফর্মুলা মিল্ক শিশুকে মা ছাড়াও পরিবারের সবাই সুবিধামতো খাওয়াতে পারেন,এতে মা কিছুটা অবসর পান বা কাজের সময়প্রাপ্তি সহজ হয়। তথাপি এই দুধে থাকা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরোল ও ফ্যাট শিশুকে আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থবান করে তুললেও অপরবর্তীতে তা শিশুর বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
পরিশেষে এটুকুইবলতে পারি,একজন সচেতন মা হিসেবে আপনি যদি নিয়ম মেনে বুকের দুধ ও পরবর্তীতে ঘরে তৈরী সুষম খাদ্য ও ক্ষেত্রবিশেষে সুস্বাস্থ্য ও সঠিকবৃদ্ধির জন্যে মায়ের বুকের দুধের সাথে সহায়ক শক্তি হিসেবে ফর্মুলা/পাউডার মিল্ক ব্যবহার করতেকরেন তবে তা শিশুর জন্যে সবচেয়ে ভালো ও যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত হবে যার সুফল আপনি চোখের সামনেই দেখতে পাবেন একটি পুষ্ট ও বুদ্ধিদীপ্ত সন্তানের সুন্দর কার্যাবলীর মাধ্যমে।