যে গাছেরা গরমে আপনার ঘর ঠান্ডা রাখবে!
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- জুন ১৫, ২০২০
গাছের উপকারিতার শেষ নেই। অনেক উপকারের পাশাপাশি গাছ গরমে ঘরও ঠান্ডা রাখে। গাছ শ্বসন প্রক্রিয়া চলাকালীন বাতাসে অতিরিক্ত জল বাষ্প করে ছেড়ে দেয়। গরমে ঘর ঠান্ডা রাখতে যে গাছগুলো রাখতে পারেন তার বিস্তারিত জেনে নিন :
অ্যালোভেরা : ঘৃতকুমারী যার ইংরেজি নাম অ্যালোভেরা। সবার কাছে এটি অ্যালোভেরা নামেই বেশি পরিচিত। ত্বক ও চুলের বিশেষজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি এই বিশেষ গাছ পরিবেশ শান্ত করতেও খুব ভালো কাজ করে। অ্যালোভেরা (aloe vera) পাতায় পানির পরিমাণ প্রচুর। অ্যালোভেরা বাতাস পরিশোধন এবং ঘর ঠান্ডা করার আদর্শ গাছ। ঘর পরিষ্কারক ও রঙয়ের সাথে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে ফরমালডিহাইড ও বেনজিন। অ্যালোভেরা এগুলোকে পরিষ্কার করে। সবথেকে ভালো হয় যদি অ্যালোভেরাকে কোনো আলোকিত জানালার পাশে রাখা যায়। বাতাস পরিষ্কার করার সাথে সাথে অ্যালোভেরা কিন্তু কাটাছেঁড়ার জন্যও উপকারী এবং এর রক্ষণাবেক্ষণও কম করতে হয়। ৬,০০০ বছর আগ থেকে মিশরের মানুষেরা এই উদ্ভিদকে নানা কাজে ব্যবহার করে এসেছে, তারা একে ‘অমরত্বের উদ্ভিদ’ বলত।
স্পাইডার প্ল্যান্ট : বাসায় গাছ রাখার মতো আলো আসে না? গাছের পরিচর্যা করার মতো সময় হাতে নেই, বাসার পোষা প্রাণীর দৌরাত্ম্যে টবের সব গাছ মরতে বসেছে? চিন্তা করার দরকার নেই, এই গাছটি আপনার জন্যই। মাঝখানে হলদে সবুজ, ধারগুলো গাঢ় সবুজ সুন্দর এই গাছটিতে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। চামড়া, ছাপা হওয়া ও রাবারের পণ্যের সাথে আমাদের ঘরে আসে ফরমালডিহাইড, জাইলিন, কার্বন মনোক্সাইড ও বেনজিন। ঘরে এই গাছটির উপস্থিতি অনেকাংশেই কমিয়ে দেবে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিককে। এই গাছকে সংখ্যায় বৃদ্ধি করা খুবই সহজ। ঠান্ডা থেকে কক্ষ তাপমাত্রা সব অবস্থায়ই এরা চমৎকার মানিয়ে নেয়, ভালোবাসে শুকনো মাটিতে থাকতে। উজ্জ্বল আলোতেই এরা সবচে’ ভালো জন্মায়, কিন্তু আপনি এদের রাখতে পারেন সাধারণ শহরের ঘরেই।
শাশুড়ির জিহ্বা : এই গাছের নামটাই একেবারে আলাদা। শাশুড়ির জিহ্বা (mother-in-law’s tongue) নামের অনন্য এই উদ্ভিদ বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ টেনে নেয় এবং বাতাসকে তাজা করে, অক্সিজেন এবং আর্দ্রতা বাড়ায়। ধারালো পাতার জন্যই বোধহয় এদের আরেক নাম ‘শাশুড়ির জিহ্বা’! এরকম একটি গাছকে টবে করে বাথরুমে রেখে দিন, অন্ধকার আর জলীয়বাষ্পপূর্ণ পরিবেশে এরা সুন্দর বেড়ে উঠবে এবং ঘরকে রাখবে শীতল ও ঠান্ডা।
পিস লিলি : সাধারণত এরা লিলি নামেই আমাদের দেশে বেশি পরিচিত। কালচে সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের কনট্রাস্ট আপনার মন কাড়তে বাধ্য। অনেক সহজেই বাঁচিয়ে রাখা যায় গাছটিকে। সাধারণ অবস্থায় এরা ১২-১৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গরমকালের শুরুতেই সাধারণত ফুল দিলেও সারাবছর ধরেও ফুল দিতে দেখা যায় এদেরকে। নাসা গবেষণায় এদেরকে ‘বাতাস পরিষ্কারক’ উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করেছে। এরা আশেপাশের বাতাস থেকে ফরমালডিহাইড, বেনজিন ও কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করে। উদ্ভিদটি শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালে না রাখাই ভাল। বেশিরভাগ সময়ে উদ্ভিদটির মৃত্যুর কারণ হয় অতিরিক্ত পানি দেয়া। পরিমিত পানি ও দিনের কিছুটা সময় উজ্জ্বল আলোতে থাকতে ভালোবাসে গাছটি।
মানি প্ল্যান্ট : মানি প্ল্যান্ট হলো ঘরে রাখার জন্য সর্বকালীন জনপ্রিয় গাছ। এই গাছ সহজেই পাওয়া যায়। বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের জলবায়ুতে অভ্যন্তরীণ কোনো স্থানকে শান্ত রাখার জন্য এটি বেশ ভালো। পানিতে বা মাটিতে, দু’ভাবেই গাছটি লাগাতে পারেন। সহজে বেড়ে চলে, আর সহজলভ্য বলে এর কদর সবখানেই আছে। শুধু একটি পাত্রে লাগিয়ে পাত্রটি ঝুলিয়ে দিন, গাছটি সবুজ লতার ঝালর তৈরি করে আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে। গাছটি উজ্জ্বল আলো ভালোবাসলেও, অন্ধকারে এর কোনো সমস্যা হয় না। অন্ধকারেও সবুজ থাকতে পারে বলে, এর আরেক নাম ‘শয়তানের বৃক্ষ’ (ডেভিলস আইভি)। যদি মাটিতেই লাগান, তবে অতিরিক্ত পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই, পানিতে রাখলেও পানি পরিবর্তন করবেন। নাহলে শেকড়ে পচন ধরতে পারে।
ইংলিশ আইভি : গাছটি পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাসের দিন ঘর সাজাতে ব্যবহার হয়। অনেক দ্রুত বেড়ে গিয়ে অন্য গাছপালাকেও লতায় ছেয়ে ফেলে বলে অনেকেই একে ঘরে রাখতে চান না। ছোট পাত্রে রাখা ইংলিশ আইভি আপনার ঘরে খুব বেশি বাড়তে পারবে না। ছেঁটে রাখার মাধ্যমেও একে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বোনাস হিসেবে এরা ঘরের ক্লিনারের সাথে আসা ফরমালডিহাইডকে শুষে নিয়ে আপনাকে দেবে বিশুদ্ধ বাতাস।
সূত্র : bivinno