সাথী সিরিয়ালে অভিনয় নিয়ে কথা বললেন অভিনেতা রাজা বিশ্বাস
- সঙ্গীতা চৌধুরী
- জানুয়ারি ১, ২০২৪
৫০০ এপিসোডের পর সান বাংলার চ্যানেল টপার ধারাবাহিক সাথী টি আর পি তে পিছিয়ে পড়ে! এই সময় সাথী টিআরপিতে কখনো দুই কখনো তিন নম্বর স্থানে ছিল, অনেকেই তখন ভেবেছিলেন সাথী আর কখনোই তার পুরোনো জায়গা ফিরে পাবে না, কিন্তু ধারাবাহিকের রাইটার সুদীপ পাল গল্পে নিয়ে এলেন একটা নতুন মোড়, যা সাথীকে আবার চ্যানেল টপার করে দিলো।
এই নতুন ট্র্যাকটিতেই রোশনী, রাজার মতো চরিত্রেরা এলো। রোশনির ট্র্যাকে ধারাবাহিকের টিআরপি বেড়ে আবার চ্যানেল টপার হলো সাথী আর সেই ৫০০ পর্বের পর থেকে আজ ৬৮৮ পর্ব পর্যন্ত সাথী চ্যানেল টাপার। কী ছিলো এই ট্র্যাকে? ধারাবাহিকের নায়িকা সুমেধা ঠিক বিপরীত চরিত্রের অথচ হুবুহু একই রকম দেখতে রোশনীর গল্প আর রোশনীর বন্ধু রাজা যে নীরবে রোশনিকে ভালোবেসে গেছে।
এই রোশনী আবার একসময় সাথী সেজে ওমের জীবনে গিয়েছিলো, কিন্তু তারপর জানা যায় যে রোশনী আর বৃষ্টি আসলে দুই বোন। তারপর ধারাবাহিকে দেখানো হয় রাজা চরিত্রের মধ্যে একটা নীরব ভালোবাসা তৈরি হয়েছে রোশনীর প্রতি। সুমেধা(বৃষ্টি)-ওমের গল্পের পাশাপাশি রাজার রোশনীর প্রতি নীরব ভালোবাসা ও দর্শক উপভোগ করতে থাকেন।
এই রাজা চরিত্রটি করেছেন রামপ্রসাদের কমলাকান্ত চরিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা রাজা বিশ্বাস। কীভাবে অভিনেতা রাজা বিশ্বাস রাজা চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তাই উঠে এসেছে তার দেওয়া সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সঙ্গীতা চৌধুরী।
সঙ্গীতা চৌধুরী: সাথী সিরিয়ালে কীভাবে সিলেক্ট হলেন?
রাজা: সিলেকশন নিয়ে যদি বলি, তাহলে বলতে হয় সেটা স্যার সুদীপ পাল স্যার আর আমার রাজা নামটির জন্য। কারণ লেখক সুদীপ পাল স্যার একদিন ফোন করে বলেন এই কাজটির বিষয়ে, তখন কথায় কথায় জানতে পারি যেই চরিত্র টি আমাকে করতে হবে সেই চরিত্রের নাম "রাজা" আর সুদীপ স্যারের কোথাও গিয়ে মনে হয়েছিল যে, এই চরিত্রটি আমাকে মানাবে। কারণ একজন লেখক যখন কোনো চরিত্র সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সবচেয়ে ভালো বোঝেন কোন চরিত্র কাকে বেশি মানাবে। যদিও এই বিষয়ে ডিরেক্টর থেকে শুরু করে চ্যানেল এর যিনি কাস্টিং করেন, ওনারাও খুব ভালো বোঝেন। এরপর আরো দু তিনবার ফোন আসে, তারপর কাজটি তে আমি সিলেক্ট হই।
সঙ্গীতা চৌধুরী: সাথী সিরিয়ালে শ্যুট করতে গিয়ে ঘটা মজা/ভয়ের কিছু ঘটনা?
রাজা: মজা আর ভয় দুটি সমানভাবে কাজ করেছে। প্রথম বার ন্যাশনাল চ্যানেলে এতো বড়ো একটি চরিত্র করবো বলে, যদিও এর আগেও ন্যাশনাল চ্যানেলে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু, "রাজা" চরিত্র বলতে গেলে ন্যাশনাল চ্যানেলে আমার প্রথম বড়ো ব্রেক। তাই খুব মজা হচ্ছিলো বা বলতে পারেন খুব এক্সসাইটেড ছিলাম। আর ভয় বলতে গেলে, আমাকে বলা হয়েছিল যদি "রাজা" চরিত্র টি ভালো করে করতে পারি, তাহলে চরিত্র টি থাকবে না হলে আমাকে বা আমার চরিত্র টি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এই বিষয়টি আমার কাছে ভয়ের থেকেও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের ছিলো। যাই হোক রাজা চরিত্রটি এখনো পর্যন্ত আছে। আরও একটি বিষয় যেখানে সুদীপ পাল স্যারের মতো একজন বড়ো গুণী লেখক আমার কথা ভেবে আমাকে সুযোগ টি দিয়েছেন, তখন থেকেই আমার দায়িত্ব আরো দশগুণ বেড়ে গিয়েছিলো, আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, আর "রাজা" চরিত্র টি এতোটাই সুন্দর আর ভালো যে আমার কাজ করতে ভীষণ মজা লাগে তবে চরিত্রটির পুরো ক্রেডিট সুদীপ স্যার। আর এই প্রসঙ্গে আরো দুজন মানুষের কথা বলবো, আমার ডিরেক্টর স্যার আকাশ সেন আর পরিচালক অতনু দেব যাদের সাহায্য ছাড়া এই চরিত্রটি করা অসম্ভব ছিল।
সঙ্গীতা চৌধুরী: সাথীতে কাজ করতে করতে স্মরণীয় কোনো ঘটনা ঘটেছে?
রাজা: প্রতিদিন রাজা চরিত্রে কাজ করাটাই আমার কাছে স্মরণীয় ঘটনা,তবে একটা বিশেষ দিনের কথা বলতে পারি, দুর্গাপুজোর পর শ্যুটিং যখন শুরু হয়, তখন একদিন একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী রুমকি চ্যাটার্জী (আবীর চ্যাটার্জী'র মা) আমাকে এসে সবার সামনে বলেন, আমার কাজ ওনার খুব ভালো লাগছে। সেটা ছিল আমার অনেক বড়ো পাওয়া। কারণ যাদের কে দেখে শেখা,বড়ো হওয়া, সেই গুণীজনের থেকে প্রশংসা পাওয়া আমার কাছে অনেক বড়ো ব্যাপার ছিলো।
সঙ্গীতা চৌধুরী: সাথী সিরিয়ালে করতে করতে কীভাবে রামপ্রসাদে ডাক পেলেন?
রাজা: রামপ্রসাদ সিরিয়ালটি করতে যাওয়ার আগে, আরো তিন বার ডাক এসেছিলো ওখান থেকেই। কিন্তু, কোনো না কোনো কারণে আমার কাজ না হয়ে যাচ্ছিলো। ফাইনালি ডাক এলো। হয়তো এখানে এতো বড়ো একটি চরিত্র করছি বলে ওনারাও কোথাও ভরসা পেয়েছিলেন যে "কমলাকান্ত" চরিত্রটি আমি পারবো। বাকি তো ওনারা সুরীন্দর ফিল্মস, নৈরিতা দত্ত ম্যাম আর স্টার জলসাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আমাকে ওত বড় সুযোগ দিয়েছেন বলে।
সঙ্গীতা চৌধুরী: আজ আপনাকে যে এত মানুষ চেনে, এর পিছনে কাদের অবদান আছে বলে মনে করেন?
রাজা: সবার প্রথমে যিনি এই চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা সুদীপ পাল স্যারের অবদান আছে, যিনি আমাকে মনে করেছেন যে আমি এই চরিত্রটি করতে পারবো, ওনাকে শুধু ধন্যবাদের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারা যায় কি জানি না।
এরপর পুজা চ্যাটার্জী ম্যাম যিনি আমাকে এই "সাথী" সিরিয়ালের "রাজা" চরিত্র টি করার সুযোগ দিয়েছেন। কারণ যে কোনো চ্যানেলে একটি চরিত্র সিলেক্ট হওয়ার পেছনে ওনাদের মতো মানুষের অবদান সব থেকে বেশি। ধন্যবাদ জানাই সান বাংলা চ্যানেল কে। ধন্যবাদ জানাই প্রডিউসার ফিরদৌস হাসান স্যার, প্রবাল স্যার আর ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনকে আর ধন্যবাদ জানাই চুমকি ভট্টাচার্য ম্যাম কে।
ধন্যবাদ জানাই আমার ডিরেক্টর স্যার আকাশ সেন কে ও সহ পরিচালক অতনু স্যারকে এবং প্রীতম ব্যানার্জিকে। ধন্যবাদ জানাই আমার কো-এক্টর কুশল চক্রবর্তী, অনীর্বান দা, অনুমিতা(হিরোইন), ইন্দ্র (হিরো) কে, রুমকি চ্যাটার্জী কে, এছাড়াও আমার প্রত্যেক কো-এক্টর ও পুরো ডিরেক্টোরিয়াল টিম আর পুরো "সাথী'র" টিম কে।
সঙ্গীতা চৌধুরী: আপনার স্বপ্নের চরিত্র?
রাজা: স্বপ্নের চরিত্রের লিস্ট অনেক বড়ো তাই শুরু করলে হয়তো শেষ হবে না। তবে আমার স্বপ্নের চরিত্র টির মধ্যে "রাজা" টিও পরে। কারণ প্রত্যেক অভিনেতাই স্বপ্ন দেখেন , চরিত্র টি এমন হবে যাতে অভিনয় করার সুযোগ থাকবে আর সেখানে আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান এই চরিত্রটি পেয়ে, এখানে আমি এক প্রেমিক যে রোশনীর জন্য ভালোবাসার জন্য সবকিছু করতে পারে। কিন্তু তাকে যে ভালোবাসে সেই কথা মুখ ফুটেই বলতে পারে না।
সঙ্গীতা চৌধুরী: আপনার বিপরীতে কাজ করা অনুমিতার সাথে আপনার অফস্ক্রিন বন্ডিং কেমন?
রাজা: অফ স্ক্রিন বন্ডিং বলতে গেলে, আমি "সাথী " পরিবারে ৫০০ এপিসোডের পর যুক্ত হয়েছি কিন্তু অনুমিতা সহ সাথী পরিবারের সবাই আমাকে এতটাই ভালবাসে যে ওরা কখনও আমাকে এটা মনে করতেই দেয় নি যে, আমি এতোদিন পর এই প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হয়েছি। শ্যুটিং এর মাঝে সবার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প, আলোচনা, আড্ডা গান সবটাই হয়, অনুমিতা মানুষ হিসেবেও খুব ভালো।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সাথী এমন একটি ধারাবাহিক যাকে সান বাংলা বিভিন্ন সময় স্লট চেঞ্জ করে কখনো সন্ধ্যে সাতটা কখনো রাত্রের স্লটে দিয়েছে কিন্তু সাথী সব সময় তার সেরাটা দিয়েছে আর এই সেরাটা দেওয়ার পিছনে অবদান রয়েছে পুরো টিমের।