গুরু কৃপাহি কেবলম কেন বলা হয় ? এই কথার অর্থ জানেন ?
- সঙ্গীতা চৌধুরী
- জুন ৭, ২০২১
দীক্ষা সম্পর্কে অনেকেই উৎসাহ বোধ করেন। অনেকেই দীক্ষা গ্রহণ করতে চান কিন্তু দীক্ষা কী দীক্ষাগুরু কী এই সমস্ত বিষয়ে অনেকেই জানেন না। আজকে সকলকে এই সমস্ত বিষয়ই বলবো। দীক্ষা হলো আধ্যাত্মিক পথে উত্তরণের একটি সোপান। দীক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক পথের যাত্রা শুরু হয়। তবে দীক্ষা গ্রহণ করলেই যে কোন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক মার্গ লাভ করেন না। দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরুর মধ্যে পার্থক্য থাকে। সেই পার্থক্যই আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করবো।
প্রতিটি মানুষের জীবনে দু'ধরনের গুরু আসেন। একজন হল শিক্ষাগুরু অপরজন হন দীক্ষাগুরু। শিক্ষাগুরু আমাদের পার্থিব জীবনের জ্ঞান দান করে থাকেন। আমাদের মা,বাবা, সমাজ, সংসার, পরিবেশ, প্রকৃতি, বন্ধুবান্ধব,ভাই বোন,দাদা-দিদি ইত্যাদি যেসকল মানুষের কাছে আমরা জাগতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয় তারা হলেন শিক্ষা গুরু। আর কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য রুপী ষড়ঋপু নিয়ন্ত্রণে যিনি আমাদের পথ দেখান তিনি হলেন দীক্ষাগুরু।
আরো পড়ুন : গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে আবার কি হতে পারে?
উপরিউক্ত ষড়রিপু সকলের অন্তরে বিদ্যমান, এই ষড়রিপু গুলি সব সময় আমাদের আকর্ষিত করছে কিন্তু এই রিপুগুলি আমাদের শান্তি পেতে দেবে না। তাই এইগুলি থেকে মুক্ত না হওয়া অবধি আমরা শান্তি পাব না। আর এই রিপু গুলো থেকে তখনই মুক্তি হওয়া যাবে যখন আমরা আধ্যাত্মিক জীবনের পথে পা বাড়াবো। আধ্যাত্মিক জীবনের পথে পা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই রিপু গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই যাবতীয় রিপু নিয়ন্ত্রণেই সহায়তা করেন আমাদের দীক্ষাগুরু।
গুরু শব্দের তিনটি বর্ণ আছে 'গ', 'র' ও 'উ'। গ শব্দের অর্থ সিদ্ধিদাতা, র তে বোঝায় পাপনাশক ও উ শব্দতে মঙ্গলময় শিবকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ যিনি মঙ্গলময় শিবরূপে, আমাদের সকল পাপ নাশ করেন ও ইষ্ট সাধনার পথে আমাদের মার্গ দর্শন করেন বা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যান তিনি আমাদের দীক্ষাগুরু। দহ+মন্+আ=দীক্ষা।
আরো পড়ুন : আপনার কি দুধ চা ছাড়া চলেই না? জানুন বেশি দুধ চা খাওয়ার ক্ষতি সম্পর্কে
তাই বলা হয় আমাদের আজন্ম সঞ্চিত সংস্কার সমূহ দগ্ধ করে সত্যের বা পরমেশ্বরের পথে চলবার সামর্থ্য অর্জন ও পরম মুক্তির পথে অগ্রসর হওয়াকেই দীক্ষা বলা হয়।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন যে,“গুরু হলো সেই ঘটক, যে কিনা ভক্তের সাথে ভগবানের যোগাযোগ করিয়ে দেয়।”ঠিক যেমন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাহায্যেই স্বামী বিবেকানন্দের আত্মদর্শন ও ভগবৎদর্শন সম্ভবপর হয়েছিল ঠিক সেইরকম গুরু সবসময় আত্মদর্শন ও ভগবৎ দর্শনে সহায়তা করেন। গুরু হলেন সেই সেতুটির মতো যে সেতুর একপ্রান্তে ভগবান থাকেন আর অপর প্রান্তে শিষ্য বা ভক্ত।গুরু কৃপা ছাড়া শিষ্য র ভগবৎ প্রাপ্তি হয়না। তাই বলা হয় গুরু কৃপাহি কেবলম।
আরো পড়ুন : রাতে ঘুম ভালো হয় কলা খেলে