বিয়েটা হোক বুঝে শুনে!
- নিশীতা মিতু
- ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
মানুষের জীবন একটা সময় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদিকে থাকে সত্ত্বা আর এক দিকে থাকে সমাজ। হয়ত নিজ সত্ত্বা চায় নিজের মত বাঁচতে কিন্তু সমাজ চায় তার নিয়মে বাঁচতে। আমাদের দেশে একটা ছেলে রাস্তায় একটা মেয়ের কপালে চুমু খেলেও সেটা খুব বেশী দৃষ্টিকটু এটাই স্বাভাবিক কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই ইচ্ছে হলেই ছেলে মেয়ে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে আবেগ বিনিময় করতে পারে। সেটা তাদের নিয়ম।
আমাদের সমাজে বুড়ো আঙুল দেখানো মানে, কচু! তুই কিছু পারিস না। কিন্তু অনেক দেশেই এর মানে হল, বাহ, বেশ। তুমি খুব ভালো করেছো!
কারো দেশের বুলি, কারো দেশের গালি। এই হল কথা। যাই হোক, সমাজের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়। আমরা সামাজিক জীব। আমাদের সমাজে একটা মেয়ে চাইলেই বিয়ে করতে পারেনা আবার চাইলেও বিয়ে ছাড়া সারা জীবন কাটাতে পারেনা। যদি তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায় তবে অনেকে ই বলবে, "নিশ্চয়ই মাইয়া খারাপ কাম করসে, তাই বাপ মা মান সম্মানের ভয়ে বিয়া দিয়া দিসে!" যদি বিয়ে না হয় তাহলে বলবে, "নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে। তাই এই মাইয়ারে কেউ বিয়া করতে চায়না"
আচ্ছা বিয়ে আসলে কি? কোন সামাজিক বন্ধন? ছেলে মেয়ের থেকে দায়মুক্ত হবার উপায়? শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আইনত ও ধর্মসম্মত ইয়েস কার্ড? না কি অন্য কিছু?বিয়ের কথা বলতে গেলে যেই দুটি শব্দ চলে আসে তা হল, প্রেম আর ভালোবাসা। আসলে আমরা প্রকৃতির নিয়ম কিছুই বুঝি না। সে যে আমাদের নিয়ে কি খেলা খেলে তাও বুঝিনা। হুমায়ুন আহমেদ স্যার নীল অপরাজিতা বইয়ে বলেছিলেন,প্রকৃতি দুইজন মানুষের মন নিয়ে সুন্দর একটা নকশা আঁকে। তারপর সেই নকশাটাকে দুই ভাগ করে দুজনের কাছে দিয়ে দেয়। ছেলেটা তার নকশার বাকী অর্ধেক খুঁজে বেড়ায়। মেয়েটাও ঠিক তাই।
খুঁজতে খুঁজতে হয়ত কোন এক নকশা এক ই রকম লাগে। তারা ধীরে ধীরে কাছে আসে। যদি নকশা সত্যিই মিলে যায় তবে তারা প্রেম করে, ভালোবাসে বিয়ে করে।বেশীরভাগ সময়ই তারা কাছে এসে বুঝতে পারে দেখতে একরকম হলেও নকশাটা ভিন্ন। অর্থাৎ একজনের নকশার সাথে আরেকজনের নকশা মিলে না।এই পর্যায়ে তারা যদি প্রেম/ভালোবাসা স্টেজে থাকে তাহলে একজন আরেকজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সঠিক নকশা খুঁজে বেড়ায়। আসলেই তাই।কিন্তু অনেকেই এই পর্যায় বিয়ে করে ফেলে। তারাই সবচেয়ে বেশী সমস্যাইয় পড়ে। নকশার মিল না হওয়ার কারনে তাদের মিলও হয় না এদিকে সমাজ বা লোক লজ্জার ভয়ে তারা আলাদাও হতে পারে না।
প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় তারা নিঃশেষ হয়ে যায়। সবাই হয়ত ভাবে তারা সুখী দম্পতি কিন্তু আসলে তারা দাম্পত্যের কোন বৈশিষ্ট্যই পালন করে না। তার মধ্যে যদি স্বামী স্ত্রী দুজনই চাকুরীজীবী হয় তাহলে তো কথা ই নেই। বিয়ে দিয়েই যদি সব সমস্যার সমাধান হত তবে কোন বিবাহিত পুরুষ কখন ও পতিতালয়ে যেত না। কোন নারী পরকীয়া করত না। ডিভোর্স নামক শব্দটা সমাজে এত প্রচলিত হতনা। কোন এক পুরুষ হয়ত ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছেন তাকেই একটা সময় দূরের মানুষ ভাবেন। তাকে পাশে পেয়েও তার কোন কামনা জাগেনা। আপনি হয়ত বলবেন, "ব্যাটার মেশিনে সমস্যা" কিন্তু ভেতরের কথা ভিন্ন। হয়ত সেই নারীও তাকে চান না।
ঐ যে তাদের নকশা দেখতে অনেকটা এক হলেও ভিন্ন। এই পার্থক্যটা বোঝার আগেই তারা বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে। সমাজের ভয়ে দুজন চাইলেও আলাদা হতে পারছেনা। তাই তাদের সত্ত্বা আর সমাজের মাঝে বেছে নিতে হয় সমাজকে। নিজ সত্ত্বার কবর রচনা করে সমাজে চলে তারা। এভাবে সমাজের শত মানুষ শারীরিক ভাবে জীবত থাকলেও সত্ত্বার দিক থেকে মৃত বলেই বিবেচিত হয়।