একা থেকেও কিভাবে হাসি-খুশি থাকা যায়?
- ফারজানা আক্তার
- সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
জীবনে কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন আমাদের একা হয়ে যেতে হয়, অথবা যদি একটু অন্যভাবে বলি কিছু সময় নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য একা থাকতে হয় অথবা পরিস্থিতি বাধ্য করে।
অনেকে আবার অনেকের মাঝে থেকেও একাকিত্ব অনুভুব করে। নিজেকে খুঁজেও পায় না, অন্যদের মাঝে স্বস্তিও পায় না। আচ্ছা! একাকিত্ব মানেই কী মন খারাপ করে বসে থাকা? নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করা? নিজেকে গুড ফর নাথিং ভাবা?
মোটেই তা নয়। আজ এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা সঠিকভাবে করতে পারলে আপনার একাকিত্ব হয়ে উঠবে মধুর। এই কাজগুলো নিয়মিত করতে পারলে একাকিত্ব শুরুর সময়ে যে আপনি ছিলেন, কিছুদিন পর সেই আপনি সম্পূর্ণ বদলে যাবেন। নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন অন্য এক উচ্চতায়।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে পরবর্তীতে আবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
১। আপনি কিসে আনন্দ পান সেই বিষয়গুলো আগে খুঁজে বের করুন। কোন কাজগুলো করার সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেগুলো দিয়ে শুরু করুন। আমরা মনে করি আমরা নিজেদের সম্পর্কে সব জানি, নিজেদের খুব ভালো বুঝি। কিন্তু সত্যিই কি তাই? একাকী সময়ে যখন নিজেকে নিয়ে
ভাববেন তখন বুঝতে পারবেন আসলে আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবি এবং সত্যিকার অর্থে আমরা আসলেই যা; তার সাথে বিশাল পার্থ্যক।
নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, চাকরি, শখ, প্যাশন এসব নিয়ে ভাবতে পারেন। নিজের ভিতরের আমিটার সাথে ভালোমতো বোঝাপড়া করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২। শেখার কোন শেষ নেই। নিজেকে আরো যোগ্যতাসম্পূর্ন হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন কিছু শিখে নিতে পারেন। অবশ্যই ভালোবেসে আনন্দ নিয়ে শিখতে হবে। অন্যথায় আনন্দ পাওয়ার বদলে বিরক্তই হবেন।
ফ্লোরিডায় অবস্থিত একজন সাইকোথেরাপিস্ট এমি মরিনের একটি সুন্দর কথা আছে। সেটি হলো, “এই সময়ে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হল আপনি নতুন কিছু শেখার সময়ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন।”
আরো পড়ুন: ডিহাইড্রেশনের কিছু লক্ষণ জানুন
৩। একাকিত্বের সময়ে কোন কিছু নিয়ে নিজেকে প্রেশার দিবেন না। যে কাজ করতে ভালো লাগে, যতটুকু ভালো লাগে ততটুকুই করবেন। এবং সেই কাজটুকু আনন্দ নিয়ে করবেন। মেডিটেশন বা ইয়োগা করতে পারেন। মেডিটেশন এবং ইয়োগা শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য বেশ
কার্যকর।
রচেস্টার ইউনিভার্সিটির সামাজিক মনোবিজ্ঞান গবেষক থাই নুগেইন আবিষ্কার করেছেন যে একা সময় কাটানো বেশ উত্তেজনাপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি বলেন, “এই সময়ে আপনি নিজের মানসিক চাপগুলোকে বিভিন্ন ধরণের কাজের মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন।”
৪। একাকী সময় নিজের পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিন। ব্যস্ততার সময়গুলোতে পরিবারের সাথে প্রয়োজন ছাড়া তেমন হয়তো কথা হয় না, আড্ডা হয় না। মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করুন। সেই সময় মায়ের সাথে নানান বিষয়ে কথা বলতে পারেন। ছোট ভাই - বোনদের সাথে নিয়ে তাদের পড়াশোনার কী খবর সেই বিষয়ে আলাপ করতে পারেন। বাবার সাথে টিভি দেখতে দেখতে কোন একটি টক শো বা রাজনৈতিক আলাপ করতে পারেন। নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী আরকি! সবার তো আর এক বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগবে না।
অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং দ্য হ্যান্ডবুক অন সলিউডির সহ-সম্পাদক রবার্ট কোপলান বলেছেন, “সবসময় এটা আপনার বিশ্বাস করতে হবে যে, আপনি এখন একাকী সময় পার করছেন ঠিক। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে আপনি আদতে একজন একাকী মানুষ।”
আরো পড়ুন: শিশুর কানের সংক্রমণ হলে যা করবেন
৫। নিজের পছন্দের - অপছন্দের কাজের তালিকা তৈরী করুন। এবং নতুন আর কোন কাজগুলো করতে চান সেটার তালিকাও তৈরী করুন। মনের পাশাপাশি শরীরেরও যত্ন নিতে হবে। তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। জ্ঞানের চর্চার পাশাপাশি শরীরেরও চর্চা করতে হবে।
এক গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতিদিন নিজের জন্য অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট সময় দেওয়া উচিত। কিন্তু সেটা কি আমরা দেই? মনে রাখতে হবে নিজে ভালো থাকলে সকলকে ভালো রাখা যাবে। নিজের জন্য ভালো কিছু করতে পারলে সকলের জন্য ভালো কিছু করা আরো অনেক সহজ হবে।
সকলের একাকী সময়টাও উপভোগ্য হোক।