কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে কিভাবে শান্ত রাখবেন?
- রনো রহমান
- জুন ২০, ২০২৩
কঠিন পরিস্থিতি বা কঠিন সময় কখনো আসেনি জীবনে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আর, খারাপ সময় কোনো না কোনো ভাবে মানুষ অতিক্রম করতে পেরেছে, করতে হয়েছে, তাই সে মানুষ।
যে কোনো কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষমতা জেনেটিক ভাবে মানুষের মধ্যে রয়েছে। তা যদি না থাকতো তবে বহু পূর্বেই থেমে যেতে হতো সভ্যতার রথযাত্রা।
এখন আমাদের জীবনের কঠিন সময় তৈরি হওয়ার ৯৯% কারণ— টাকার অভাব, টাকার টানাটানি, চাকরি হারানো, চাকরি না পাওয়া প্রভৃতি। এ ছাড়া এ যুগে কোনো এমন কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে না যে মানুষের জীবনকে রুখে দেবে। মানুষ এখন জীবনযাপনের যান্ত্রিক উপাদানে এতোটাই সমৃদ্ধ যে তার জীবনের জন্য দরকার পড়ে না সমাজ, সহযোগী, সঙ্গী/সঙ্গিনী প্রেম ভালোবাসা, অথবা ওসব এখন টাকায় কেনা যায় বা ম্যানেজ করা যায়--- জীবন চলে যায়।
আরো পড়ুন: সন্তানকে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন!
প্রেম-ভালোবাসা, ডিভোর্স, ব্রেকআপ ইত্যাদি যদি হয়ে থাকে আপনার জন্য "কঠিন পরিস্থিতি" তা হলে বলবো এসব খুবই সাধারণ ব্যাপার। জীবন এমন একটা জিনিস, যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে গোটা ইউভার্সের প্রক্রিয়া। আপনি ইচ্ছে করলেও সে থামবে না। আর জোর করে এই ন্যাচারাল গতি যদি থামিয়ে দিতে চান, তা হলে অদক্ষ চালকের হাতে প্রচন্ড গতির গাড়ি ব্রেক কষলে যা ঘটার তাই ঘটবে। অতএব জীবন নামের জটিল ম্যাকানিকাল মূল্যবান গাড়ির চালক হিসেবে কুশলী হতে হবে, দক্ষ হতে হবে---বদলাতে হবে নিজেকে।
সে জন্য: আপনার জীবনের লক্ষ্যবিন্দুতে মনোযোগ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করুন। লক্ষ্যস্থলের উঁচুস্থরে যখন পৌঁছে যাবেন এবং তাকাবেন সেখান থেকে নিচের দিকে। সেদিন উপলব্ধি করতে পারবেন জীবন কী, জীবনকে ভালোবাসার মতো সুখের কিছু আর হতে পারে না। তাই নিজেকে ভলোবাসুন, জীবনদৃষ্টি জীবনমুখী করে গড়ে তুলুন।
অর্থনৈতিক সমস্যা যদি কারণ হয়ে থাকে, তা হলে শুরতেই বলি, এমন কোনো বিলিয়নার-মিলিয়নার, জ্ঞানী-দামর্শনিক নেই যে কথাটি বলেননি :
" He that can have patience can have what he will."— Benjamin Franklin.
" Patience is a key element of success."— Bill Gates.
তবে ধৈর্যধারণের অর্থ নয় অপেক্ষা। শুনুন, " The secret of patience is to do something else in the meantime."
টাকার টান, অভাব-অনটন, গুটিকয় মানুষ ছাড়া সবার জীবনেই আসে। ঐ গুটিকয় মানুষ যারা হয়তো জন্ম তাদের সোনার চামচ মুখে নিয়ে। কিন্তু সন্দেহ নেই তাদের বাপ-দাদারদের মধ্যে কেউ না কেউ হাজারো কঠিন সময়ের মোকাবিলা করেই গেছেন।
আরো পড়ুন: আপনার সন্তানকে সুশিক্ষিত করতে যা করবেন!
আমরা যারা এখন নিরুপায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় বা পড়ে আছি, মনে করতে হবে আমাদের বাপ দাদাদের কেউ তা করতে পারেনি তাই আজ আামাদেরই তা করতে হবে। যাতে আমাদের উত্তরাধিকারীরা কমসেকম রূপার চামচ মুখে জন্ম নেয়। তাই ধৈর্য ধরুন কিছু একটা এখন করতে থাকুন আর স্বপ্ন বুনতে হবে আজকের আপনার এই পাথরের মতো মাটির বুকেই যে, আপনার সন্তান ও তার সন্তানও যেন আপনার মতো এমন কঠিন বাস্তবতার তোপের মুখে না পড়ে। বিল গেটসের দারুণ সেই কথাটি আমাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তুলে, আসলেই কতো করুণ সত্য কথাটি: দরিদ্র হয়ে জন্ম নেয়াটা আপনার ভুল নয়, কিন্তু দরিদ্র অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা অপরাধ।
১। কী আছে আপনার এবং কী নেই, একবার ভেবে দেখতে পারেন। আপনার যা কিছু আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ থকুন, যা নেই তার জন্য হাহাকার করবেন না: এই কথাটি জীবনের জন্য, এগিয়ে যাবার প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ হলেও যারা তাদের অস্তিত্বের জন্য বা বেঁচে থাকার সংগ্রামে রক্তাক্ত হচ্ছে তাদের কাছে এসব কথা হয়তো সাজে না। আবারও বলছি, তাদের কাছে আপাত অর্থহীন মনে হলেও বলতে হচ্ছে এ কারণে যে, নিজেকে পজিটিভ মাইন্ডসেটের মধ্যে না রাখতে পারলে চরম বিপদ। তাই,
আপনার এই সাময়িক পরিস্থিতির জন্য অন্যকে অভিযুক্ত করবেন না। ব্যর্থতার দায় নিজের। যদি এই সত্যটি মনেপ্রাণে মানতে পারেন তা হলে আজকের কঠিন সময় থেকে শিক্ষা নিতে পারবেন এবং তা হবে আজকের দুঃসময় অতিক্রমের আর ভবিষ্যতের পথ সহজ করে তোলার মহামন্র। যা আছে তা সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবুন। আছে আপনার অন্তত:
*চিন্তা করার ক্ষমতা * দুটি হাত * সামনে জীবনের সুন্দর সময় *
আরো পড়ুন: দূরত্ব সম্পর্ক নষ্ট করে? দূরে থেকেও সম্পর্ক ঠিক রাখবেন যেভাবে!
২। কেনো কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয়? আজকের সমস্যার কারণ তৈরি হয়েছে সমস্ত অতীত জুড়ে অথবা অতীতের কোনো ঘটনা বা ঘটনাক্রম। সমস্যা বেশিরভাগই নতুন, হয়তো অপ্রত্যাশিত আচমকা সৃষ্টি হতেও পারে। যার কোনো পূর্বপ্রস্তুতি থাকে না। তাই কোনো সংকট মানেই নতুন শিক্ষা। জীবন তাদের থাকে অনেকটাই মসৃন যাদের দূরদর্শীতা প্রখর। তাদের অন্তত সাধারণ সমস্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকে।
৩। সমস্যার কথা শেয়ার করলে এর ভার কমে। শেয়ার করুন জীবনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি-বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে। মানসিক চাপ হালকা হওয়ার পাশাপাশি পেয়ে যেতে পারেন এমন কোনো সাপোর্ট যা কখনো কল্পনা করতেও পারেননি।
৪। খুঁজে নিন এমন একজন যে এরূপ অবস্থার মোকাবিলা করেছে। এমন কোনো সফল ব্যক্তি যদি হয়ে থাকে বিশ্বমানের, দূরের, তা হলে তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে---সে জন্য জীবনীগ্রন্থ, গুগল সার্চ, মোটিভেশনাল যে কোনো কিছু—স্পিচ অডিও-ভিডিও, বই( ইবুক বা পেপার বুক)। এসব আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, চিন্তার বিকাশে সহায়ক পাশাপাশি মানসিক চাপমুক্তি ও পজিটিভ মানসিকতা বজায় রাখার মহৌষধরূপে কাজ করবে।
আরো পড়ুন: ভালোবাসেন কিন্তু পাশেরজন অবহেলা করছে? যা করবেন জানুন
৫। দিনের কিছু সময় পড়ুন এবং লিখুন। গবেষণায় দেখা গেছে অনুপ্রেরণামূলক বই পড়লে দেহ-মনের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। কারণ জীবন সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা তৈরি করতে পারে প্রেরণা। পড়ুন নন-ফিকশন ওরকম বই আর লিখে রাখুন এর প্রতিক্রিয়া। লিখুন নিজের সমস্যার কথা এবং তার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ, সম্ভাব্য উত্তরণের পথ। তাতেই মনোযোগ দিন। সাবকন্সাস মনে এ বিষয়টা ভাবনাচিন্তার মাধ্যমে স্থায়ী করে নিতে চেষ্টা করুন। দেখবেন ব্রেন সাহায্য করছে, পথ খুলিতছে ।
কঠিন সময়কে শিক্ষার সুযোগ বলে ধরে নিয়ে এই সময়টা ভাবুন একটি এ্যাডভেঞ্চারের অংশ।