আত্মনিয়ন্ত্রণ কী? কীভাবে এটি অর্জন করা যায়
- ফারজানা আক্তার
- আগস্ট ২৪, ২০২৩
আত্মনিয়ন্ত্রণ মানে হচ্ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। এটি সবথেকে কঠিন কাজ এবং একইসাথে সাফল্যের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হচ্ছে এটি। মানুষের ভেতর ছয়টি রিপু রয়েছে যেমন- কাম, ক্রোধ, মোহ, মদ, হিংসা,লোভ। এর যে কোনো একটি মানুষের মধ্যে যখন প্রবল হয়ে উঠে তখন সে মানুষটির সকল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। রিপুর তাড়নায় মানুষের বিবেক লোপ পায় এবং নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
আপনি যদি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই আত্মনিয়ন্ত্রণ করার অসাধারণ এই গুনটি অর্জন করতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণ করার প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনাকে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আপনি যখন জ্ঞানের চর্চায় থাকবেন আপনার বিবেক তখন হবে জাগ্রত; আপনার মধ্যে জেগে উঠা কোন রিপুর ফলাফল পরবর্তীতে কী হতে পারে সেটি আপনি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। পরিণত বিবেকবান মানুষ জানে কীভাবে নিজেকে ষড়রিপু থেকে বাঁচিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং আত্মমর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হয়।
আরো পড়ুন: দিন দিন আপনার রাগ বেড়েই চলছে? নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে
আজ আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জন করার কিছু উপায় নিয়ে কথা বলবো।
১। নিজের কাজের দায়ভার নিজে নিন: আপনি যে কাজটি করছেন তার একান্ত দায়ভার আপনার নিজের - এমন মনোভাব তৈরী করুন। নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শিখুন। যেহেতু আপনার কাজের সকল দায়ভার আপনার নিজের; তাই কাজের ভালো- মন্দ বুঝে শুনে আপনাকে আগাতে হবে। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে - কোনো ব্যক্তি যদি অনুভব করেন তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে আছেন, তখন তিনি বেশ মানসিক স্বস্তিতে থাকেন এবং নিজের কাজগুলো বেশ গুছিয়ে করতে পারেন।
২। নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন: সবার জীবনে কোনো না কোনো লক্ষ্য থাকে। যাদের কোনো লক্ষ্য নেই তাঁদের উচিত দ্রুত নিজেদের জীবনে লক্ষ্য ঠিক করা। জীবনের লক্ষ্যগুলো সবসময় বাস্তবসম্মত এবং স্পষ্ট হওয়া উচিত। যেমন ধরুন আপনাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার জীবনের লক্ষ্য কী? আপনি বললেন সফল হওয়া। পরবতীতে প্রশ্ন আসে কোন কাজে সফল হওয়া! জীবনে সফল হওয়া একটি অস্পষ্ট লক্ষ্য। আপনি বলতে পারেন আপনি আপনার পেশাগত জীবনে সফল হতে চান,সংসার জীবনে সফল হতে চান,আপনার হয়তো নির্দিষ্ট কিছু স্বপ্নগুলো রয়েছে - সেই স্বপ্নগুলো সত্যি করতে চান।
আরো পড়ুন: এমপ্যাথি কী এবং কেন আমাদের জীবনে এমপ্যাথির প্রয়োজন
৩। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করুন: নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা বলতে বুঝাচ্ছি আপনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যেভাবে আগাচ্ছেন সেটি সঠিক পথ কিনা! কতদূর এগিয়েছেন, যতদূর এগিয়েছেন সেখানে কত ধরণের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন এবং কীভাবে আপনি সেই প্রতিকূলতার মোকাবেলা করেছেন। যদি ব্যর্থ হয়ে থাকেন তবে কোনো কারণে ব্যর্থ হয়েছেন এবং কী শিখেছেন! এইভাবে কয়েকদিন পর পর নিজেকে পর্যবেক্ষণ করুন।
৪। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জনের জন্য নিজেকে বাহবা দিন: যেমন মনে করুন আপনি ধূমপান করেন। আজ আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন আগামী ২৪ঘন্টা আপনি একটি সিগারেটও হাতে নিবেন না। এবং সফলতার সাথে আপনি ২৪ঘন্টা পার করলেন। এই ছোট্ট অর্জনের জন্য নিজেকে বাহবা দিন। অথবা আপনি সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আগামী দুইদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন। যত কষ্টই হোক আপনি ভোরে বিছানা ছাড়বেন। এবং সফলতার সাথে পরপর দুইদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে গেলেন। এই ছোট্ট অর্জনের জন্য নিজেকে বাহবা দিন এবং এইধারা অব্যাহত রাখুন।
আরো পড়ুন: আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কেমন হওয়া উচিত
৫। সকল ধরণের প্রলোভন এড়িয়ে চলুন: মানুষ যখন নিদির্ষ্ট একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলে তখন তার সামনে নানাধরণের প্রলোভন আসে। চেষ্টা করুন এইসকল প্রলোভন এড়িয়ে চলতে। যদি ভুলক্রমেও এই প্রলোভনে পা দেন; তবে আপনি আপনার লক্ষ্য থেকে অনেকটা পিছিয়ে যাবেন। কখনো কখনো হয়তো এতটাই পিছিয়ে যাবেন ফেরার পথ আর খুঁজে পাবেন না।
৬। নিজেকে প্রশ্ন করুন: নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কেন আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার চিন্তার পরিধি কতটা বিশাল হচ্ছে। এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরবর্তী মুহূর্তের কথা চিন্তা করে আপনি এক ধরণের অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন।
কেন লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান এই প্রশ্নের পর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কীভাবে পৌঁছাবেন? মনে করুন আপনি একজন কণ্ঠশিল্পী হতে চান। এখন আপনার শুধু ভালো কণ্ঠ থাকলে ইহবে না, সাথে সুর সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে, কোনো গানের শিক্ষকের কাছ থেকে তালিম নিতে হবে, নিয়মিত চর্চা করতে হবে এবং এই বিষয়ে আরো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে।
আরো পড়ুন: ভিডিওতে বেশি ভিউ কিংবা পোস্টে বেশি লাইক মানেই কি ভালো কনটেন্ট
আপনাকে কণ্ঠশিল্পী হতে গেলে এইসকল ধাপ পার হতে হবে এবং নিয়মিত চর্চায় থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে দূর থেকে আমরা দেখি জঙ্গল আর কাছে গিয়ে দেখি শুধুই গাছ। একটি লক্ষ্য ঠিক করার পর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে ধাপগুলো পার হতে হবে সেইধাপগুলো পার হওয়ার জন্য আপনার ধৈর্য, মনোবল এবং মানসিক শক্তি আছে কিনা সেটি আগে ভেবে নিবেন। অন্যথায় মাঝপথে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে হবে।
৭। ইচ্ছেশক্তি ধরে রাখুন: আত্মনিয়ন্ত্রণ অনেকটাই নির্ভর করে ইচ্ছেশক্তির উপর। ইচ্ছেশক্তি এক ধরণের মানসিকশক্তি যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য পূরণের সাহস জোগায়। মনে করুন আপনি ধূমপান ছাড়বেন। মন থেকেই ছাড়তে চাচ্ছেন। আপনার যদি এই ইচ্ছেশক্তিটা প্রবল থাকে তাহলে যতকষ্টই হোক আপনি ধূমপান ছাড়তে পারবেন।
৮। আত্মনিয়ন্ত্রণকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন: কয়েকদিন আত্মনিয়ন্ত্রণ করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে আবার যদি আপনি আগের রুটিনে ফিরে যান; তবে আপনিও সেই আগের মানুষটা হয়ে যাবেন। নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলুন। জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: যোগাযোগের ক্ষেত্রে " I Statements " কী এবং কেন ব্যবহার করবেন
৯। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন: ষড়রিপু থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। আপনি অবশ্যই সফল হবেন।
সবার জন্য শুভকামনা এবং দোয়া।