ডিভোর্স কখন প্রয়োজন, আর কখন বিলাসিতা?
- ফারজানা আক্তার
- সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
বর্তমানে ডিভোর্স মহামারী রূপ ধারণ করেছে। কেমন যেন শব্দটা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে পড়ছে। সবাই যেন কীসের নেশায় ছুটছে! যখন কেউ শুনে অন্য কারো ডিভোর্স হয়েছে তখন সবার মধ্যে অজানা কৌতূহল কাজ করে। নানাজনে নানা রকম মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়। যেমন অনেকের মনে প্রশ্ন -
- কেন ডিভোর্স হলো?
- কার দোষ ছিলো?
- কী হয়েছিলো?
- তৃতীয়পক্ষ ছিলো কিনা ইত্যাদি।
নানাজনে আবার নানারকম মন্তব্য করে -
- বিয়ের পরপর কী প্রেমটাই দেখিয়েছিলো। এখন কোথায় গেলো সব প্রেম?
- আগেই জানতাম এদের ডিভোর্স হবে। বেশি প্রেম থাকে না।
- শুনলাম জামাই কিংবা বউয়ের অন্য জায়গায় সম্পর্ক আছে ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: বর্তমানে সম্পর্কগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেন
যার যা মনে আসে, যে যেভাবে পারে নিজেদের মতো করে মতামত দেয়, মন্তব্য করে। তাছাড়া আমাদের সমাজে ডিভোর্সকে ভয়াবহ অপরাধের চোখে দেখা হয়। একজন অপরাধীকে যতটা লাঞ্ছনা-বঞ্চনা শুনতে হয় তার তুলনায় কয়েকশন বেশি একজন ডিভোর্সী নারীকে শুনতে হয়, ফেস করতে হয়। পুরুষদেরও ভোগান্তি হয়, তবে নারীদের তুলনায় কম।
বর্তমানে মানুষেরা বেশ অসহনশীল হয়ে ওঠেছে। মায়া-মমতা কমে গিয়েছে। উনিশ থেকে বিশ হলেই সবাই যেন বিচ্ছেদের দিকে ছুটছে। সমাধানদের পথ কেউ খুঁজছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সবার কাছে একের অধিক অপশন রয়েছে। মানুষ যেন আর মানুষ নেই, কেমন অপশন হয়ে গেছে। আজ এর সাথে, কাল ওর সাথে; এইভাবেই চলছে সব।
যদিও একপক্ষ একাধিক অপশন রাখছে, অপরদিকে আরেকটি পক্ষ রয়েছে; যারা কাছে সম্পর্কের মূল্য, সংসারের মূল্য, স্বামী / স্ত্রীর এবং সন্তানের মূল্য রয়েছে, কিন্তু কোনো কারণে সংসার এবং সস্পর্কটা কাজ করছে না। তবুও বিচ্ছেদের দিকে যেতে পারছে না কারণ সমাজ কী বলবে? পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজনরা কী বলবে? যে সব মেয়েরা অল্প শিক্ষিত এবং গৃহিনী তাঁদের চিন্তা; বিচ্ছেদের পর তাঁরা কোথায় যাবে? কী করবে?
আরো পড়ুন: দিন দিন আপনার রাগ বেড়েই চলছে? নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে
মাথার উপরের ছাদ, পরনের কাপড় এবং তিনবেলা খাবারের জন্য হলেও তাঁদের একটি অসুস্থ সম্পর্কে থেকে যেতে হয়।
অনেক সংসারে দেখা যায় স্বামী বারবার পরকীয়াতে জড়াচ্ছে, বউকে শারিরীক এবং মনোসিকভাবে টর্চার করছে; আবার অনেক সংসারে দেখা যায় বউকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সংসার-সন্তানের দিকে একেবারে মন নেই, উচ্চবিলাসী মন কিংবা সেও পরকীয়াতে জড়িত।
বিয়ের কিছু লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থাকে; আমি বিশ্বাস করি বিয়ে করে বিচ্ছেদ করবে এমন ইচ্ছে নিয়ে বিয়েটা কেউ করে না। সব বিষয় নিয়ে খামখেয়ালিপনা কিছু মানুষের থাকে। তাদের কথা আলাদা এবং হাতেগোনা। আপনি যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বিয়ে করেছেন; সেটি যদি পূরণ না হয়; উল্টো মানসিক চাপে পড়ে যান, নিজের জীবনের সুখ-শান্তি হারিয়ে যায়; তখন ডিভোর্স আপনার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু রিতাকে বিয়ে করার পর আপনার মনে হলো সীতা আপনার কেয়ার বেশি করে কিংবা আবুলকে বিয়ে করার পর মনে হলো বাবুল বেশি হ্যান্ডসাম অথবা টাকা বেশি; তাই আপনি একজনের সাথে বিচ্ছেদ করে অন্যজনকে বিয়ে করবেন; এইক্ষেত্রে ডিভোর্স বিলাসিতা।
আরো পড়ুন: এমপ্যাথি কী এবং কেন আমাদের জীবনে এমপ্যাথির প্রয়োজন
একটি সংসারে কিংবা সম্পর্কে সারাক্ষণ আনন্দ থাকবে না। সারাক্ষণ খুশি থাকবে না, কিন্তু স্বস্তি থাকবে। ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই সংসার। আপনি হয়তো রাগ করে আপনার পার্টনারের সাথে দু'ঘন্টা কথা বলা বন্ধ রাখবেন; আবার তার সাথে কথা বলেই মানসিকভাবে রিলিফ অনুভব করবেন। এখানে দুজনকে সাপোর্টিভ হতে হবে, দুজনকেই সহনশীল হতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে, ভরসা করতে হবে। যদি এই ব্যাপারগুলো দীর্ঘদিন মিসিং থাকে; তবে ধরে নিন সম্পর্কটা মৃত। এখানে ডিভোর্স প্রয়োজন।
আমার জন্মদিন ও ভুলে গিয়েছে, তার মানে ওর জীবনে আমার কোনো গুরুত্ব নেই; কিংবা ও তরকারিতে লবণ বেশি দেয়, সংসারে ওর মন নেই এইসব হাবিজাবি অজুহাত দিয়ে যারা বিচ্ছেদের দিকে যায়; তাদের জন্য ডিভোর্স বিলাসিতা।
আরো পড়ুন: আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কেমন হওয়া উচিত
অল্পতে যারা সন্তস্ট হতে পারে না এবং নিজের মানুষটিকে নিয়ে যারা খুশি থাকতে পারে না; তাদের জীবনে কখনো শান্তি আসে না। হাজারো অপশনের দিকে যাদের নজর তাদের মন আপনি কখনোই ভরাতে পারবেন না।
সবাই ভালো থাকুন। নিজেদের সম্পর্কের যত্ন নিন।