কাঁসার বাসন এবং বিশ্বাসভঙ্গ (আঞ্চলিক রূপকথা)
- নিশিতা মিতু
- ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
বেশ অনেক কাল আগের কথা। তখন দেশ ছিলো ভিন্ন রকম। গ্রাম, শহর অতভাগ তখনও হয়ে উঠেনি। সে সময়টার কথা বলছিলাম যখন মানুষ পন্যের বিনিময়ে পন্য কিনতো আরকি। বর্তমানে যেটি লক্ষ্মীপুর জেলা, তার কাঞ্চনপুর নামের গ্রামে বাস করতো এক দরিদ্র ব্যাক্তি। অভাবের সংসার তার। কোনরকমে দিন চলে যায়। এরই মাঝে মেয়ে বড় হল। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় হল। কিন্তু কোথায় পাবে খরচ? চিন্তায় বিভোর হয়ে গেলেন তিনি। একরাতে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন সেই লোকটি। রাতে স্বপ্নে দেখলেন কে যেন বলছে, মেয়ের বিয়েতে যত বাসন পত্র লাগবে তার সংখ্যা একটা পাতায় লিখে পাশের পুকুরে ভাসিয়ে দিলেই পেয়ে যাবেন দরকারী বাসন পত্র। বিয়ে শেষে আবার সেগুলোকে যেন পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল তার।
পরদিন সকালে গেলেন পুকুর ঘাটে। প্রয়োজনীয় বাসনের সংখ্যা একটা পাতায় লিখে ভাসিয়ে দিলেন পুকুরের পানিতে। তারপর অপলক দৃষ্টিতে পানির দিকে তাকিয়ে বসে রইলেন পুকুর পাড়ে। খানিকটা সময় পর ঘটলো এক আজব ঘটনা। পুকুরের পানি থেকে ধীরে ধীরে ভেসে উঠতে লাগলো বাসন, গ্লাস, পানদানি সহ আরো অনেক কিছু। সেগুলো ভেসে ভেসে পুকুর পাড়ে আসার পর তিনি সেগুলোকে তুলতেন। আশেপাশে মানুষের ভীড় জমে গেল এই পিলে চমকানো দৃশ্য দেখার জন্য। সে কি আর যেন তেন বাসন পত্র। যেমন সুন্দর বাহারী নকশা আঁকা গায়, ঠিক তেমনি চকচকে ভাব। সংখ্যা গুনে দেখলেন ঠিক যেমনটা তিনি পাতায় লিখে দিয়েছিলেন তেমনটাই। কাঁসার তৈরি সেই বাসন পত্র পেয়ে গরীব লোকটা বেশ খুশি হলেন। তারপর আশেপাশে মানুষের সাহায্য নিয়ে বিয়ে দিলেন মেয়ের। বিয়ে শেষে সব বাসন পত্র ধুয়ে আবার ভাসিয়ে দেয়া হল পুকুরের পানিতে। খানিক বাদে ডুবে গেল সব।
এরপর কারো বিয়ে হলেই পুকুরের পানিতে পাতায় সংখ্যা লিখে দিলে ভেসে উঠতো কাঁসার ঝকঝকে থালা বাসন। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর আবার পুকুরে ভাসিয়ে দিলে, মিলিয়ে যেত সেগুলো। এভাবে ভালোই চলছিলো সব। কিন্তু সব মানুষ কি আর ভালো হয়? এক লোভী মহিলা বাসন পত্র ধোয়ার সময় লোভ সামলাতে না পেরে একটা ছোট বাটি রেখে দিলেন লুকিয়ে। মনে মনে ভাবলেন এত বাসন পত্রের ভেতর ছোট একটা বাটি রাখলে কি ই বা হবে। সময়মত ভাসিয়ে দেয়া হল সব বাসন পত্র। কিন্তু এবার আর সেগুলো ডুবেনা। দিন গড়িয়ে রাত হল তাও ডুবেনা।
যে ব্যাক্তি বাসন পত্রগুলো এনেছিলেন তিনি রাতে স্বপ্নে দেখলেন যে ঐ লোভী মহিলা একটি বাটি রাখার কারনেই বাকি বাসনপত্র ডুবছেনা। আরোও দেখলেন সে মহিলার বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে। পরদিন সে মহিলা থেকে বাটি উদ্ধার করে পানিতে ভাসানোর পর সব বাসন পত্র ডুবলো। এই ঘটনার কদিন পর সে মহিলা মারা গেল। তবে সেদিনের পর থেকে আর কখনো সেই পুকুরে থালা বাসন ভেসে উঠেনি। সে পুকুরে আর কখনো মাছ জন্মেনি। সে পুকুরের স্বচ্ছ পানি আর স্বচ্ছ থাকেনি। বিশ্বাস ভাঙার অভিশাপে গ্রামবাসী হারালো সব।