ম্যারেজ কাউন্সেলিং সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি
- ওমেন্স কর্নার
- জুন ৩, ২০২৪
বিয়ের পর থেকেই নাতাশা ও জোবায়ের দম্পতির নানা বিষয়ে মতপার্থক্য লেগেই আছে। বারকয়েক পারিবারিকভাবে ব্যাপারগুলোর মীমাংসা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরাও। যদিও নিজেদের পছন্দেই বিয়ে, তবুও বছর গড়াতে না গড়াতেই নাতাশা ও জোবায়ের ভাবছে বিয়ে বিচ্ছেদের ব্যাপারে। তাদের মনে একটাই প্রশ্ন, কেন এমন হলো?
বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন কাজ করে এক ধরনের ফ্যান্টাসি। আবার বিয়ে পরবর্তী সময়ে রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করে। এই ব্যাপারগুলো পার হয়ে গেলেই আসলে পারস্পারিক মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় প্রত্যেক দম্পতিকে। বেশিরভাগ সমস্যার শুরুটা হয় এই সময়েই। নতুন দম্পতিরা মানিয়ে নেওয়ার এই সময়ে এসে খেই হারিয়ে ফেলে। ফলে এ সময় বিয়ে বিচ্ছেদের হারও সবচেয়ে বেশি হয়। বিশেষ করে ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় সবচেয়ে বেশি।
দুইজন মানুষ একই ছাদের নিচে বসবাস শুরু করলে বিভিন্ন বিষয়ে মতের অমিল হতেই পারে। কারণ প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র, তাদের অনুভূতিগুলোও তাই আলাদা। এদের একই সুতায় গাঁথতে গিয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়াও স্বাভাবিক। তবে সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য মানিয়ে চলা বা অ্যাডজাস্টমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্য জীবনের ছোটবড় সমস্যা কিংবা অ্যাডজেস্টমেন্টের সমস্যা সমাধানে ম্যারেজ কাউন্সেলর আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক ফারিহা রহমান বলেন, ‘আমাদের অনেকেরই ম্যারেজ কাউন্সেলিং সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। আমরা মনে করি কেবল ঝগড়া-বিবাদ মিটমাটে কিংবা বিয়ে বিচ্ছেদ ঠেকাতেই বুঝি কাজ করে এই কাউন্সেলিং। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে জটিলতা প্রতিরোধেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। আমি মনে করি ম্যারেজ কাউন্সেলিং নেওয়া উচিত বিয়ের আগেই। এতে বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর অ্যাডজাস্টমেন্ট সহজ হয়। পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথেও সুষ্ঠ ও সুন্দর সম্পর্ক রাখা সম্ভব হয়। দাম্পত্য জীবনের জটিলতাসহ বিয়ে বিচ্ছেদ অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব হয় ম্যারেজ কাউন্সেলিংয়ের বদৌলতে।’
আরো পড়ুন:
দাম্পত্য জীবনে আপনি কি অসুখী? সমাধান করুন ৭ উপায়ে
বিয়ে করতে যাচ্ছেন? এই ৫ বিষয়ে আলোচনা করে নিন
বদরাগী সঙ্গীকে সামলাবেন কোন উপায়ে?
সম্পর্ক রোমান্টিক করার পাঁচ গোপন টিপস
দাম্পত্য জীবনের জটিলতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ঘিরে আবর্তিত হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে উপার্জন। নিম্ন আয়ের কারণে দম্পতিরা নিজেদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয় এবং মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে না। ফলে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দেখা দেয় প্রতিবন্ধকতা। আবার বাবা-মা কিংবা আত্মীয়দের প্রত্যাশা ও চাহিদাও সমস্যার কারণ হতে পারে। পরিবার পরিকল্পনা, কর্মজীবন নিয়ে পারস্পারিক সমঝোতার অভাব দেখা দিতে পারে। যৌন প্রবৃত্তি ও যৌন বাসনার তারতম্যের কারণে দাম্পত্য জীবনে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা। এমন সব সমস্যার সমাধানে সহায়তা ও পরামর্শ দেন একজন ম্যারেজ কাউন্সিলত। এতে দম্পতিরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ফারিহা রহমান জানান, বিয়ের আগে বর-কনে উভয়ের মন মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের সামঞ্জস্যতার পাশাপাশি উভয়ের পারিবারিক অবস্থা, আর্থিক অবস্থা, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার চিন্তাভাবনা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মনমানসিকতার সামঞ্জস্যতা অত্যন্ত জরুরি। এসব বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে বুঝে নিজেদের মানসিক অবস্থার প্রস্তুতি ও পারিবারিক সম্মতি বুঝে তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
কারণ বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং বিয়ে পরবর্তী সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়াতে এটি ভীষণ জরুরি। তারপরেও বিবাহিত জীবনে খুঁটিনাটি খুনসুটি বিষয়াদি থাকবে স্বাভাবিকভাবেই। তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদ সবসময় যৌক্তিক সমাধান নয়। ম্যারেজ কাউন্সেলিং কোনও যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিয়ে বিচ্ছেদকে সমর্থন করে না বরং নিরুৎসাহিত করে। দম্পতিদের সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সুষ্ঠু পরামর্শ প্রদান করাই একজন ম্যারেজ কাউন্সিলরের দায়িত্ব। কেবল বিয়ে বিচ্ছেদ আটকানো নয়, দাম্পত্য জীবনের চলার পথে আসা ছোটখাট ভুল বোঝাবুঝির সমাধানেও ম্যারেজ কাউন্সেলিং ভূমিকা রাখে। এতে সমস্যা আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব হয়।