শিরায় শিরায় কেন বিসিএস?
- তানজিলা আক্তার
- মার্চ ২, ২০১৮
কাল বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফল বের হলো। বরাবরের মতো লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কিছুসংখ্যক পরীক্ষার্থীকে পরবর্তী ধাপের জন্যে নির্বাচন করা হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরই ভাবলাম একটু গ্রুপে ঢুঁ মেরে আসি। গেলাম একটা বিসিএসের বড় গ্রুপে। একই সাথে আনন্দ ও হতাশার কতশত লেখা। আনন্দের লেখা গুলো বাদ দিয়ে একটু হতাশার লেখাগুলো পড়া শুরু করলাম। একরাশ অভিমান, নিজেকে ধিক্কার, কিছুটা জেদ মেলানো লেখাগুলো দেখেই আমার ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে অজানা হাসি ফুটে উঠলো। না, এ হাসি কোনো আনন্দের না, বরং বিষাদের। আবার দেখলাম একজন আত্মহত্যা করেছে, কারো প্রেমিকা চলে গেছে, নানা পরিস্থিতি।
প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নেয় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। মনের তোড়জোড়, অনেক স্বপ্ন ও অনেক আশা নিয়েই শুরু করে তারা। যাদের সফলতা আসে তাদের কথা না বলে, আজ বলি সমাজ ও ব্যর্থদের কথা (তাদের মতে ব্যর্থ) । ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা সবাই দেখতে বলে, সবচেয়ে বড় স্বপ্ন দেখবো তবেই তো বড় হবো। বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, স্কুলের শিক্ষক, পাড়াপড়শিসহ প্রায় সবাই আমাদের বুঝিয়ে দেয় স্বপ্ন দেখবে অনেক বড়, অনেক বড় স্বপ্ন দেখলেই তো তুমি ঐমত করে তোমার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে স্বপ্নে পৌঁছে যাবে। কিন্তু সেই বড় স্বপ্নের ফাঁকে কেউ শিখিয়ে দেয় না, কেউ বলে না, জীবনটা একটা স্বপ্ন নয়, আমাদের স্বপ্নে নয়, বাঁচতে হবে বাস্তবে। কেউ বলে না, এটা পৃথিবী, নয় কোনো রূপকথার রাজ্য। জীবনে উথালপাতাল থাকবে এই কথাটা কেউ বলেনা।
একজন সত্যিকারের মানুষের উচিত প্রতিটা পেশাকে সমান গুরুত্ব দেয়া, প্রতিটা পেশাকেই। প্রতিটা মানুষ, প্রতিটা পেশা সমান সম্মানের দাবীদার। মজার কথা কি জানেন আপনি নিজেও একথা জানেন কিন্তু কখনোই মানেন না। আচ্ছা আপনি বলুন তো আজ যদি মাছবাজারে মাছ বিক্রেতা মাছ বিক্রয় না করে তবে আমরা হয় মাছ খেতে পারবো না, নাহলে সবাইকে একইসাথে জেলে হয়ে যেতে হবে দুবেলা মাছ খাওয়ার জন্যে। আজ যদি কৃষক ফসল না ফলায় একজন বিসিএস ক্যাডারকেও দুবেলা ভাত খাওয়ার জন্যে মাঠে নেমে জমি চাষ শুরু করতে হবে। একজন মেথরকে আমরা যদি সম্মান না করি তবে আমাদের সবাইকে মেথর হতে হবে। একজন মাছবিক্রেতা যদি না মাছ বিক্রয় করে আমরা সকলে হবো জেলে। এবার আমরা যারা চাকরী খুঁজতেছি তাদের কথা বলি। আমরা অনেকেই বিসিএস, বিসিএস করে পাগল হয়ে যাই। অবশ্যই বিসিএস ক্যাডার অনেক সম্মানের, তবে অন্য চাকরীর কি সম্মান নেই? উপরে উদাহরণ দিলাম যে অন্য এক পেশাকে সম্মান না দিলে তার পরিণতি কি। এখন অনেকেই মাথা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে বলবেন অবশ্যই অন্য পেশার সম্মান আছে, আপনি নিজে জানেন, বলেন কিন্তু আপনি এটা মানেন না। বিসিএস ক্যাডার দেখলে যে সম্মান দেন সে সম্মানটা যদি আজ এখন কৃষককে দিতেন তবে আপনি আজ হতাশায় ভুগতেন না, একটুও না। সমাজে সবার সম্মান আছে, আলাদা আলাদা জায়গায় সবাই সম্মানিত। বিসিএস আপনাকে কেউ দিতে না করেনি, মেধা অনুযায়ী অবশ্যই ওখানে আপনার জায়গা হবে, যদি না হয় তার মানে এই না আপনি মেধাবী না, আপনিও মেধাবী, জগতের প্রতিটা মানুষ মেধাবী, তার ঠিক জায়গায়।
আয়রন লেডি মুনিবা মাজারীর একটা স্পিচে পেয়েছিলাম, আপনি সাজাচ্ছেন একটা জীবন, সেই জীবন আপনার মন মতো না হলে হতাশায় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছেন। অথচ আপনি যে জীবনকে একটুও সুযোগ দিচ্ছেন না যে আপনাকে নতুন একটা অধ্যায় দেখাবে।
এডলফ হিটলার একটা কথা বলতেন, "I am prepare for the worst but hope for the best." নিজেকে সবক্ষেত্রে প্রস্তুত রাখুন, সঠিক গন্তব্য আর সম্মান আসবেই। এমনও তো হতে পারে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেলেন একজন বিসিএস ক্যাডার আপনাকে আপনার কাজের জন্যে স্যালুট করলো। কখন কার জীবনে কি আসে বলা তো যায় না। পাশের বাসার আন্টির কথা বাদ দিন, কে কি বলল তা বেশি শুনতে গেলে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে হয়, আমি এই লিখা লিখতে লিখতেই একবার পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির থেকে সরকারী চাকরী করার ভাষণ শুনে ফেললাম। আর যাদের প্রেমিকা চলে যাচ্ছে, মনে মনে শুকুর করুন, বিয়ের আগেই চেনার সুযোগ পেলেন। আপনি যদি পরিশ্রম করে যোগ্যতা দেখাতে পারেন একদিন এক বিসিএস ক্যাডারই আপনাকে সম্মান জানাবে। একদিন চলে যাওয়া প্রেমিকাই মাথা খুঁটে আফসোস করবে। জানেনই তো জীবন যে কাকে কোন সাগর আর কোন পাহাড়ে নিয়ে ফেলবে তা আমি আপনি কেউ বলতে পারবো না।
লেখার ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।