আপনার সঙ্গী কি মাইক্রোচিটিং করছে
- ওমেন্স কর্নার
- জুলাই ১৫, ২০২৪
অন্তর্জালের দুনিয়ায় ভাইরাল একটা রিলে দেখা যায়, একজন নারী অনেক টাকা দিয়ে কানের দুল কিনেছেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন তাঁর জীবনসঙ্গী। জানতে চাইছেন, এত টাকা খরচ করে এই দুলটা কেন কিনতে হলো? জবাবে স্ত্রী বলছেন, ‘সেদিন দেখলাম, তুমি একটা মেয়ের ছবির নিচে “লাভ” রিঅ্যাক্ট দিয়েছ। ওই মেয়েটার পরনে প্রায় কোনো পোশাক ছিল না। তবে কানে এই দুলটা ছিল। তোমার নিশ্চয়ই দুলটা অনেক পছন্দ। তাই টাকার কথা না ভেবে কিনে ফেললাম।’ তখন স্বামী আর কোনো কথা বলেন না! কেবল মাথা ঝাঁকান (অর্থাৎ ‘আসলেই’ দুলটা তাঁর পছন্দ)।
অনলাইনভিত্তিক আধুনিক সম্পর্কে নতুন একটি টার্ম ‘মাইক্রোচিটিং’। একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে থেকে যেকোনো একজনের এমন সব কর্মকাণ্ড যেটাকে আপনি সমস্যা হিসেবে দেখতেও পারেন, আবার অগ্রাহ্যও করতে পারেন। আবার এমন সব ‘নির্দোষ’ আচরণ থেকেও তৈরি হতে পারে ‘সিরিয়াস’ জটিলতা। যার পরিণতি দাম্পত্য কলহ থেকে শুরু করে বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
আরো পড়ুন:
বিয়ে বা জন্মদিনের তারিখ ভুলে গেলে কী করবেন
একঘরে থেকেও সঙ্গীর প্রতি দূরত্ব অনুভব করছেন?
বয়সে ছোট সঙ্গীরাই নারীদের বেশি সুখে রাখেন, বলছে গবেষণা
আপনার সঙ্গী আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে কিনা বুঝবেন যেভাবে
মাইক্রোচিটিংয়ের এক ডজন উদাহরণ
- প্রাক্তনের সঙ্গে লুকিয়ে যোগাযোগ রাখা।
- প্রাক্তন বা অন্য কোনো নারী বা পুরুষের আকর্ষণীয় ছবিতে ‘লাভ’ রিঅ্যাক্ট দেওয়া।
- নিজের সম্পর্কের বিষয়টি লুকিয়ে অন্যের সঙ্গে চ্যাট করা। অপ্রয়োজনীয় ‘হাই’, ‘হ্যালো’ বা ‘আপনি তো দেখতে খুব সুন্দর’–জাতীয় বার্তা পাঠানো।
- অন্য কাউকে অপ্রয়োজনে নিজের ছবি পাঠানো।
- হুটহাট অন্য কাউকে কল, ভিডিও কল করা বা কথা বলা।
- ‘পার্টনার’–এর সামনে বন্ধুর স্ত্রী বা অন্য বান্ধবী অথবা সহকর্মীর প্রশংসা করা, বিশেষ করে যেটা আপনার গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রীর নেই অথবা যে কাজে তাঁরা পারদর্শী নন। একই কথা নারীদের বেলায়ও সত্য। মানে, আপনার সঙ্গী অস্বস্তিতে পড়ে যান বা তাঁকে ছোট করা হয়—এমন সব কাজ করা বা কথা বলা।
- অন্য কারও সামনে ‘সেক্সুয়াল এনার্জি’ দেখানো বা নিজেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আকর্ষণীয় রূপে উপস্থাপন করা।
- অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রশংসা করা।
- অন্যকে সম্পর্কে আগ্রহী হওয়ার জন্য উসকানি দেওয়া। অন্যের কাছ থেকে আবেগপ্রবণ উষ্ণতা চাওয়া। আবেগপ্রবণভাবে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে অন্যের ‘সিমপ্যাথি’ আদায়।
- অন্য নারী বা পুরুষকে অযথাই উপহার পাঠানো।
- ডেটিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলা।
- সঙ্গীকে না জানিয়ে তাঁর কোনো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলাপ করা ইত্যাদি।
সঙ্গী মাইক্রোচিটিং করলে কী করবেন
আপনার সঙ্গীর ‘মাইক্রোচিটিং’ কি আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে? নাকি আপনিও সঙ্গীর অগোচরে এসব মাইক্রোচিটিং চালিয়ে যান? সঙ্গীর এসব কর্মকাণ্ড কি আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে? নাকি আপনি মনে করেন, এমনটা হতেই পারে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করে জল ঘোলা করার কিছু নেই।
তবে ‘রিলেশনশিপ কোচ’ ও লেখক ম্যাথিউ হুসে মনে করেন, সম্পর্কে থাকা ব্যক্তি যতই আড্ডাবাজ, ‘বহির্মুখী’ স্বভাবের হোন না কেন, মাইক্রোচিটিংকে ‘বিপৎসংকেত’ হিসেবে দেখাই ভালো।
ম্যাথিউ বলেন, ‘সম্পর্কে যিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সুখী, শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ, পারতপক্ষে তিনি অন্যের সঙ্গে এসব “নির্দোষ ফ্লার্ট” করতে যাবে না। যিনি সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, দ্বিধাগ্রস্ত বা অতৃপ্তিতে ভোগেন, তিনিই মূলত মাইক্রোচিটিংয়ে আগ্রহী। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ডই সম্পর্ককে একসময় “ডাবল টাইমিং” বা পরকীয়ার মতো জটিল সংকটের মুখে ফেলে দেয়। বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।’
তাই সঙ্গীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড যদি আপনার ভালো না লাগে, তাহলে তাঁর সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। তাঁকে জিজ্ঞেস করুন, এই কাজগুলো তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কেন গুরুত্বপূর্ণ? ‘মাইক্রোচিটিং’–এর পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য কী, জানতে চান। সময় নিন। সময় দিন। প্রয়োজনে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।