সম অধিকার চাওয়া মেয়েরা সম দায়িত্ব নিতে নারাজ! কিন্তু কেন?
- ফারজানা আক্তার
- সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
বেশ কয়েকদিন আগে ফেসবুকে মেয়েদের সম অধিকার আর সম দায়িত্ব নিয়ে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিলো। পোস্টের মাঝে ছবিটি দেওয়া হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যায় সমান অধিকারের কথা বলে মেয়েরা সামনে আগায়, আর দায়িত্বের কথা বললে পিছন হাঁটে। এই ছবিটি যতবার ফেসবুকে দেখেছি ততবার কড়া একটা জবাব দিয়ে কমেন্ট করতে চেয়েছি। যতবার কমেন্ট করার কথা চিন্তা করেছি ততবার আবার ভেবেছি ছবিটা তো মিথ্যা কোন অর্থ বহন করছে না। ছবিটাতে যা বুঝানো হয়েছে সেটা তো মেয়েরা অহরহ করেই যাচ্ছে! দুই একটা বাস্তব ঘটনা তুলে ধরছি।
এক আপু ডিভোর্স করবে কিন্তু তার পরিবার রাজি হচ্ছে না। বিশেষ করে আপুর মা কোনভাবেই এই ডিভোর্সে মত দিচ্ছে না। এখানে বলে রাখা ভালো আমি যে প্রফেশনে আছি সেখানে কিছু ফ্রি সেবা দেওয়া হয়। তার মধ্যে আইনি তথ্য, পরামর্শ , কাউন্সিলিং ইত্যাদি রয়েছে। প্রফেশনের সুবাদে আমি প্রায় এমনি অনেক মানুষকে ফেস করি এবং তাদের গল্প শুনি। আমি সেই আপুর কাছে ডিভোর্সের কারণ জানতে চাইলাম। আপু বললেন তার চাকরির টাকার ভাগ তার হাসব্যান্ড চেয়েছে। আপু দিতে রাজি হয়নি বলে তার হাসব্যান্ড বলেছে আপুকে আর চাকরি করতে দিবে না।
আরো পড়ুন: রাতে বাহিরে থাকার সাথে ভালো মেয়ে, খারাপ মেয়ের কি সম্পর্ক?
আপুকে চাকরি করতে দিবে না এটা আপু মানতে পারছে না। আপুর স্বাধীনতায় কারো হস্তক্ষেপ আপু সহ্য করতে পারে না। এই নিয়ে আপু এবং তার স্বামীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে এবং আপুর স্বামী আপুর গায়ে হাত তুলেছে। এসব নিয়েই তাদের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে এবং আপু আলাদা হতে চাচ্ছে। আপু খুব ভালো চাকরি করেন এবং ভালো অবস্থানেও আছেন।
আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম আপু হাসব্যান্ড কি করেন এবং তার কাছে টাকা কেন চাচ্ছেন। আপুর হাসব্যান্ড বিজনেস করেন। বিজনেসে এবার অনেক লস করেছে এবং সেই ভদ্র লোক ফিনান্সিয়াল প্রব্লেমে আছেন। আমি জানতে চাইলাম আপু সংসারে কন্ট্রিবিউট করে কিনা! আপু বললেন সংসার চালানোর দায়িত্ব তার স্বামীর, তিনি কেন কন্ট্রিবিউট করবেন! আমি আপুর সাথে কথা না বাড়িয়ে তার প্রোফাইলে ঢুকলাম। খুব সুন্দর আর স্বাধীনচেতা মহিলা, সাথে রুচিশীলও। আধুনিক পোশাক পরিধান করেন আর খুব ভালো লিখেনও। খুব সুন্দর সুন্দর লেখা পুরো টাইমলাইন জুড়ে। মানুষ তার চিন্তাধারা থেকে লেখালেখি করে। কিন্তু আমি তার সাথে কথা বলে যা বুঝলাম তিনি লিখেন একরকম, আর বাস্তব জীবনে তার চলাফেরা অন্যরকম।
আরো পড়ুন: ফেসবুক জীবনের সাথে আমাদের বাস্তব জীবনের কতটা মিল?
একজন শিক্ষিত এবং সফল মহিলা পুরুষের সমান অধিকার চাচ্ছেন। আবার, তিনিই বলছেন সংসার চালানোর দায়িত্ব শুধু ছেলের। কোন যুক্তিতে তিনি এই কথা বলছেন আমি বুঝতে পারলাম না। কেউ বললে বিশ্বাস করবে কিনা জানি না! ঠিক একই মানসিকতার এমন মেয়ে এবং নিজের মুখে স্বীকার করা বেশ কয়েকজন মেয়েকে আমি চিনি। তারা অধিকারে বিশ্বাসে কিন্তু দায়িত্ব নিতে নারাজ।
একদিন বাসে মহিলা সিটে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। এক মেয়ে বাসে উঠে বৃদ্ধকে সিট ছেড়ে দিতে বললো। বাসের ড্রাইভার আর কন্ট্রাক্টর বললো বৃদ্ধ অসুস্থ। অন্য সিট খালি হলে সেই মেয়েকে তারা বসিয়ে দিবে। কিন্তু সেই মেয়ে বৃদ্ধকে উঠিয়ে নিজে বসবে। বাসে চিৎকার চেঁচামেচি করে সেই মেয়ে অস্থির অবস্থা করে ফেলছে। সেই বৃদ্ধ উঠে মেয়েকে বসতে জায়গা দিয়ে দিলো এবং মেয়ে বসলোও। পরে একজন ছেলে উঠে সেই বৃদ্ধকে বসতে দিলো। আমরা যারা বাসে চলাফেরা করি সবসময় কিন্তু খালি সিট পাই না। দাঁড়িয়ে যাওয়ার সবারই অভ্যাস আছে।
মহিলা সিটে একজন পুরুষকে বসতে দেখলে আমাদের মাথা কাজ করে না। আমরা খুব প্রতিবাদী হয়ে উঠি। একজন পুরুষও যে অসুস্থ হতে পারে! তারও যে কোন সমস্যা থাকতে পারে আমরা সে কথা বুঝি না বা বুঝতে চাই না। আমি একজন মেয়ে আমি জানি বাসে দাঁড়িয়ে চলাফেরা করা কতটা কষ্টকর, কতটা অস্বস্তিকর। কিন্তু একজন পুরুষেরও তো কোন না কোন সমস্যা থাকতে পারে। হ্যাঁ! আমি এটাও মানছি কিছু পুরুষ আজাইরা বসে থাকে আর ইচ্ছে করে সমস্যা তৈরী করে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজনের জন্য আমরা অন্যদেরও শত্রু বানিয়ে ফেলছি নাতো! আগে দেখতাম কোন মেয়ে বাসে উঠলেই কোন না কোন ছেলে সিট ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু মেয়েদের অতিরিক্ত লাফালাফির জ্বালায় এখন ছেলেরা সিট ছেড়ে দেয় না। উল্টা বলে সমান অধিকার চাও তো, ছেলেদের সমান সমান দাঁড়িয়ে যাও।
আরো পড়ুন: বিবাহিত জীবনে এডজাস্ট করবো, নাকি স্যাক্রিফাইজ করবো!
স্বাধীনতায় আমিও বিশ্বাসী কিন্তু সংসারের বোঝা স্বামীর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে আমি স্বাধীনতা উপভোগ করবো এটার পক্ষপাতি আমি নই। আমি যেমন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তেমনি দায়িত্বেও বিশ্বাসী। একটা মেয়ে যেভাবে একহাতে সংসার আর অন্য হাতে চাকরি সমান তালে চালিয়ে নিতে পারে, একটা ছেলে সেভাবে কখনই পারবে না। তেমনি কিছু কাজ আছে যেগুলোতে মেয়েদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সবারই কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে , সমস্যা সেখানে না। সমস্যা হলো অতিরিক্ত লাফালাফি আর রেষারেষিতে।
যে মেয়ে সমান দায়িত্ব নিতে পারবে না, সে মেয়ের তো সমান অধিকার চাওয়ার কোন অধিকারই নেই। এমন কিছু স্বার্থানেষী মেয়ের জন্য অন্য সকল মেয়েদের বিব্রত হতে হয়। যারা মেয়েদের অধিকার আর দায়িত্ব নিয়ে মজা করে তাদের কড়া জবাব দিতে যেয়েও চুপ করে থাকতে হয়। শোন মেয়েরা, অধিকার চাইতে গেলে মেরুদণ্ড লাগে। আর যে মেয়েদের সত্যিকারের মেরুদণ্ড আছে তারা কখনো দায়িত্ব নিতে পিছপা হয় না।