ফেসবুক জীবনের সাথে আমাদের বাস্তব জীবনের কতটা মিল?
- ফারজানা আক্তার
- অক্টোবর ২১, ২০১৮
তখন আমি নতুন নতুন ফেসবুক ব্যবহার করি। স্কুলের বন্ধু বান্ধব সবাইকে এড করছি। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঢুকে দেখি আমার এক স্কুলের বন্ধু লন্ডন চলে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি তাকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'লন্ডন কবে গেলো! কেন গেলো! ইত্যাদি। ' বন্ধু আমার উত্তর দিলো ফেসবুকে এক মেয়েকে পটানোর চেষ্টা করছে। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে সে আজকে লন্ডন গেলো। সোজা কথায় যার অর্থ হলো প্রোফাইলে মিথ্যা তথ্য এড করলো।
বর্তমানে 'ফেসবুক' এমন একটা শব্দ যেটা শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই জানে। শুধুই জেনেই থেমে যায় নি, সবাই ব্যবহারও করছে। ফেসবুকে কি হচ্ছে, কি ঘটছে সে বিষয়ে না গেলাম। কিন্তু ফেসবুককে আজকাল মানুষ বাস্তব জীবন কেন বানিয়ে ফেলছে আমি সেটাই বুঝতে পারছি না।
ফেসবুকে আমি যা শেয়ার করি, সবসময় যে সেটা আমার পার্সোনাল জীবনেই ঘটে এমন কিন্তু নয়। আমি আমার কল্পনার জগৎ থেকে অনেক কিছু শেয়ার করি, আমার চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শেয়ার করি, কারো কাছ থেকে শোনা গল্প শেয়ার করি, কোন মুভি/নাটক দেখে বা গল্পের বই পড়ে নিজের মধ্যে থেকে কোন অনুভূতি বা উপলব্ধি শেয়ার করি। যে কোন পরিস্থিতি বা পরিবেশে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা বা চিন্তা ধারা শেয়ার করি।
১বছর ৬মাস আগের ঘটনা। ফেসবুকে পরিচিত এক আপু সুইসাইড করলো। ফেসবুকে আপুর পরিচিত ছিলো লাভ বার্ড হিসেবে। প্রতিদিন আপু আর আপুর জামাইয়ের রোম্যান্টিক ছবিতে টাইমলাইন ভর্তি থাকতো। ছবি যেমন সুন্দর, ক্যাপশন তার দ্বিগুন সুন্দর ছিলো। সুইসাইড করার পর জানা গেলো দাম্পত্য কলহের কারণে আপু সুইসাইড করেছে। দুইবছর ধরে সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছে তাদের। আপু অনেক চেষ্টা করেছে টানাপোড়ন শেষ করতে কিন্তু পারে নি। কিন্তু মরনের একদিন আগেও তাদের ছবির ক্যাপশন দেখে কেউ বলতে পারবে তাদের ভিতরে চুল পরিমান সমস্যা থাকতে পারে!
বিয়ে হয়ে গেলে রোম্যান্টিক স্ট্যাটাস দেওয়া যাবে না। বিয়ের পর বিরহের স্ট্যাটাস দিলে স্বামীর সাথে প্রব্লেম চলছে। বিয়ের পর স্বামীর সাথে ফেসবুকে ছবি না দিলে বিবাহিত জীবন অসুখী। খাওয়ার ছবি ফেসবুকে না দিলে আপনি কোথাও খেতে যান না। বেড়ানোর ছবি না দিলে আপনি কোথাও বেড়াতে যান না। একটু লেখালেখির চেষ্টা করলে সবাই ব্যঙ্গ করবে লেখক / লেখিকা বলে। একটু পরামর্শ মূলক লেখা লিখলে মোটিভেশনাল স্পিকার বলে ট্রল করবে। মোট কথা আপনি ফেসবুকে যাই করবেন সেটা নিয়েই বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন।
প্রেম , বিবাহিত জীবন ছাড়াও মানুষের আরো জীবন রয়েছে। সে তার পড়াশোনা / চাকরি নিয়ে হতাশ থাকতে পারে। শারীরিক কোন প্রব্লেম নিয়ে সে হতাশ থাকতে পারে। কোন এক প্যাশনের জায়গায় সে হয়তো উন্নতি করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না,এই কারণে সে ডিস্টার্ব থাকতে পারে। এক মানুষের জীবনে হাজার দিকে হাজার রকমের সমস্যা থাকতে পারে। ফেসবুকে একজন মানুষ তার নিজের মতো করে তার আইডি ব্যবহার করে বাস্তবিক নানান সমস্যা থেকে কিছুটা রিলিফ নিতে চান।
ফেসবুক এক রঙ্গিন দুনিয়া। এই দুনিয়ায় জরিনাকে জেরি, আর আবুলকে আবি লাগে। সখিনা, জরিনারা এঞ্জেল হয়ে যায়। হাবুল, কাবুলরা প্রিন্স। ফেসবুকে প্রতিটা মানুষ নিজেকে যেভাবে প্রেজেন্ট করে তার ৯৯.৯৯% ফেইক। আর ফেসবুকের জীবনের সাথে বাস্তব জীবন যারা এক করে ফেলে তারা হচ্ছে অজ্ঞ। মহা অজ্ঞ।