ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় : শেষ পর্ব
- তামান্না ইসলাম
- নভেম্বর ১১, ২০১৮
ডিপ্রেশন হচ্ছে এমন এক রোগ যা মানুষকে ভিতর থেকে শূন্য করে দেয়। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি তার জীবনের সকল অর্জন তুচ্ছ মনে করে। নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। অধিক ডিপ্রেশন থাকা একজন মানুষ নিজেকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। তাই নিজেকে ভালো রাখা জরুরী। জেনে রাখুন নিজেকে ভালো রাখার আরো কিছু উপায়।
নিজের উপর বিশ্বাস রাখুনঃ ডিপ্রেশন প্রথমিক ভাবে সবার আগে নিজের উপর নিজের বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়। হতাশ মানুষ নিজের প্রতিটি চিন্তা, সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধা-দন্দে ভোগেন। তাই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে সবার আগে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। 'পারবো কি পারবো না, হবে কি হবে না' এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসতে দেয়া যাবে না।
নিজের ভালো চিন্তাকে গুরুত্বদিনঃ প্রতিটা মানুষের মাঝে ভালো হবার ইচ্ছা থাকে, ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু হতাশা মানুষের মনের সেই ভালো চিন্তাগুলোকে নিস্ক্রিয় করে দেয়। মানুষ ব্যস্ত হয়ে পরে নিজের অপ্রাপ্তির হিসাব করতে। তাই ডিপ্রেশন থেকে বাচার জন্য জরুরী নিজের ভালো চিন্তাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া। সেসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। মনে রাখবেন, ভালো প্রাপ্তি যতো ক্ষুদ্র হোক না কেনো তা প্রচন্ড আত্মতৃপ্তি দেয়।
অন্যের মর্জিতে চলা বন্ধ করুনঃ বেশিভাগ মানুষই চায় তার প্রিয় মানুষদের মন রক্ষা করে চলতে। আর এই মন রক্ষা করতে গিয়ে তারা অন্যের পছন্দকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়। তাদের মন মতো চলার চেষ্টা করে। এর ফলে একটা সময় তারা নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে। যা ডিপ্রেশন তৈরির একটি বড় কারন। তাই ভালো থাকতে চাইলে অন্যের মর্জিতে চলা বন্ধ করুন। নিজেকে সময় দিন। নিজ ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করুন।
নিজ চাহিদার স্পষ্ট প্রকাশ করুনঃ আমরা প্রায় সময় অন্যের মন রাখতে গিয়ে নিজের মনের কথা স্পষ্ট করে বলিনা। ফলে অসন্তুষ্টি ভুগতে হয়। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে চাইলে আপনি কি চান তা স্পষ্ট করে বলুন। আপনার ইচ্ছাতে অন্যরা মনে কষ্ট পাবে না, উল্টো আপনি খুশি থাকলে তারাও খুশি হবে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুনঃ প্রবাদ আছে, "স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"। কথাটা কিন্তু মোটেও ভুল নয়। আপনি সুস্থ অবস্থায় মানসিক ভাবে যেমন ভালো থাকবেন, অসুস্থ হলে মানসিক ভাবেও অসুস্থ বোধ করবেন। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আপনে সব দিক থেকেই ভালো রাখবে।
ভ্রমন করুনঃ কেউ যখন ডিপ্রেশনে ভোগে তখন খুব সাধারণভাবেই নিজেকে সবকিছু থেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়। হতাশাজনক ভাবনা তাকে আচ্ছন করে রাখে। এ অবস্থা থেকে বের হবার একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে ভ্রমন। ভ্রমন বলতে অনেকেই মনে করে দূরে কোন টুরিস্ট স্পটে যাওয়া। কিন্তু আসলে ভ্রমন হতে পারে আপনার বাড়ির পাশের যে কোন স্থানে। হতে পারে কোন পার্ক অথবা খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ভ্রমন আপনার মনকে শান্ত করবে এবং নেগেটিভ চিন্তা থেকে আপনাকে দূরে রাখবে।
নিজের ভালোলাগা গুরুত্বদিনঃ একজন মানুষের ভালোলাগার বিষয় ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনচক্র আমরা অনেক সময় এই ভালোলাগার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাই এবং নিজের ভেতর শূন্যতা নিয়ে পথ চলি। এই কাজটা কখনোই করবেন না। আপনার যা ভালো লাগে তা যদি ক্ষতিকর না হয় তবে সে ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিন। নিজের সাথে নিজে প্রতারণা করার কোনো মানে হয় না।
ড্রামা ও নেগেটিভ বিষয় থেকে দূরে থাকুনঃ ড্রামা ও নেগেটিভিটি আমাদের মানসিক ভাবে প্রচন্ড ক্ষতি করে। অনেক সময় আমরা চাইলেও এসব বিষয় এড়িয়ে যেতে পারি না। তারপরেও, যতোটুকু সম্ভব এই বিষগুলো এড়িয়ে চলুন। চেষ্টা করুন সমস্যা সমাধানের।
প্রয়োজনে সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলুনঃ অনেক সময় এমন হয় যে যতো চেষ্টা করা হোকনা কেনো নিজে থেকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠা যায় না। নিজের করা শত চেষ্টাও ব্যর্থ মনে হয়। এমন সময় অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলুন। ডিপ্রেশন মানসিক ভাবে যেমন ক্ষতিকর তেমনই শারীরিক ভাবেও ক্ষতিকর। সাইকোলজিস্ট তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে আপনাকে সঠিক পরামর্শ ও ওষুধ দিতে পারবে।
সব শেষে একটা কথা বলতে চাই, ডিপ্রেশন বা হতাশা জীবনে আসবেই। তার মানে কখনোই এই নয় যে আপনার জীবনে করার আর কিছু নেই।
জীবনটা যদি আকাশের সাথে তুলনা করা হয় তবে ডিপ্রেশন হবে কালো মেঘ। আর কালো মেঘ কখনোই স্থায়ী হয় না। আপনি ভালো থাকলে আপনার খেয়াল রাখা মানুষগুলোও ভালো থাকবে।